দুলছে পাকিস্তান, কে চালাবে রাষ্ট্র

বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটার ইমরান খান গতকাল রোববার যেভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন তাকে গুগলি বলাই যায়। অনাস্থা প্রস্তাবকে সংবিধানবিরোধী ঘোষণার পাশাপাশি পার্লামেন্টে ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাবে বিরোধী জোট হতভম্ব হয়ে যায়। তবে ইমরান খানের নিজেরও ছক্কা খাওয়ার জোগাড় হয়েছে। কারণ দেশটির ক্যাবিনেট জানিয়ে দিয়েছে, তিনি এখন থেকে আর প্রধানমন্ত্রী নন। ফলে নির্বাচন হলেও আগামী তিনমাস কীভাবে দেশটি পরিচালিত হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

ইমরান খান

আগেই ইমরান খান বলেছিলেন, কাপ্তানের পকেটে অনেক পরিকল্পনা থাকে। হয়তো সেটিরই একটি ব্যবহার করে রোববারের অনাস্থা ভোট ভেস্তে দিয়েছেন তিনি। অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়ায় আগামী তিন মাসের মধ্যেই ভোট হবে পাকিস্তানে। ধারণা করা হয়েছিল, কেয়ারটেকার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থাকতে পারবেন ইমরান খান।

কিন্তু সে সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেছে। পাকিস্তানের ক্যাবিনেট সচিবালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দিয়েছে, ইমরান খান এখন আর প্রধানমন্ত্রী নন। অতিরিক্ত সচিব ইজাজ এ দার স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট জাতীয় অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিয়েছেন। ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তানের সংবিধানের ৫৮(১) ধারা এবং ৪৮(১) ধারা অনুযায়ী ইমরান আহমেদ খান নিয়াজি আর নিজ পদে বহাল থাকতে পারবেন না। এখনই এই নীতি কার্যকর হচ্ছে। অর্থাৎ ইমরান দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।

পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট

এদিকে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি উমর আটা বান্দিয়াল জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টের নির্দেশে জাতীয় অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। বিষয়টির ভাগ্য নির্ভর করছে উচ্চ আদালতের রায়ের ওপর।

জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এই মামলা নিয়েছে। সবমিলিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় অ্যাসেম্বলির অবস্থান এখন দোদুল্যমান।

গত সপ্তাহেই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছিল পাকিস্তানের বিরোধীরা। তাদের দাবি, ৩৪২ সদস্যের পার্লামেন্টে ইমরান সরকারের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। অর্থাৎ দল ক্ষমতায় থাকার জন্য যে ১৭২ আসন প্রয়োজন, তা নেই ইমরানের দল পিটিআইয়ের।

কয়েকদফা মুলতবির পর গতকাল রোববার ছিল অনাস্থা ভোট হওয়ার চূড়ান্ত দিন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করার কথা ছিল স্পিকারের। কিন্তু তার ব্যাপারে আপত্তি তোলায় অধিবেশন পরিচালনা করতে আসেন ডেপুটি স্পিকার কাশিম সুরি। অধিবেশনের শুরুতেই সংবিধান ও আইনবিরোধী আখ্যা দিয়ে তিনি অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে দেন। পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের কাছে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিয়ে নির্বাচন ঘোষণার আহ্বান জানান ইমরান। অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট।

এদিকে বিরোধীরা নওয়াজ শরিফের ভাই শাহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছে। তবে ক্যাবিনেটের মতে, এখন দেশ চালাবেন আমলারা। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করেনি।

দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রের তকমা পাওয়া পাকিস্তানের ভাগ্যে কী আছে, তা জানতে আপাতত সুপ্রিম কোর্টের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে।