রাশিয়ায় চলছে চিনি-যুদ্ধ

যে রাশিয়ার হামলা থেকে বাঁচতে দেশান্তরি হচ্ছেন ইউক্রেনের মানুষ, সে রাশিয়ার লোকজন লড়াই করছে চিনি দখলে নিতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। নেটিজেনরা মন্তব্য করছেন, রাশিয়াতেও যুদ্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে রুশ সরকার বলছে, তাদের দেশে চিনির কোনো সংকট নেই। আতঙ্কিত হয়েই মানুষ এ ধরনের কাণ্ড ঘটাচ্ছে।

চিনি কিনতে গিয়ে মারামারিতে লিপ্ত ক্রেতারা

ভাইরাল হয়ে যাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, রাশিয়ার সুপার মার্কেটগুলোতে চিনির জন্য কাড়াকাড়ি করছে মানুষ। জানা গেছে, রাশিয়ার বেশ কিছু বাজারে চিনি ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কেনাকাটার সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিছু জিনিস বিদেশে রপ্তানি করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আবার কোনো কোনো জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। ফলে ক্রেতাদের মধ্যে দেখা গেছে এক ধরনের আতঙ্ক। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ ১০ কেজি চিনি কিনতে পারবে। ফলে সবাই চিনি মজুদ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। এতেই বাজারে দেখা দিয়েছে চিনির সংকট। পাশাপাশি দাম বেড়ে গেছে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত।

সুপারমার্কেটগুলোতে অন্যসব তাক জিনিসপত্রে ভরা থাকলেও খা খা করছে চিনির তাক। ক্রেতারা রীতিমত মারামারিতে লিপ্ত হয়েছেন। তবে রুশ প্রশাসনের দাবি, দেশে পর্যাপ্ত চিনি রয়েছে। ক্রেতারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে বাজারে ছুটছেন। সুযোগ বুঝে মূল্যবৃদ্ধি করছে উৎপাদনকারী সংস্থাগুলো। বিক্রেতারা মজুদ করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া মৌলিক কোনো সমস্যা নেই।

রাশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপমন্ত্রী ভিক্টর ইয়েভতুখভ চিনি সংকটের বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে বলেন, চিনি নিয়ে কোনো ঝামেলা নেই। রাশিয়ায় যথেষ্ঠ পরিমাণে চিনি উৎপাদন করা হয়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মুখে কিছু না বললেও প্রায় এক মাস ধরে চলা যুদ্ধ এবং ইউরোপ-আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে এরই মধ্যে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে রুশ অর্থনীতি। দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি তৈরি হয়েছে, যা ২০১৫ সালকেও ছাড়িয়ে গেছে।

পশ্চিমের দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার কারণে বেশ কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। যেসব দেশ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সেসব দেশের কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে রাশিয়া থেকে পাততাড়ি গোটাতে শুরু করেছে। ক্ষতি হচ্ছে গাড়ি শিল্পের। ইলেকট্রনিকস জিনিসের ব্যবসাও ক্ষতির মুখে পড়েছে। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রুশ সরকার মুদ্রার ওপর নিয়ন্ত্রণ চাপিয়ে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।

তবে এখন পর্যন্ত যুদ্ধে ইতি টানার কথা শোনা যাচ্ছে না রাশিয়ার পক্ষ থেকে। ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সফলতা পাওয়ার ব্যাপারে আপাতত কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু যুদ্ধ যত দীর্ঘস্থায়ী হবে বা অবরোধ-নিষেধাজ্ঞা যত দীর্ঘ হবে ততই বিপদে পড়বে রাশিয়া। সামান্য চিনি দিয়েই যার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে।