রাশিয়া-ইউরোপ কূটনৈতিক সম্পর্কে বড় ধরনের কাটছাঁট

রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে বড় ধরনের কাটছাঁট করছে ইউরোপ। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) রাশিয়ার স্থায়ী মিশনের ১৯ কর্মীকে ‘অবাঞ্চিত’ ঘোষণা করা হয়েছে। ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, স্লোভেনিয়া, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া, লাটভিয়া, রোমানিয়াসহ ইউরোপের এক ডজনের বেশি দেশ থেকে রাশিয়ার প্রায় তিনশ কূটনীতিককে বহিস্কার করা হয়েছে। কূটনীতিক বহিষ্কারের পাশাপাশি রুশ কনস্যুলেট বন্ধ করেছে লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়া। জবাবে রাশিয়া একই রকম পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। খবর রয়টার্স, তাস ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

রাশিয়া-ইউরোপ কূটনৈতিক সম্পর্কে বড় ধরনের কাটছাঁট

লাটভিয়া সরকার রিগায় রুশ দূতাবাসে নিযুক্ত ১৩ কুটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। পাশাপাশি দুগাভপলিস ও লিপাহা শহরে রাশিয়ার দুটি কনস্যুলেট এপ্রিল মাসের মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। লাটভিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিনা উসকানিতে রাশিয়ার অযৌক্তিক সামরিক আগ্রাসনের প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

একইভাবে, লাটভিয়ার প্রতিবেশী দেশ এস্তোনিয়া তালিনের রুশ দূতাবাসের ১৪ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে এবং তার্তু ও নারভা শহরে রাশিয়ার দুটি কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে এসব কনস্যুলেটের সব কর্মীকে ফিরে যেতে বলা হয়েছে।

রোমানিয়া সরকার রাশিয়ার ১০ কুটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। রোমানিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোমানিয়া কর্তৃপক্ষ বুখারেস্টে রুশ ফেডারেশনের দূতাবাসে কর্মরত ১০ ব্যক্তিকে রোমানিয়ার ভূখণ্ডে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছে। এসব ব্যক্তির কর্মকাণ্ড ও তৎপরতা কূটনেতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী। রোমানিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোগদান অরেস্কু রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যালেরি কুজমিনকে বিষয়টি অবহিত করেছেন।

ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাজনিত কারণে’ ৩০ জন রুশ কুটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। বার্লিন সফররত ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রী লুইগি দি মাইও বলেছেন, রোম এই ৩০ জন রুশ কূটনীতিককে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে চিহ্নিত করেছে।

স্পেন সরকার তাদের ভাষায় ‘স্পেনের স্বার্থের জন্য হুমকি’ হয়ে ওঠা ২৫ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করার কথা জানিয়েছে। স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে মানুয়েল আলবারেস বলেছেন, রুশ সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের পর বুচা শহরে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার যে অসহনীয় ছবি আমরা দেখতে পেয়েছি তা আমাদের ক্ষুদ্ধ করেছে।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেপপে কফোড ১৫ জন রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, এরা আমাদের ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ’। প্রতিবেশী সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘বেআইনিভাবে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম চালানোয়’ ৩ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।

এছাড়া স্লোভেনিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লুবিয়ানার রুশ দূতাবাসের ৩৩ জন কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। মঙ্গলবার একদিনে ইউরোপ থেকে বহিষ্কৃত রুশ কূটনীতিকের সংখ্যা ২০৫ থেকে ২১৫ জন হতে পারে বলে রেডিও ফ্রি ইউরোপ জানিয়েছে।

এর আগে ফ্রান্স সরকার সোমবার রাশিয়ার ৩৫ জন কূটনীতিককে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়। একইদিন জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালিনা বেয়ারবক ৪০ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানান। একইভাবে পোল্যান্ড ৪৫ জন ও স্লোভাকিয়া ৩৫ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। লিথুয়ানিয়া সরকার ভিলনিউসে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করেছে এবং মস্কোয় নিযুক্ত লিথুয়ানিয়ার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করেছে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, সব মিলিয়ে গত এক সপ্তাহে ইউরোপ থেকে বহিষ্কৃত রুশ কুটনীতিকের সংখ্যা ৩০০ ছাড়িয়েছে।

ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে দ্য টাইমস জানিয়েছে, ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো লন্ডন থেকে রুশ কূটনীতিক বহিষ্কারের কোনো পরিকল্পনা নেই। কেননা স্যালিসবারি বিষকাণ্ডের জের ধরে ২০১৮ সালে ২৩ জন রুশ কূটনীতিককে বহিষ্কারের পর লন্ডনে রাশিয়ার তেমন বেশি কূটনীতিক নেই। তবে ব্রিটেনের ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সোমবার আবারও লন্ডন থেকে রুশ রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কেলিনকে বহিষ্কারের দাবি জানান।

এদিকে কূটনৈতিক সম্পর্ক কাটছাঁটের পাশাপাশি বাল্টিক দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্ত-পারাপার বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। ইউক্রেনের অবকাঠামো-বিষয়ক উপমন্ত্রী মুস্তাফা নাঈম বলেছেন, লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, পোল্যান্ড ও লিথুয়ানিয়ার ভূখণ্ড হয়ে রাশিয়া ও বেলারুশ থেকে আসা এবং রাশিয়া ও বেলারুশগামী পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হবে। চারটি দেশের সরকার শিগগিরই এ সংক্রান্ত ঘোষণা দেবে। এর ফলে বাল্টিক উপকূলের রুশ ছিটমহল কালিনিনগ্রাদ ভীষণ সংকটে পড়বে বলে নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে দেওয়া পোস্টে জানান তিনি।