লক্ষ্য ভারত মহাসাগর, মালদ্বীপে অস্থিতিশীলতার চেষ্টা চীনের

ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে আধিপত্য অর্জনের লক্ষ্যে দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে চীন। দেশটি ইতোমধ্যে বেইজিংয়ের থেকে অনেক ঋণ নিয়ে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এই সুযোগ নিয়ে দ্বীপরাষ্ট্রটিতে প্রভাব খাটাচ্ছে চীন। খবর এএনআইর।

মালদ্বীপের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল্লাহ ইয়ামিন

মালদ্বীপের সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার মাত্র কয়েকদিন পরেই সেখানে যান চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। এটি ইঙ্গিত করে, ইয়ামিনের রাজনৈতিক অবস্থানকে দৃঢ় করার পরিকল্পনা করছে চীন। এই সাবেক রাষ্ট্রপতি তার শাসনকালে (২০১৩-১৮) দেশটিতে চীনকে গভীরভাবে প্রবেশের সুবিধা করে দিয়েছিলেন।

আব্দুল্লাহ ইয়ামিন এখন ২০২৩ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার এই প্রচেষ্টায় ইসলামী উগ্রবাদীদের সমর্থন দেশব্যাপী রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

মালদ্বীপ ভয়েসের খবরে বলা হয়েছে, এখন এই সুযোগে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন তার প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে বহুমুখী পন্থা অবলম্বন করছে। আর এটি শুরু করার জন্য ইসলামপন্থী জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক এজেন্ডার সহায়তায় বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে একটি প্রচারণা জোরদার করবে বেইজিং।

দ্বিতীয়ত, প্রগ্রেসিভ পার্টি অব মালদ্বীপ (পিপিএম) ও পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেসের (পিএনসি) মতো রাজনৈতিক দলগুলোকে একত্রিত করে পরিবর্তনের জন্য একটি রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করবে। এ ছাড়া বেইজিং মালদ্বীপবাসীকে বোঝাতে তাদের উন্নয়নমূলক এজেন্ডা নিয়েও খেলবে।

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার সফরকালে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহিদের সঙ্গে যে পাঁচটি চুক্তি করেছেন, তাতে এ দিকটিই ইঙ্গিত করে। চুক্তিগুলোর মধ্যে রয়েছে হাসপাতালে সহায়তা ও সহযোগিতা কর্মসূচি, দেশটির পাঁচটি দ্বীপে মাইক্রো-গ্রীড পানি নিষ্কাশন কেন্দ্র স্থাপন, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা, ভিসা মওকুফ ও চীন-মালদ্বীপ মৈত্রী সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ।

তারপরও চীন প্রকল্পের জন্য অর্থ দেওয়ার মাধ্যমে মালদ্বীপের সঙ্গে তার সহযোগিতামূলক সম্পর্ককে আরও গভীর করবে। ওয়াংয়ের দিনব্যাপী ওই সফরে চীন মালদ্বীপকে অবকাঠামোগত প্রকল্পের জন্য ৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদানের প্রস্তাব দিয়েছে।

মালদ্বীপ ভয়েসের খবরে বলা হয়েছে, এ অবস্থায় পাকিস্তানের সমর্থনের দিকেও নজর দিতে হচ্ছে চীনকে। কারণ মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নেই এমন ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে ইসলামাবাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

এডেন উপসাগর ও মালাক্কা প্রণালীর মাঝখানে অবস্থিত এবং ভারত মহাসাগরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় ভৌগোলিকভাবে কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপ। মালাক্কা প্রণালী হল একটি সংকীর্ণ জলপথ, যা ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়েছে। এই পথ দিয়ে প্রতি বছর ৭০ শতাংশেরও বেশি চীনা পণ্য ও তেল পাঠানো হয়।

চীন আশঙ্কা করছে, তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা ওই পথে পণ্য চলাচলে বাধা দিলে অর্থনীতি খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এসব সংকট এড়াতে চীনা কর্তৃপক্ষ ভারত মহাসাগরে দ্বিতীয় সামরিক ঘাঁটি নির্মাণের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। আর কেবল মালদ্বীপের একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সরকারই ফেইধুফিনোলহু দ্বীপকে একটি পূর্ণ সামরিক ঘাঁটিতে পরিণত করার সুযোগ করে দিতে পারে।

বিশ্বেষজ্ঞদের মতে, দক্ষিণ চীন সাগরের দ্বীপ দখলে যেমন কৌশল নিয়েছে চীন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও বিশেষ করে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় একই কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা করছে তারা।