বৃদ্ধাশ্রমে ৬ বছর: খোঁজ নেয় না চিকিৎসক মেয়ে, চাকরিজীবী ছেলে
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর কল্যাণপুর পাইকপাড়ায় ‘চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ বৃদ্ধাশ্রম। শতাধিক ঘর সংসার ছাড়া বাবা-মায়ের আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠানটি। পরিবারহীন অসহায় বৃদ্ধদের জীবনের শেষ সময়টুকুতে পরম মমতায় আগলে রাখছে "চাইল্ড এন্ড ওল্ড এইজ কেয়ার"।
মাহফুজা বেগম, ফাইল ছবি
দিনটি ছিল শনিবার। দুপুর ২টা ৩০ মিনিট। দুপুরের খাবার শেষে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন বৃদ্ধাশ্রমের বাবা-মায়েরা। রুমে ঢুকেই প্রথমে চোখে পড়ল এক বৃদ্ধা শুয়ে আছেন বিছানায়। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছেন ওপরের দিকে। কাছে গিয়ে কথা হয় ওই নারীর সাথে। কথা বলে জানা যায়-
ওই নারীর নাম মাহফুজা বেগম। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজিতে বেশ ভালোভাবে কথা বলতে পারেন তিনি। পাকিস্তান আমলে মাধ্যমিক স্কুলে পড়েছেন তিনি। থাকতেন পুরান ঢাকার ওয়ারী এলাকায়। স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে ও মেয়েকে নিজেই মানুষ করেছেন, বড় করেছেন। কখনো ছোট-খাটো চাকরি করেছেন। কখনো বাসায় কোনো বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে রান্নারও কাজ করতেন।
মাহফুজা বেগম, ফাইল ছবি
এভাবেই মানুষ করছেন দুই সন্তানকে। সফলও হয়েছেন তিনি তার মেয়ে এখন চিকিৎসক এবং ছেলে সরকারি চাকরিজীবী। কিন্তু নিজের সংগ্রামী মায়ের আর খোঁজ নেয় না প্রতিষ্ঠিত দুই সন্তান। তাই এই সংগ্রামী মায়ের জায়গা এখন বৃদ্ধাশ্রমে! তবে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মাহফুজা একজন শক্ত মনের নারী। এখনো তো নিজের কাজগুলো নিজেই সারতে চান তিনি।
তবে তার মনে এখনো রয়েছে সেই সন্তানদের জন্য মায়া-মমতা। তাই তো দুই সন্তানের কথা জানতে চাইতেই মাহফুজা বলেন, “ছেলেটা সরকারি চাকরি করে। মেয়েটাও ডাক্তার। ওরা কেউ আমার সাথে থাকে নাই। তাই একাই একটা বাড়ির একটা রুমে থাকতাম। কেউই খোঁজ নিতো না। একদিন ঔষধ কিনতে রাস্তায় বের হয়েছিলাম। তখন গাড়ির সাথে এক্সিডেন্ট করি।”
তিনি আরও বলেন, "এক্সিডেন্টের পর ঠিকঠাক হাঁটতে চলতে পারতাম না। রাস্তায় অনেক দিন পড়েছিলাম। পরে ওই এলাকার কিছু মেডিকেলের ছাত্র এখানে দিয়ে গেছে।’’ আক্ষেপের সুরে মাফফুজা বলেন, ওরা কেউ আমাকে দেখতে তো আসে নাই। বেঁচে আছি নাকি মরে গেছি তারও খোঁজ নেয় না। ওদের জন্য অনেক কষ্ট হয়, খারাপ লাগে। জীবনে কত কষ্ট করেছি দুই বাচ্চার জন্য। "
কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, "এখনো হাত তুলে দোয়া করি, দুই সন্তান যেন ভালো থাকে।" এই বৃদ্ধা সম্পর্কে জানতে চাইলে বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক মিল্টন সমাদ্দার বলেন, ‘মাহফুজা বেগমকে আমরা ২০১৪ সালে মাতুয়াইল এলাকায় রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থা থেকে তুলে নিয়ে এসেছি। তাকে ওখানে পড়ে থাকতে দেখে কয়েকজন মেডিকেল স্টুডেন্ট আমাদের খবর দিয়েছিল। ওই মেডিকেল স্টুডেন্টরা এখন ডাক্তার হয়েছেন। তারা মাঝেমধ্য এখনো খোঁজখবর নেন মাহফুজা বেগমের।’
"ওরা আমাদের ঝামেলা মনে করে"
মাহফুজা বেগমের পাশের বিছানাতেই বসেছিলেন রাবেয়া নামের আরেক মা। খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলেন তিনি। তারও সন্তানেরা খোঁজ নেয় না মায়ের। তাই তারও ঠিকানা এখন বৃদ্ধাশ্রম। তবে সন্তানদের ওপরে তার আক্ষেপ ও অভিমান অনেক বেশি।
সন্তানদের কথা জানতে চাইতেই তিনি বলেন, "কুলাংগার সন্তানের কথা কি বলবো। কিছুই বলতে চাই না। সারা জীবন ওদের জন্য খেটেছি। তাদের সকল বায়না পূরণ করছি। এখন তো ওদের কিছু মনে নেই। তাই ওরা আমাদের ঝামেলা মনে করে।
এই বৃদ্ধা নারী আরও বলেন, "আমার স্বামী আর আমি দুজনে সারাটা জীবন খেটেখুটে ওদের বড় করলাম। কিন্তু আমার স্বামীর মৃত্যুর পর ওরা আমাকে ঘর থেকে বের করে দিছে। কত রকমের অত্যাচার করেছে ছেলের বউ, ছেলেরা। কোনো দিন ভুলতে পারবো না এসব ব্যথা। তবে ওদের মুখগুলো চোখের সামনে ভাসলে বুকটা ফেটে যায়।"
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.