দেশে বর্তমানে সবচেয়ে দামি ও ভয়ানক মাদক হচ্ছে ক্রিস্টালমেথ ‘আইস’। ইয়াবার চেয়েও বেশি দামি এই মাদক মূলত সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারে সন্তানদের খুব পছন্দের। সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, এই ভয়াবহ মাদকের বড় চালানগুলো দেশে আসছে মিয়ানমার থেকে।

ice drug

সম্প্রতি মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, ডিবিসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বেশ কিছু আইসের চালান আটক করেছে। একই সাথে গ্রেপ্তার করেছে চালানের সঙ্গে জড়িত মাদক ব্যবসায়ীদেরও।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সীমান্ত এলাকা থেকে ২১ কেজি ২৩৯ গ্রাম ক্রিস্টালমেথ আইস জব্দ করেছে। আর চলতি মার্চ মাসের শুরুতে ১২ কেজির বিশাল এক চালান আটক করেছে র‍্যাব। এগুলোর আনুমানিক মূল্য ৫০ কোটি টাকা!

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে গতকাল ৩ মার্চ রাতে ১২ কেজি আইস, এক লাখ পিস ইয়াবা ও ২টি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তারা হলেন- আইস কারবারের অন্যতম হোতা মো. জসিম উদ্দিন ওরফে জসিম(৩২), মকসুদ মিয়া(২৯), মো. রিয়াজ উদ্দিন(২৩), আলম(২৮) এবং মো. সামছুল আলম(৩৫)।

মিয়ানমার থেকে ‘আইস’ যেভাবে ঢাকায়

র‍্যাব ও সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, মিয়ানমারের মাদক চক্রের যোগসাজসে দেশে অবৈধ আইস কারবারের সাথে জড়িত হয় এই মাদক ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশে জসিমের নেতৃত্বে ‘আইস’ সিন্ডিকেটের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই চক্রের সদস্য সংখ্যা ১২/১৫ জন।

এটি মূলত সোনাদিয়াকেন্দ্রিক একটি মাদক চোরাকারবারী চক্র। ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, বরিশাল ইত্যাদি এলাকায় বিভিন্ন কৌশলে মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসা অবৈধ মাদক ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবা পৌঁছাত তারা। মূলত নৌপথ ব্যবহার করে বিভিন্ন কৌশলে মিয়ানমার থেকে মাদক নিয়ে আসত। এরপর দেশের অভ্যন্তরে নৌপথকে প্রাধান্য দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করত। 

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে গভীর সমুদ্রে ট্রলারের মাধ্যমে মিয়ানমারের মাদক চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশের এই চক্রের কাছে ইয়াবা ও আইসের চালান হস্তান্তর করে। সাগর পথে মাদকের চালান গ্রহণ ও নিরাপদ স্থানে পৌঁছানোর জন্য চক্রের সদস্যরা অন্তত ২০-২৫ দিন আগে থেকে জেলেদের ছদ্মবেশে গভীর সমুদ্রে অবস্থান করতো।

মালামাল গ্রহণের পর সুবিধাজনক সময়ে তারা সোনাদিয়া দ্বীপে চলে আসে। বহনকৃত ইয়াবা-আইসের চালান সোনাদিয়া ও মহেশখালী দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়। এরপর সুবিধাজনক সময়ে সোনাদিয়া থেকে দুটি বোটের মাধ্যমে হাতিয়াতে ক্রিস্টাল আইস ও ইয়াবার চালান নিয়ে আসত।

মাদকের চালান হাতিয়ায় পৌঁছালে চক্রটির হাতিয়ার সদস্যদের তত্ত্বাবধানে চালান সংরক্ষণ করা হয়। এরপর পুনরায় ইঞ্জিনচালিত নৌকার মাধ্যমে মেঘনা নদী হয়ে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও ঢাকার আশেপাশের সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছাত। ঢাকা ছাড়াও বরিশাল, পটুয়াখালী অঞ্চলে মাদক সরবরাহ করা হতো।

মাদকের চালান মুন্সিগঞ্জে পৌঁছানোর পর রাজধানীর একটি চক্র সেটি গ্রহণ করে এবং সড়কপথে বিভিন্ন মাধ্যমে কৌশলে ঢাকায় নিয়ে আসে।

যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, নৌপথে মাদক পরিবহনে তারা বিভিন্ন নিরাপত্তা ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখকে ফাঁকি দেয়ার জন্য চক্রটি ২টি বোট ব্যবহার করে থাকে। সামনের বোটটিকে নজরদারী করতে ব্যবহার করত এবং পরের বোটটিতে মাদক বহন করা হতো।

মোবাইল অথবা টর্চ লাইট সিগন্যালের মাধ্যমে উভয় বোটের সদস্যরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করত। পথিমধ্যে নজরদারীতে নিয়োজিত স্কর্ট বোট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মুখীন বা সন্দেহজনক কিছু আঁচ করতে পারলে পিছনের মাদকবাহী বোটকে সংকেত প্রদান করত।

যা বলল র‍্যাব

এই চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উয়িং-এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গ্রেপ্তারকৃত জসিম ৫-৭ বছর যাবত মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত। সে লবণ ব্যবসার আড়ালে আইসের কারবারে জড়িত। সে মূলত মিয়ানমারের মাদক সিন্ডিকেটের সাথে সমন্বয় সাধন করত।

জসিমের নেতৃত্বে চক্রটি মিয়ানমার থেকে ইয়াবা নিয়ে আসতো। পরবর্তীতে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে ক্রিস্টাল আইসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর থেকে তারা মিয়ানমার থেকে সেটিও নিয়ে আসা শুরু করে। রাজধানী থেকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের চেতনানাশক মাদক সিডাকটিভ ইনজেকশন সংগ্রহ করে নৌপথে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিত জসিম। 

তিনি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃত শাহীন আলম জসিমের অন্যতম প্রধান সহযোগী। সে সাগর ও নৌপথে মাদক পরিবহনের মূল দায়িত্ব পালন করে। তার বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মানব পাচার ও মারামারি সংক্রান্ত ২টি মামলা রয়েছে।

চক্রের অপর সদস্য শামছুল আলমের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় অস্ত্র ও মারামারি সংক্রান্ত ৩টি মামলা রয়েছে। মকসুদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতি সংক্রান্ত ৬টি মামলা রয়েছে। শাহীন, সামসু ও মকসুদ মাদক বহন ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করত। গ্রেফতারকৃত রিয়াজ উদ্দিন মাদক পরিবহনে নজরদারীর জন্য স্কর্ট বোটে অবস্থান করে স্কর্টিংয়ের দায়িত্ব পালন করতো।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.