ইউক্রেন সংকট: পুতিনকে কী বার্তা দিলেন বাইডেন
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন ভাষণের প্রথম ১৫ মিনিট ব্যয় করেছেন ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ সম্পর্কে কথা বলে। এটি এমন একটি ঘটনা, যা অবশ্যই মার্কিন অভ্যন্তরীণ আইনসভার একটি অন্যতম এজেন্ডা, একই সঙ্গে বৈশ্বিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি বড় ধাক্কা।
ভাষণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন
যদিও বাইডেনের বার্ষিক বক্তৃতা কংগ্রেসের কাছে একটি বার্তা হিসেবে পেশ করা হয়েছে, তবে ইউক্রেন ইস্যুতে তার বক্তব্যগুলো চারটি স্বতন্ত্র শ্রোতার জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে চার ধরনের স্বতন্ত্র বার্তা দেওয়া হয়েছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, বাইডেন তার ভাষণে কী বলেছেন এবং কাকে দেখেন।
ইউক্রেনিয়ান জনগণের প্রতি
বাইডেন তার বক্তৃতার শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মার্কারোভাকে ডেকে ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন ও অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিদের পাশে বসান। এ সময় ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, ধন্যবাদ বলে উল্লাস করেন কংগ্রেসের সদস্যরা।
ভাষণের সময় ওয়াশিংটনে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূতকে গুরুত্বপূর্ণ অতিথিদের পাশে বসান বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই ইউক্রেনকে সামরিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছে। মঙ্গলবার রাতে বাইডেন তার ভাষণে আরেকটি বার্তা দিয়েছেন যে, ইউক্রেনের ভবিষ্যতের বিষয়ে সতর্ক যুক্তরাষ্ট্র এবং বিপর্যস্ত এই জাতির পাশে দাঁড়িয়েছে ওয়াশিংটন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি থেকে শুরু করে প্রতিটি ইউক্রেনিয়ান, তাদের নির্ভীকতা, তাদের সাহস, তাদের দৃঢ়তা গোটা বিশ্বকে অনুপ্রাণিত করেছে। রাশিয়ান ট্যাঙ্ক যদিও ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে, তারপরও বাইডেনের বার্তা ছিল যে, ইউক্রেনিয়ানদের পাশে আরো সাহায্য নিয়ে দাঁড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়ান নেতার প্রতি
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি বাইডেনের বার্তা অনেকটা সহজ ছিল যে, রুশ নেতা ‘ভুল হিসাব’ কষছেন। কারণ ইউক্রেনে রাশিয়ান আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ যে অর্থনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে যাচ্ছে, তার প্রক্রিয়া সবেমাত্র শুরু হয়েছে। মার্কিন ও ইইউ নিষেধাজ্ঞায় ইতোমধ্যে রুশ মুদ্রা রুবলের মান পড়ে গেছে ব্যাপক হারে। রাশিয়ান স্টক মার্কেটের ব্যাপক পতন হয়েছে, রাশিয়ার অলিগার্চদের মুনাফা বাজেয়াপ্ত করা হবে এবং রাশিয়া মূল প্রযুক্তির অ্যাক্সেস হারাচ্ছে।
এ ছাড়া অর্থনৈতিক চাপের বাইরে রাশিয়ার প্রতি আরেকটি বার্তা দিয়েছেন বাইডেন। তিনি তার বক্তব্যে জোর দিয়েছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর প্রতি ইঞ্চি ভূমি রক্ষার জন্য লড়াই করবে।
রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন তার পারমাণবিক বাহিনীকে উচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং কোনো দেশ ইউক্রেনে হস্তক্ষেপ করলে তার জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। বাইডেনের বার্তায় স্পষ্টভাবে উচ্চারণ করা হয়েছে, যাতে কোনো সন্দেহ না থাকে যে, কখন ও কোথায় যুক্তরাষ্ট্র নিজেই লড়াই করবে।
ইউরোপের উদ্দেশে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। বাইডেন বার বার তার বক্তৃতার সময় বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। বাইডেন বলেন, তিনি (পুতিন) ভেবেছিলেন, পশ্চিমা বিশ্ব ও ন্যাটো এর প্রতিক্রিয়া জানাবে না। ‘পুতিন ভুলের মধ্যে ছিলেন। আমরা প্রস্তুত ছিলাম।"
এ ক্ষেত্রে পুতিন হয়তো আফগানিস্তানের বিষয়টি সামনে রেখেছেন, যেখান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিছু বলেননি- যা তার বিরুদ্ধে ব্যাপক সমালোচনার জবাব দেয়। কিন্তু এটি এমন একটি বিষয় ছিল, যা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিশেষভাবে এড়িয়ে গেছেন।
রাশিয়ান আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপ যে মূল ভূমিকা পালন করেছে তার ওপর জোর দিয়েছেন বাইডেন, তার এই গুরুত্বারোপকে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে অন্যদের ভঙ্গুর সম্পর্ক চাঙ্গা করার অব্যাহত প্রচেষ্টার অংশ মনে করা হচ্ছে।
বাইডেন তার শাসনের সময়কালে গণতন্ত্র এবং স্বৈরাচারের মধ্যে একটি পার্থক্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এবং এ বিষয়ে বার বার তিনি কথাও বলেছেন। যেসব দেশে স্বৈরতন্ত্র জেঁকে বসেছে সেসব দেশে পুনরায় গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। যে কথাটি মঙ্গলবার আবারও স্মরণ করিয়ে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে গণতন্ত্রের উত্থান হচ্ছে, এবং বিশ্ব স্পষ্টভাবে শান্তি ও নিরাপত্তার পাশে দাঁড়িয়েছে।’
আমেরিকান জনগণের প্রতি
মঙ্গলবারের শুরুতে প্রকাশিত একটি জনমত সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বেশিরভাগ আমেরিকান ইউক্রেনের সংঘাত সম্পর্কে বাইডেন কী বলতে যাচ্ছেন, তা শুনতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী। তো বাইডেন তার ভাষণে বৈশ্বিক ঐক্যের ক্ষেত্রে তার প্রশাসনের প্রচেষ্টার প্রমাণের একটি বার্তাটি দিয়েছেন, যে ঐক্য এশিয়া থেকে লাতিন আমেরিকা থেকে ইউরোপ এবং এমনকি সুইজারল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত।
বাইডেন বলেন, ‘আমেরিকান কূটনীতি গুরুত্বপূর্ণ, ‘আমেরিকান কূটনীতি সমস্যার সমাধান করে।’
বাইডেনের ক্যাম্পেইনে আরো একটি অঙ্গীকার ছিল যে, বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষুণ্ন মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা এবং বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনামলে মিত্রদের সঙ্গে যে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে তা পুনর্গঠন করা। এগুলো যে সেই প্রচেষ্টার বাস্তব ফলাফল, সেটাই তিনি বোঝালেন তার ভাষণে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইডেনের এই বার্তা তার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ আমেরিকান জনসাধারণ যদি তার কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট না হয় তাহলে তিনি ও তার দল আগামী নভেম্বরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে এর পরিণতি ভোগ করতে পারে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.