চীনের ফাঁদে পড়ছে পাকিস্তান!
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেল্ট অফ রোড ইনিশিয়েটিভ বা বিআরআই প্রকল্পে ঋণ দিয়ে পাকিস্তানকে ফাঁদে ফেলার পরিকল্পনা করেছে চীন। বলা হচ্ছে উচ্চ-সুদের হার, কঠোর ঋণ পরিশোধের শর্ত এবং ঋণ প্রদানে স্বচ্ছতার অভাব- এই তিনটি কারণে চীনের ফাঁদে পড়ছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের একটি প্রবন্ধে রাজনৈতিক এবং বৈদেশিক বিশেষজ্ঞ ফাবিয়ান বাউসার্ট বলেছেন, চীন পাকিস্তানে করোট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য যে উচ্চ সুদের হার নিচ্ছে, সেই সুদের হার পাঁচ দশমিক এগারো শতাংশ, যা অন্য দেশের সুদের হারের তুলনায় সর্বোচ্চ। অন্যদিকে এই হাইড্রোপাওয়ার প্রকল্পের ৯৩ শতাংশ মালিকানা বহন করছে চীনা প্রতিষ্ঠান ‘চায়না থ্রি গর্জ সাউথ এশিয়া ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড’।
বিআরআই’র অধীনে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত চার দশমিক দুই শতাংশ হারে ঋণ দিয়ে থাকে, যা পরিশোধের সময়সীমা ১০ বছরেরও কম। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সহায়তা কমিটির মতো কোন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা, যাদের মাধ্যমে জার্মানি, ফ্রান্স বা জাপানের মতো দেশগুলো ঋণ দেয়, তাদের সুদের হার এক দশমিক এক শতাংশ এবং পরিশোধের সময়কাল ২৮ বছর।
বাউসার্ট তার নিবন্ধে জানিয়েছেন, পাকিস্তানের অবস্থান এখন সবচেয়ে অনিশ্চিত পর্যায়ে রয়েছে। বিআরআই সহায়তা প্রাপ্ত দেশের তালিকায় ২৭.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রকল্প নিয়ে পাকিস্তান এখন শীর্ষে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সমীক্ষা অনুসারে, পাকিস্তানের বাহ্যিক ঋণের পরিমান ২০২১ সালের এপ্রিলে ৯০.১২ বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। এর মধ্যে ইসলামাবাদের কাছে চীনের পাওনার পরিমান ২৪.৭ বিলিয়ন ডলার, যা পাকিস্তানের মোট ঋণের ২৭ শতাংশেরও বেশি।
আইএমএফের মতে, গোপন ও সার্বভৌম ঋণের বোঝা আগামী দিনে পাকিস্তানের জন্য উদ্বেগের একটি প্রধান কারণ হবে। পাকিস্তানের সম্পদ চীনের অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত হবে।
দ্য টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুসারে, পাকিস্তানে ২৬টি সিপিইসি-সম্পর্কিত প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে জ্বালানি সংক্রান্ত আটটি, পরিবহন সংক্রান্ত চারটি, যোগাযোগ সংক্রান্ত একটি, শিক্ষা সংক্রান্ত তিনটি, ব্যাংকিং ও আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত দুটি, পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন সংক্রান্ত একটি এবং সরকার ও নাগরিক সমাজ সম্পর্কিত দুটি প্রকল্প রয়েছে।
বিআরআই ঋণ পেতে হলে সাধারণত প্রাপক দেশকে চীনের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হয়। বিআরআই প্রকল্পের অধিকাংশ অর্থায়ন ঋণদাতা ব্যাংক এবং প্রাপক সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে করা হয়, এক্ষেত্রে সরকারকে গ্যারেন্টার বা নিশ্চয়তা প্রদানকারী ধরা হয়। অনেক ক্ষেত্রে, প্রকল্পগুলো চীনা সংস্থাগুলোর দ্বারা সম্পাদিত হয়, ফলে গ্রহীতা দেশের খুব সামান্যই লাভ হয় বলে জানিয়েছেন বাউসার্ট।
এই প্রকল্পগুলোরে ক্ষেত্রে প্রথম সমস্যা হলো স্বচ্ছতার অভাব, কারণ সরকারি নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে অনেক অস্বচ্ছতা থাকে। স্থানীয় সম্পদের বিপরীতে ঋণও সমান্তরাল করা হয়, সেক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা হিসেবে ঋণদাতার কাছে একটি নির্দিষ্ট সম্পদের প্রতিশ্রুতি দেয়।
বিজনেস অ্যান্ড ফাইন্যান্স আউটলুক ২০১৮ অনুসারে, বিআরআই বিনিয়োগের প্রাপক দেশগুলোর মধ্যে, বিবিবি বা তার বেশি বিনিয়োগ গ্রেডসহ ১৭টি ইকোনমি রয়েছে, ২৯টি ইকোনমি বিনিয়োগ গ্রেডের নীচে এবং ১৪টির কোনও রেটিং নেই।
বিশেষজ্ঞাগণ বলছেন, যে বিআরআই প্রকল্পগুলো কম সময়ে শেষ হয়েছে, তার গুণমান এবং নিরাপত্তা বিষয়ে আপস করা হয়েছে।
এই জাতীয় প্রকল্পগুলোকে ২০০৫ সাল থেকে ‘সমস্যাপূর্ণ’ হিসেবে বর্ণিত করা হয়েছে, যার ক্রমবর্ধমান মূল্য প্রায় ৩৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এর মধ্যে পাকিস্তানে প্রায় ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের জ্বালানি প্রকল্প রয়েছে।
এদিকে বিআরআই তহবিলপ্রাপ্ত ২৩টি দেশ বর্তমানে ঋণ সঙ্কটের সম্মুখীন। তার মধ্যে আটটি দেশ বিশেষ উদ্বেগের ভেতর রয়েছে। দেশগুলো হলো জিবুতি, কিরগিজ প্রজাতন্ত্র, লাওস, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, মন্টিনিগ্রো, তাজিকিস্তান এবং পাকিস্তান।
পাকিস্তানে বিরোধী দলে থাকাকালীন ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ সিপিইসি’র এই প্রকল্পের শর্তাবলী এবং তাদের চারপাশে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।
তবে পাকিস্তানের কাছে বর্তমানে চীনকে সমর্থন করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইমরান খানের শীতকালীন অলিম্পিকের সময় বেইজিং সফরে জিনজিয়াং, তিব্বত, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগর পরিদর্শন এটাই প্রমাণ করে যে, তিনি চীনের যাবতীয় অপকর্মকে সমর্থন করছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, চীনের নির্দেশে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বান করা সামিট ফর ডেমোক্রেসি থেকে বেরিয়ে আসে পাকিস্তান। ওই সামিটে বেইজিংকে আমন্ত্রণ জানায়নি জো বাইডেনের সরকার।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.