ঠকছেন ক্রেতা, বাড়ছে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগের সংখ্যা
- Details
- by নিজস্ব প্রতিবেদক
জুবায়ের হোসেন। পেশায় একজন ব্যবসায়ী। সাম্প্রতিক সময়ে একটি রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে বিল পরিশোধের সময় খেয়াল করলেন এক পিস রুই মাছে দাম ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। রেস্টুরেন্টে ছিল না কোন মূল্য তালিকা চার্ট। তাই দাম না জেনেই খেয়ে বিপাকে পড়েন তিনি।
বাড়ছে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগের সংখ্যা
কিন্তু এক পিস রুই মাছের দাম কিভাবে ২০০ টাকা হয় এই নিয়ে সেই রেস্টুরেন্টের লোকজনের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। শেষমেষ ২০০ টাকা পরিশোধ করেই রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতে হয় তাকে।
শিক্ষিত জুবায়ের হোসেন পুরো বিষয়টি জানিয়ে অভিযোগ করেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে। একটি নির্দিষ্ট সময় পর ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর থেকে ডাকা হয় তাকে সেই রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষকে। শুনানি শেষে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ওই রেস্টুরেন্ট মালিককে। জরিমানার ২০ হাজার টাকার মধ্যে ৫ হাজার টাকা পেয়ে যান অভিযোগকারী জুবায়ের হোসেন।
এমন ভুক্তভোগী অনেকেই প্রতিদিন অভিযোগ দায়ের করে চলেছেন ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে। আর প্রাপ্তির পরে দ্রুত এসব অভিযোগের নিষ্পত্তি করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেই সাথে আইন অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীরা আদায় করা জরিমানার ২৫ শতাংশ টাকা পেয়ে যাচ্ছেন ।
ভোক্তা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও ভোক্তা অধিকার আদায়ের জন্য ২০০৯ সালে সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন করা হয়। ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল বাজার তদারকির মাধ্যমে এই আইনের বাস্তবায়ন শুরু করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
যা আছে ভোক্তা অধিকার আইনে
ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর ৩৭ থেকে ৪০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের খুচরা বিক্রয়মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা না থাকা, পণ্য ও সেবার মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করা এবং নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্য দাবি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব অপরাধে অনূর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান আছে।
এছাড়া ৪১ থেকে ৫৫ ধারায় ভেজাল পণ্য বা ঔষধ বিক্রয়, খাদ্যদ্রব্যে নিষিদ্ধ পণ্যের মিশ্রণের শাস্তি ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা ২ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। অবৈধ উপায়ে পণ্য উৎপাদন ও মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করা, ওজনে কারচুপি, পণ্যের নকল উৎপাদন, মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বা ঔষধ বিক্রয় সহ বিভিন্ন রকমের অপরাধের জন্য সুনির্দিষ্ট ধারায় জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
১২ বছরে যত জরিমানা
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এক বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০৯-১০ অর্থ বছর থেকে শুরু করে ২০২০-২১ অর্থ বছরে ভোক্তা অধিকার সরাসরি বাজারে অভিযান চালিয়েছে ৪৩ হাজার ২০৯টি। এসব অভিযান পরিচালনার সময় জরিমানার মুখোমুখি হয়েছে এক লাখ ৩ হাজার ৩৪৭ প্রতিষ্ঠানকে। আদায় করা হয়েছে ৭১ কোটি ২৬ লাখ ২২ হাজার ৪৪২ টাকা।
অপরদিকে বিগত ১২ বছরে ৬ হাজার ৯৩৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করেছেন সংশ্লিষ্ট ভোক্তারা। এসব অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আদায় করা হয়েছে ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৭২ হাজার ৫০৮ টাকা।
আইন অনুযায়ী অভিযোগকারী ভোক্তাকে জরিমানার ২৫ শতাংশ হারে বিগত ১২ বছরে ৬ হাজার ৮৪৫ জন ভোক্তাকে দেওয়া হয়েছে এক কোটি ১৯ লাখ ২১ হাজার ১২৭ টাকা।
যেভাবে অভিযোগ দায়ের করা যায়
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, “যে কোন ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা এই আইনের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কাজ সম্পর্কে মহাপরিচালক বা মহাপরিচালকের নিকট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে বিষয়টি অবহিত করে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারেন।
তবে দায়েরকৃত অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে। ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও অভিযোগ দায়ের করা যায়। অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ অবশ্যই সংযুক্ত করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে প্রথমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে ‘অভিযোগ ফরম’ নামাতে হবে। ফরম হাতে লিখে পূরণ করতে হবে। এরপর সরাসরি বা স্ক্যান করে বা ক্যামেরায় ছবি তুলে তা ই-মেইল করতে হবে। সঙ্গে বিল বা ভাউচার কপি যুক্ত করতে হবে।
অভিযোগ করে যেভাবে টাকা পায় ভোক্তারা
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, যে কোন অভিযোগকারী সরাসরি অফিসে গিয়েও অভিযোগটি জমা দিতে পারেন। তবে অবশ্যই ঘটনা ঘটার এক মাসের মধ্যে অভিযোগ দায়ের করতে হবে।
যে কোন পণ্যের গায়ের মূল্যের চেয়ে বেশি দাম নিলে এবং রেস্তোরাঁয় খাবারের মুল্য তালিকা না থাকলে বা ঝোলানো মূল্যতালিকার চেয়ে বেশি টাকা নিলে ভোক্তা অভিযোগ করতে পারবেন।
অভিযোগ দায়েরের ১০–১২ দিনের মধ্যে অধিদপ্তর থেকে ফোনে বা ই–মেইলে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তকে শুনানির জন্য ডাকা হয়। এরপর উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে অধিদপ্তরে শুনানি হয়।
পরে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে তাঁকে কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রদান করা হয়। অর্থদণ্ড দিলে তার পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। পরে সেই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অর্থ পরিশোধ করা হলে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট সেই অভিযোগকারীর ডাকা হয়।
তিন কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগকারীকে অধিদপ্তরের আদায় করা অর্থদণ্ডের ২৫ শতাংশ টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতিতে বাড়ছে অভিযোগ
সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের ইচ্ছেমত জিনিসের দাম হাঁকাচ্ছেন। এমন ঘটনায় অনেক ভোক্তা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শাহনাজ বলেন, দ্রব্যমুল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.