খামেনি: পরমাণু শক্তি চাই, পারমাণবিক বোমা নয়

ইরান পারমাণবিক বোমার অধিকারী হতে চাচ্ছে- এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, তেহরানের পরমাণু শক্তি দরকার, পারমাণবিক বোমা নয়। এ লক্ষ্যে আমরা শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক সক্ষমতা বিকাশ অব্যাহত রাখবে। পাহলভি শাসনের বিরুদ্ধে উত্তর তাবরিজ শহরে ১৯৭৮ সালের বিদ্রোহের বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রচারিত একটি টেলিভিশন ভাষণে খামেনি এ মন্তব্য করেন।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি

খামেনি বলেন, ইরানের পারমাণবিক শক্তি প্রোগ্রামের যে নকশা করা হয়েছিল, তা দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য। পুরো বিশ্ব ক্রমবর্ধমানভাবে পারমাণবিক শক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদেরও শিগগিরই শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির জরুরি প্রয়োজন হবে।

‘আমরা যদি আজকেই এ বিষয়ে না ভাবি, তাহলে আগামীকাল অনেক দেরি হয়ে যাবে। সেদিন যাতে শত্রুদের মুখাপেক্ষী হতে না হয় সেজন্য আমরা পরমাণু কর্মসূচির প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ এখন বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরমাণু শক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে। কাজেই আমাদেরকে এই খাতে ব্যাপকভাবে গবেষণা চালাতে হবে।

ইরানের বুশেহর পরমাণু প্রকল্প

দেশটির সর্বোচ্চ এ নেতা দাবি করেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ছিল একেবারেই শান্তিপূর্ণ। তেহরান পারমাণবিক বোমা বানাতে চাইছে বলে পশ্চিমা দেশগুলো যে দাবি করে আসছে, সেটা অযৌক্তিক ও বুদ্ধিহীন দাবি।

খামেনি বলেন, আমরা পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার চাই। এটা শত্রুরাও জানে, কিন্তু তারা চায় ভবিষ্যতে যখন ইরানিদের পারমাণবিক শক্তির প্রয়োজন হবে তখন যেন সমস্যার মুখে পড়ে। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য ভিয়েনায় চলমান প্রচেষ্টার পাশাপাশি তেহরান দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং নিষেধাজ্ঞার প্রভাব কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখবে।

খামেনির এ বক্তব্যের একদিন আগে ভিয়েনায় ইরানের প্রধান আলোচক আলী বাঘেরি কানি বলেন, সবকিছুতে একমত না হওয়া পর্যন্ত কোনো কিছুতেই একমত হওয়া সম্ভব না। তবে এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে আমরা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছি।

কানি বলেন, আমাদের আলোচনার অংশীদারদের বাস্তববাদী হতে হবে, অন্তর্ঘাত এড়াতে হবে এবং বিগত চার বছরের ঘটনার দিকে মনোযোগী হতে হবে। কারণ এটি তাদের (মার্কিন ও ইউরোপীয়দের) গুরুতর সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়।

গত বছরের এপ্রিল থেকে ইরানের পরমাণু ইস্যুতে এ আলোচনা চলছে। তেহরানের নতুন সরকার আসার পর গত নভেম্বরে পুনরায় আলোচনা শুরু হয়।

খামেনি ভিয়েনায় চলমান পরমাণু সমঝোতা পুনরুজ্জীবনের সংলাপের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, ২০১৫ সালে যখন পরমাণু সমঝোতা সই হয় তখন আমার কিছু দিকনির্দেশনাকে আমলে না নেয়ার কারণে বর্তমান অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সাথে ইরান একটি পরমাণু চুক্তিতে উপনীত হয়েছিল, যার আওতায় ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল করা হয়েছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেন।