শুধু দুবেলা ভাতের বিনিময়ে টিউশনি চান তিনি!

নগদ অর্থ লাগবে না, দুবেলা ভাতের সংস্থান হলেই পড়াতে রাজি তিনি। বগুড়ার কয়েকটি স্থানে এমন ভাষায় বিজ্ঞাপন লাগিয়েছেন বেকার মো. আলমগীর কবির। বেকার বিশেষণটি তারই দেয়া। বিজ্ঞাপনে তিনি উল্লেখ করে দিয়েছেন, যে দুই বেলা ভাতের কথা বলা হয়েছে, তা হতে হবে সকাল ও দুপুরের। কারণ আপাতত রাতে তার খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।

আলোচিত সেই বিজ্ঞাপন

গত কয়েকদিন ধরেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপনটি ভাইরাল। বিজ্ঞাপনদাতা আলমগীর কবির বিজ্ঞাপনে নিজেকে বেকার হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, দুই বেলা ভাতের বিনিময়ে তিনি বগুড়া শহরের জহুরুলনগরের আশেপাশের এলাকায় প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের গণিত ছাড়া সব বিষয় পড়াতে রাজি।

শহরের বিভিন্ন দেয়ালে, ইলেকট্রিক খুঁটিতে লাগানো সাদা এ-ফোর সাইজের কাগজে কালো কালিতে প্রিন্ট করা বিজ্ঞাপনটিতে তিনি লিখেছেন, পড়ানোর বিনিময়ে তিনি কোনো অর্থ চান না। কেবল সকাল এবং দুপুর- এই দুবেলা ভাত খাওয়াতে হবে এই শর্তেই তিনি পড়াতে রাজি।

আলমগীর কবির

বিজ্ঞাপনে দেয়া ফোন নম্বরে যোগাযোগের পর জানা গেছে, আলমগীর কবির বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স পাস করেছেন। তিনি বলেন, মূলত খাবারের কষ্ট থেকেই বিজ্ঞাপনটি দিয়েছি।

সরল স্বীকারোক্তিতে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমার একটি টিউশনি আছে। সেখানে রাতে পড়াই। তারা আগে নাস্তা দিত। পরে আমি তাদের বলেছি নাস্তার বদলে ভাত খাওয়াতে। রাতে এভাবে খাবারের সংস্থান হলেও সকাল আর দুপুরে খাবারের ব্যবস্থা ছিল না।

আলমগীর কবির বলেন, টিউশনি করে পাই দেড় হাজার টাকা, সেটা দিয়ে হাতখরচ, খাবার, চাকরির পরীক্ষা দিতে যাওয়া-সব কুলিয়ে উঠতে পারছিলাম না। সেজন্য আমি যেখানে থাকি তার আশোপাশে টিউশনি খুঁজছি, যাতে অন্তত দুবেলা খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়। আলমগীর কবির এখন বগুড়া শহরের জহুরুলনগর একতলা মসজিদ এলাকার পাশের একটি বাড়িতে থাকেন। সেখানে বিনামূল্যেই থাকেন।

২০২০ সালে মাস্টার্স পাসের পর থেকে চাকরি খুঁজছেন আলমগীর। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রত্যাশামাফিক চাকরি পাননি। তিনি জানান, বিজ্ঞাপনটি ফেসবুকে ভাইরাল হবার পর অনেকে ফোন করেছেন তাকে। কেউ তাকে তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরি করতে ডেকেছেন। কিন্তু পোশাক কারখানার চাকরি তার পছন্দ নয়, কারণ চাকরির ইন্টারভিউ থাকলে তারা ছুটি দিতে চায় না।

বিজ্ঞাপন দেওয়ার পর টিউশনি পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, এখনো পাইনি, তবে আশা করছি পেয়ে যাব। চাকরির ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করছি। কয়েকটার ভাইভা দিয়েছি। একটা সময় হয়ে যাবে।

আলমগীর কবিরের পারিবারিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যায়, বগুড়ার জহুরুলনগরের বাসিন্দা মো. আলমগীর কবিরের বাবার নাম মো. কফিল উদ্দিন ও মায়ের নাম আম্বিয়া বেগম। তার বৃদ্ধ বাবা এখন অনেকটাই দুর্বল। কিছু করতে পারেন না। তারা ৫ ভাই-বোন। তিন বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। তার বড় ভাইয়ের নাম রুহুল আমিন। তিনি শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট আলমগীর কবির।