ক্যাপ্টেন: আমরা সৌভাগ্যবান, এখনো আছেন অনেক দেশের ক্রু

রুশ সামরিক আাগ্রাসনে ধ্বংসযজ্ঞের মুখে পড়া ইউক্রেনের ওলিভিয়া বন্দরে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে নোঙর করে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, বিএসসির এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজ। পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে দেশটিতে রাশিয়ার সর্বাত্মক আগ্রাসন শুরু হওয়ায় ২৯ নাবিক নিয়ে আটকে পড়ে জাহাজটি।

দেশে পৌঁছেছেন ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র নাবিকেরা

গত ২ মার্চ রাশিয়ার রকেট জাহাজটিতে আঘাত হানলে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান নিহত হন। তবে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় হাদিসুরের মরদেহসহ জীবিত ২৮ জনকে ৩ মার্চ অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।

পরবর্তীতে রোমানিয়া হয়ে বাংলার সমৃদ্ধির নাবিকরা আজ বুধবার, ৯ মার্চ দুপুর ১২টায় টার্কিস এয়ারলাইন্সের টিকে-৭২২ ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পর বিভীষিকাময় সেই দুঃস্বপ্নের ভয়ংকর স্মৃতি স্মরণ করেন তারা। এদিন বিমানবন্দনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাহাজটির মাস্টার ক্যাপ্টেন জি এম নূরে আলম।

কথা বলছেন জি এম নূরে আলম

এ সময় সুস্থভাবে দেশে ফিরতে পারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ২৮ নাবিক। সেইসঙ্গ সহকর্মী হাদিসুর রহমানের মৃত্যুতে গভীর সমবেদনা জানান তারা। তারপরেও নিজেদের সৌভাগ্যবান বলে মনে করেন মাস্টার ক্যাপ্টেন জি এম নূরে আলম।

প্রভাবশালী অনেক দেশের নাবিকেরা এখনো ইউক্রেনে আটকে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ওইসব নাবিক এখন পর্যন্ত উদ্ধার হননি। বাংলাদেশ খুব ছোট হলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এবং কূটনীতিকদের পরিশ্রম ও চেষ্টায় দেশে ফিরতে পেরেছি আমরা।

একজন ছাড়া সকল নাবিক সুস্থভাবে দেশে ফিরতে পারায় আনন্দ প্রকাশ করে জি এম নূরে আলম বলেন, তবে অত্যন্ত গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি সহকর্মী হাদিসুরের মৃত্যুতে। তার মরদেহ হিমঘরে রেখে এসেছি আমরা, সেটি দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

আক্রান্ত হওয়ার দিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, নিয়মিত ডিউটিতে থাকা অবস্থায় বিকালে হামলা হলে জাহাজের ব্রিজে আগুন লেগে যায়। সেই আগুন নিজেদের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে আনি। পরে নৌ প্রতিমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ফোন করে আমাদের খোঁজ নেন, নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পদক্ষেপ নেন।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তালিকা অনুযায়ী, দেশে ফেরা ২৮ নাবিক হলেন- জি এম নূর ই আলম, মনসুরুল ইসলাম খান, সেলিম মিয়া, রামকৃষ্ণ বিশ্বাস, রোকনুজ্জামান রাজীব, ফারিয়াতুল জান্নাত তুলি, ফয়সাল আহমেদ সেতু, ওমর ফারুক, সৈয়দ আশিফুল ইসলাম, রাজীবুল আউয়াল, সালমান সরওয়ার সামি, ফারজানা ইসলাম মৌ, শেখ সাদী, মাসুদুর রহমান, জামাল হোসাইন, মোহাম্মদ হানিফ, আমিনুর ইসলাম, মোহিন উদ্দিন, হোসাইন মোহাম্মদ রাকিব, সাজ্জাদ ইবনে আলম, নাজমুল উদ্দিন, নজরুল ইসলাম, সারওয়ার হোসাইন, মাসুম বিল্লাহ, মোহাম্মদ হোসাইন, আতিকুর রহমান, শফিকুর রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।