শিশু সন্তানের সামনে মাকে গলাটিপে হত্যা, খুনি গ্রেপ্তার

চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে ভাড়া করা ঘরে আমেনা বেগম তার স্বামী মো. রাসেল ও তাদের একমাত্র সন্তান আমিরুল ইসলাম রাতুলসহ (২) বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু ২৫ মার্চ রাত ২টার দিকে অন্ধকার ঘরে রাতুলের ক্রমাগত কান্নার শব্দে পাশের বাসার লোকজন ছুটে যায়। এরপর তারা দেখেন, মা আমেনা বেগমের মৃতদেহের পাশে বসে কাঁদছে শিশুটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মো. রাসেল প্রায় ৩ বছর পূর্বে চট্টগ্রাম এলাকায় বসবাসকালে আমেনা বেগমের (২৫) সাথে তার পরিচয়ের সুবাদে উভয়ের সম্মতিতে বিয়ে হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে ২ বছর বয়সী একটি শিশু সন্তান রয়েছে। রাসেল  শহরে ভাড়া করা বাসায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে রিকশা চালাতো।

সম্প্রতি আয়-উপার্জন কমে যাওয়ায় সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ায় এবং নেশার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় রাসেল তার স্ত্রী আমেনা বেগমের নিকট যৌতুকের দাবি করতে থাকে। এ জন্য তাকে মারপিট করতো। বিষয়টি আমেনা বেগম তার বাবা মো. জামালের সাথে যোগাযোগ করে জানান৷ এরপর তারা চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড থানার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে বসবাস শুরু করে। রাসেলের শ্বশুর তাকে বার আউলিয়া জিরি সুবেদার রুলিং মিলে কাটারম্যান হিসেবে চাকরি নিয়ে দিলে সে চাকরি করতে থাকে।

এর আগে ২০১৮ সালে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার চন্দ্রা এলাকার রাশিদা বেগমের সাথে মো. রাসেলের প্রথম বিয়ে হয়। বিয়ের বিষয়টি আমেনা বেগমের নিকট না বলে রাশিদা বেগমের সাথে যোগাযোগ রাখে রাসেল। এসব কারণে নেশার টাকা ও বারংবার যৌতুকের দাবিতে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো রাসেল। ফলে তাদের  দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়।

এই কলহের জেরেই রাসেল শিশু সন্তানের সামনে তার মাকে গলাটিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশটি ঘরের ভিতর রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনা সংগঠিত হওয়ার সাথে সাথেই বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার পাশাপাশি সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ও নির্দেশনায় সিআইডির এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এ বিষয়ে মুক্তা ধর জানান, হত্যার ঘটনাটি পারিবারিক কোনো বিরোধের জেরে সংগঠিত হয়েছে, নাকি অবৈধ লাভের আশায় বাধাগ্রস্ত হয়ে হত্যা করা হয়েছে- ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর তার পরিবার, ঘটনাস্থল ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন উৎস হতে সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়।

পরবর্তীতে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সাথে তার স্বামী- মো. রাসেলের (৩০) সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। পরে আসামিকে এলআইসির একটি চৌকস টিম ময়মনসিংহের ভালুকা থানার সীড স্টোর হবিরবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে।