সাইবার হামলার আয়ে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু কর্মসূচি!

বিশ্বব্যাপী করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও উত্তর কোরিয়া গত বছর তার পারমাণবিক এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছে। এক্ষেত্রে ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাইবার আক্রমণ ছিল পিয়ংইয়ংয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। জাতিসংঘের একটি গোপন প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দিয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ক্রমশই বাড়ছে

নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণকারীদের বার্ষিক প্রতিবেদনটি গত শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের উত্তর কোরিয়া নিষেধাজ্ঞা কমিটির কাছে জমা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, যদিও কোনো পারমাণবিক পরীক্ষা বা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের খবর পাওয়া যায়নি, কিন্তু তারপরও পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্রের বিভিন্ন অংশ তৈরিতে তার সক্ষমতা ও উন্নয়ন অব্যাহত রেখেছে উত্তর কোরিয়া।

দেশটির ওপর দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ দ্বারা পারমাণবিক পরীক্ষা এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০০৬ সাল থেকে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পাশাপাশি এ খাতে উত্তর কোরিয়ার তহবিল সংগ্রহের ব্যাপারেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

সাইবার হামলা থেকে পাওয়া অর্থে পারমাণবিক অস্ত্রের উন্নতি ঘটাচ্ছে উত্তর কোরিয়া

উত্তর কোরিয়া গত জানুয়ারিতেই নয়টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে, যা দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দ্রুত ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন, ব্যাপক গতিশীলতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশটি তার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রদর্শন করেছে।

পর্যবেক্ষকরা জানান, সাইবার আক্রমণ, বিশেষ করে ক্রিপ্টোকারেন্সির ওপর আক্রমণ উত্তর কোরিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। তারা তথ্য পেয়েছেন, দেশটির হ্যাকাররা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ক্রিপ্টোকারেন্সি ফার্ম ও এক্সচেঞ্জগুলোকে টার্গেট করেছে।

জাতিসংঘের একটি সদস্যরাষ্ট্রের মতে, উত্তর কোরিয়ার সাইবার হামলাকারীরা উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ ও এশিয়ার অন্তত তিনটি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ থেকে ২০২০ এবং ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে পাঁচ কোটি ডলারের বেশি চুরি করেছে।

গত মাসে সাইবার সিকিউরিটি ফার্ম চেইন্যালাইসিসের একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে পর্যবেক্ষকরা জানান, ২০২১ সালে উত্তর কোরিয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি প্ল্যাটফর্মগুলোতে কমপক্ষে সাতটি হামলা চালিয়ে প্রায় ৪০ কোটি ডলার মূল্যের সম্পদ লুট করেছে। এর আগে ২০১৯ সালে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষকরা রিপোর্ট করেছিলেন, উত্তর কোরিয়া ব্যাপক ও ক্রমবর্ধমান সাইবার হামলা চালিয়ে তার গণবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির জন্য আনুমানিক ২০০ কোটি ডলার আয় করেছে।

কয়েক বছর ধরে কঠোর অবরোধ আরোপ করায় উত্তর কোরিয়ার ব্যবসা-বাণিজ্য বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে। তারওপর করোনার প্রাদুর্ভাব দেশটির অর্থনীতির ওপর আরো বেশি চাপ সৃষ্টি করেছে। এমতাবস্থায় পিয়ংইয়ং তার পরমাণু কর্মসূচি অব্যাহত রাখার জন্য ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে। তবে জাতিসংঘের এসব নিষেধাজ্ঞায় দেশটির সাধারণ মানুষ কতটা সমস্যার মুখে পড়েছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো কিছু জানা যায়নি।