চীন: ইউক্রেন ও তাইওয়ান ভিন্ন ইস্যু

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, কিছু পক্ষ সবসময় দেশে দেশে বিভেদ তৈরি করতে চায়। তারা চীন ও ভারতের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চায়। একইভাবে তারা চীন ও রাশিয়ার মধ্যেও ফাটল ধরাতে চায়। যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে ওয়াং ই এসব কথা বলেন।

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই

চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার বেইজিংয়ে তার বার্ষিক নিয়মিত প্রেস কনফারেন্সে অংশ নেন। চীনের পার্লামেন্ট অধিবেশন ন্যাশনাল পিপলস কনফারেন্স চলাকালে প্রতিবছর এ প্রেস কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে তার দেশের অবস্থান তুলে ধরেন।

ওয়াং ই বলেন, ইউক্রেন ইস্যুকে কেন্দ্র করে কোনো কোনো পক্ষের নির্লজ্জ দ্বিচারিতা স্পষ্ট হয়েছে। ইউক্রেনের ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বের নীতির প্রশ্নে বার বার সরব হওয়া কিছু লোক তাইওয়ান প্রশ্নে চীনের সার্বভৌমত্ব ও ভৌগলিক অখণ্ডতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে।

তাইওয়ান ও ইউক্রেন একই ধরনের ইস্যু কিনা- জানতে চাইলে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুটি ইস্যুর মধ্যে মৌলিক ভিন্নতা রয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যা ঘটছে, সেটা দুটি সার্বভৌম দেশের বিষয়। অন্যদিকে, তাইওয়ান বরাবরই চীনের অংশ ছিল এবং এটা পুরোপুরি চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানকে ‘দখল’ বলবেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা তা বলব না। বরং আমরা বলছি, ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করা উচিত এবং একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা নিয়ে রাশিয়ার যুক্তিসঙ্গত উদ্বেগকেও গুরুত্ব দেয়া উচিত। চীন বরাবরই গঠনমূলক ভূমিকা রাখবে। দুই দেশের সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিলে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত বলেও তিনি জানান।

চীন ও রাশিয়ার সম্পর্ককে ‘বিশ্বের অন্যতম তাৎপর্যবহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক’ অভিহিত করে ওয়াং ই বলেন, আমাদের বন্ধন পাথরের মতো মজবুত। দুই পক্ষ জোটবদ্ধ হবে না, অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করবে না এবং তৃতীয় কোনো পক্ষকে টার্গেট করবে না- এটাই এ সম্পর্কের ভিত্তি। কোনো কোনো শক্তি চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ফাটল ধরাতে চায়, কিন্তু আমরা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ও বিভেদ ছড়ানোর চেষ্টা থেকে এই সম্পর্ককে মুক্ত রাখতে অঙ্গীকারবদ্ধ। চীন-রাশিয়ার মধ্যকার সর্বাত্মক কৌশলগত সমন্বয় ও সহযোগিতা জোরদার হতে থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

কোভিড প্রটোকলের কারণে এবার ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্স আয়োজন করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রেস কনফারেন্সে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তার দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই দেশের সম্পর্ককে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা জরুরি। বড় দেশগুলোর মধ্যকার প্রতিযোগিতা ঠিক নয় এবং এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মৌখিক আশ্বাসকে বাস্তবে রূপ দেয়া জরুরি। তিনি বলেন, বিশ্বায়িত ও আন্তঃনির্ভরশীল পৃথিবীতে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে সঠিক পথ বেছে নিবে এবং পরস্পরের পাশাপাশি চলবে, সেটা বেইজিং ও ওয়াশিংটনকে একসঙ্গে মিলে বের করতে হবে।

জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, জাপানকে নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কগুলোর রাজনৈতিক ভিত্তি অটুট রাখতে হবে। আমরা আশা করি, নীতি-প্রথার বিরুদ্ধে না গিয়ে জাপান প্রথা-মাফিক চলবে, অন্যের উস্কানিতে সায় দিবে না এবং প্রতিবেশীদের প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে দাঁড় করাবে না।

কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা নিয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উত্তর কোরিয়ার প্রতি বাহ্যিক হুমকিগুলো রয়ে গেছে। নিরাপত্তা নিয়ে দেশটির যৌক্তিক উদ্বেগও বহুদিন ধরে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এছাড়া কোরীয় উপদ্বীপে মার্কিন কর্মকাণ্ডও বড় বিষয় হয়ে আছে।

চীন-ভারত সম্পর্ক নিয়ে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এ সম্পর্ক হোঁচট খেয়েছে, যা দুই দেশ এবং জনগণের মৌলিক স্বার্থের অনুকূল নয়। কিছু শক্তি সবসময় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চেয়েছে। তাদের এসব চেষ্টা মানুষকে সতর্ক বানিয়েছে। এখন আগের চেয়ে বেশি মানুষ বুঝতে পারছে যে, চীন ও ভারতের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ যাদের জনসংখ্যা ১০০ কোটির বেশি, তারা কেবল অন্যের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত থেকেই নিজের পথ রচনা করা উচিত।