আপনি পড়ছেন

ইউক্রেনের মারিওপল শহরের যুদ্ধ-পরিস্থিতির এক বিবরণী তুলে এনেছেন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক লেভি গডম্যান। একজন চুক্তিভিত্তিক রুশ সৈনিকের জবানিতে এই বিবরণ কিছুটা একপেশে মনে হলেও এতে ফুটে উঠেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা, নির্মমতা।

fierce fight between ukraine russiaইউক্রেনে ধ্বংসযজ্ঞ, ফাইল ছবি

জীবন-মৃত্যুর যে নাগরদোলার নাম যুদ্ধ, সেখানে বিশেষ অভিযানে অংশগ্রহণরত অবস্থায় কোনো সাক্ষাৎকার দেয়া সম্ভব নয়। এজন্য ওই মেরিন সেনার নাম গোপন করতে লেখা হয়েছে সের্গেই এস, যিনি মারিওপলের পশ্চিমাংশে দায়িত্বরত আছেন। পড়ুন সের্গেই এস-এর বিবরণী-

মারিওপলে শুদ্ধিকরণ চলছে। শরণার্থী সেজে কড়াই থেকে পলায়নপর ব্যান্ডেরাবাদীদের (কট্টর জাতীয়তাবাদী ইউক্রেনীয় রাজনীতিক স্তেপান ব্যান্ডেরার অনুসারী) খুঁজছে কাদিরভের (চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ) লোকজন। বেশিরভাগ নাজিকে শনাক্ত করতে পেরেছে চেচেনরাই। কাজটি কঠিন। একটি শহর পরিষ্কার করা, শত্রু খুঁজে নিরস্ত্র করা খুব কঠিন এবং ক্লান্তিকর কাজ।

দিনভর এক বুনো উদ্বেগ-উত্তেজনায় থাকতে হয়। যে কোনো মূহুর্তে স্নাইপারের সহজ টার্গেট হতে পারেন, এটা আপনি জানেন। এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতে কুঁজো হয়ে ঘাড়ের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে দৌড়ে ছুটতে হয়। মৃত্যুর সঙ্গে এই ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছেই।

কেভলার হেলমেট, বর্ম, অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছুটোছুটি করতে করতে আমরা সবাই ধোপার পাটার মতো সর্বংসহা হয়ে গেছি। একেকজনের পা হয়ে গেছে ওয়েইটলিফটারের মতো। প্রতিবার রাস্তা পেরোনোর আগে ভবনগুলোর ছাদে চোখ বুলিয়ে নিতে হয়। এর চেয়ে ট্যাঙ্ক বা সাঁজোয়া যানের ভেতর থাকলে মন কিছুটা শান্ত থাকে।

এখানে সবকিছুকে গুলি করা হয়। একটা কাউন্টার স্নাইপার যুদ্ধ চলছে। একজন স্নাইপার ক্লাইম্বার থাকে। তার কাজ হলো ভবনের পাঁচ অথবা ছয় তলা পর্যন্ত দ্রুত উঠে চোখ বুলিয়ে ফের দড়ি বেয়ে নেমে দৌড়ে গিয়ে ট্যাঙ্ক, মর্টার বা আর্টিলারি ফায়ারের আড়ালে অবস্থান নেওয়া। এজিএসের গ্রেডেন লঞ্চারদের কাজ হলো স্নাইপার ক্লাইম্বারের দেখিয়ে দেওয়া এবং জানালাগুলোয় গ্রেনেড পৌঁছানো।

আমাদের মধ্যে কেউ কেউ মিডল ইস্টে যুদ্ধ করেছে। ১০ লাখের বেশি মানুষের একটা শহর আছে ইরাকে, নাম মসুল। আইএসআইএস ওই শহরকে দুর্গ বানিয়েছিল। এজন্য আমেরিকানরা পাথরের ঢিবি বানিয়ে তার ওপর অবস্থান নিয়ে ভারি গোলাবর্ষণ করত।

দেখা গেছে, একজন আইএস মারতে গিয়ে একশ বেসামরিক লোক নিহত হয়েছেন। আমরা সেটা করছি না। আমরা টার্গেট সুনির্দিষ্ট করে বেছে বেছে গুলি করছি। এজন্য কাজটা কঠিন। আমরা সঙ্গে ট্যাঙ্ক রেখেছি কারণ শুধুমাত্র শনাক্ত হওয়া স্নাইপার পয়েন্টগুলোতেই গুলি করছি। স্নাইপারকে গুলি করতে না পারলে ট্যাঙ্ক ব্যবহার করে ইট-বালু-সুড়কির নিচে চাপা দিব।

স্নাইপাররা বারবার অবস্থান পাল্টায়। বুরিয়াত ও তুভান (রুশ জনগোষ্ঠী) স্নাইপারদের কয়েকটি গ্রুপ আমাদের সঙ্গে অ্যাটাচড ছিল। একজন খান্তি (রাশিয়ার খান্তি-মানসিস্ক অঞ্চলের অধিবাসী) লিগ্যাসি হান্টারও ছিল। এদের অনেকে চেচনিয়া, ওসেটিয়া, সিরিয়ায় যুদ্ধ করেছে। কিন্তু এরা বলছে, মারিওপলের পরিস্থিতি ভিন্ন।

এখানে ধ্বংস হওয়া বহুতল ভবনের জানালায়, অ্যাটিকে লুকিয়ে থাকা স্নাইপারকে শনাক্ত করা খুব কঠিন। আমাদের স্নাইপাররা কখনো বাইনোকুলার, কখনো থারমাল ইমেজার, আবার কখনো স্রেফ খালি চোখে একেকটি ভবনের দিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাকিয়ে থাকে। এভাবে দুই-তিনদিন পর চোখ জ্বলতে থাকে, চেহারা লাল হয়ে যায়। তারপরও পর্যাপ্ত ঘুমের সুযোগ মেলে না। এক ধরণের হরিণের চর্বি মাখতে হয় মুখমণ্ডলে। এসএসও স্নাইপাররাও তাদের সঙ্গে কাজ করে।

মোটামুটিভাবে, আমাদের প্লাটুনের ছেলেদের এক-তৃতীয়াংশেরই ডাক নাম ইউক্রেনীয়। ওরা বলে, ‘আমরা নিজেদের দেশকে ভূতের আছর থেকে মুক্ত করছি।’ অনেকে আছে যাদেরকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সন্তান বলা যায়। কারও জন্ম হয়েছে ইউক্রেন, কারও মলদোভা, কাজাখস্তান। রীতিমতো আন্তর্জাতিক বাহিনী।

রুশ, ইউক্রেনীয়, আবখাজিয়ান, দাগেস্তানি, ককেসিয়ান। যুদ্ধ ওদের রক্তে মিশে আছে। যুদ্ধের সময় বারবার কাদিরভের চেচেনদের সঙ্গে আমরা মুখোমুখি হই। কখনো ওরা আমাদের সহায়তা করে। কখনো আমরা ওদের সহায়তা করি।

গোড়ার দিকে চেচেনরা মৃত্যুকে পাত্তা দিত না। এরপর তারা সতর্ক হয়েছে। যুদ্ধ হচ্ছে অবস্থানের বিষয়। এখানে তলোয়ার নিয়ে লড়াই হচ্ছে না। বীরের মতো ছুটে এসে আক্রমণ করলে এখানে কাজে আসবে না। খুব সহজেই স্নাইপার অথবা মর্টারের টার্গেট হয়ে যাবেন।

আমাদের পক্ষে যেমন কাদিরভের চেচেন যোদ্ধারা রয়েছে, তেমনি ব্যান্ডেরাবাদীদের সাথেও কিছু চেচেন আছে। আমাদের চেচেন সহযোদ্ধারা ওদেরকে ‘চেচেন-ভাষাভাষী শয়তান’ বলে। ওদেরকে তলোয়ার নিয়ে লড়াইয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল আমাদের সহযোদ্ধারা। ব্যান্ডেরাবাদী চেচেনরা আসেনি।

আমাদের সঙ্গে পাহাড়ী যোদ্ধাদের অনেকে প্রবীণ। কেউ কেউ প্রথম চেচেন যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। সেবারে আমরা পরষ্পরের বিরুদ্ধে ছিলাম। এখন একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ব্যান্ডেরাবাদী নাজিদের বিরুদ্ধে লড়ছি। আমরা ও চেচেনরা উভয় পক্ষই ব্যান্ডেরাবাদীদের চরমভাবে ঘৃণা করি।

চাইলে এক ঘণ্টার মধ্যে ব্যান্ডেরাবাদীদের গোলা মেরে উড়িয়ে দিতে পারি। কিন্তু ওরা তো বেসামরিক মানুষজনের আড়ালে লুকিয়ে আছে। বেসামরিক লোকজনের সুবিধার্থে আমরা মানবিক করিডর খুলেছি। কিন্তু ব্যান্ডেরাবাদীরা মানুষকে এই সুযোগ নিতে দিচ্ছে না যদিও তারা পুরো দুনিয়ার কাছে চিৎকার করে বলছে, আমাদের কারণে নাকি মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.