কাঁথা মোড়ানো হাত-পা বাঁধা মরদেহ, যা ঘটেছে আখির জীবনে!

ঘটনাটি গত ২৫ ফেব্রুয়ারির। ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার ১ নং শিমুলিয়া ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি এলাকার সড়কের পাশ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় কাঁথা দিয়ে মোড়ানো এক অজ্ঞাতনামা নারীর (৩০) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাটি বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

সিআইডির হাতে আটক আব্দুল্লাহ শেখ

মৃতদেহের পরিচয় শনাক্তসহ হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করতে মাঠে নামে পুলিশের একাধিক টিম। বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির এলআইসি শাখাও ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সিআইডি জানতে পারে, নিহত ওই নারীর নাম আখি আক্তার নাজনীন। বয়স ৩০বছর। আখি আক্তারের গ্রামের বাড়ি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার জামুরহাটে। হত্যাকাণ্ডের সাথে তার কথিত স্বামী আব্দুল্লাহ শেখের সংশ্লিষ্টতা পায় তদন্তকারীরা।

এরপর সিআইডির এলআইসির একটি দল অভিযান পরিচালনা করে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী থানার রাতইল এলাকা থেকে মামলার ঘটনার সাথে জড়িত হত্যাকারী আব্দুল্লাহ শেখকে গ্রেপ্তার করে।

যে কারণে হত্যা

আখি হত্যার বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, আখি আক্তার নাজনীন  ও তার স্বামী মো. আলমগীর হোসেন আশুলিয়া থানা এলাকার  নরসিংহপুরে শারমীন গ্রুপে সুইং অপারেটর হিসেবে কাজ করে আসছিল।

তাদের ১০ বছরের সাংসারিক জীবনে ৬ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। একই ফ্যাক্টরিতে একই পদে কাজ করতো আব্দুল্লাহ শেখ। একই সাথে কাজ করার সুবাদে নিহত আখি আক্তার নাজনীন ও আব্দুল্লাহ শেখের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর বিয়ের আশ্বাসে প্রায় এক বছর ধরে তারা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে বসবাস শুরু করে।

পরবর্তীতে আব্দুল্লাহ শেখের পরামর্শে আখি তার স্বামী মো. আলমগীর হোসেন আলমের কাছ থেকে প্রায় ৯ মাস পূর্বে ডিভোর্স নিয়ে শ্রীপুর এলাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে বসবাস করে আসছিল।

যেভাবে হত্যা

হত্যার ঘটনার বিষয়ে এই পুলিশ সুপার বলেন, আখি আক্তার তাদের বিয়ে এবং কাবিন রেজিস্ট্রি করার জন্য আব্দুল্লাহ শেখকে চাপ দেয়। তখন সে বিভিন্ন অজুহাতে টালবাহানা করতে থাকে।

ঘটনার দিন অর্থাৎ ২১ ফেব্রুয়ারি বিকাল আনুমানিক ৫টার সময় আখি আক্তার বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি করার বিষয়ে বারবার তাগিদ দেওয়া শুরু করলে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। এক পর্যায়ে আব্দুল্লাহ শেখ ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে মরদেহটি ঘরের ভেতর রেখে অপেক্ষা করতে থাকে।

রাত গভীর হলে সে সুযোগ বুঝে অপর এক ব্যক্তির সহযোগিতায় আখির মৃতদেহ আশুলিয়া থানার রাঙ্গামাটি এলাকায় সড়কের পাশে কাঁথা মোড়ানো অবস্থায় ফেলে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

নিহত আখি আক্তার নাজনীনের দুলাভাই মো. শফিকুল ইসলাম আশুলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেছেন। সেই মামলায় আব্দুল্লাহ শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।