বিশেষজ্ঞ: রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হলে পাকিস্তানে অভ্যুত্থান ঘটতে পারে

প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার আগেই পার্লামেন্ট ভেঙ্গে দেওয়া নিয়ে অস্থিরতা চলছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গনে। দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হলে সেখানে 'অভ্যুত্থান' ঘটাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন একজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব শ্রীবাস্তব

বার্তা সংস্থা এএনআই এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলেছেন, 'আগামী দিনগুলোতে যদি আমরা পাকিস্তানে রাজনৈতিক বা সাংবিধানিক উত্থান বা অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি দেখতে পাই, তাহলে আরেকটি অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারি না।'

শ্রীবাস্তব বলেন, 'আমরা দেখেছি- যখনই পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিয়েছে বা অন্য কোন সমস্যা হয়েছে, তখনই পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং আইএসআই নিজেদেরকে জনগণের ত্রাণকর্তা হিসাবে দাঁড় কারানোর চেষ্টা চালিয়েছে।'

পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে শ্রীবাস্তব বলেন, 'পাকিস্তানের প্রকৃত শাসকরা (সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা) দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চান। এখন তারা পরোক্ষ নয় সরাসরি দেশ শাসনের কথা বিবেচনা করতে পারেন। যদি তাই হয়, তাহলে আমরা হয়তো পাকিস্তানে চতুর্থ অভ্যুত্থান দেখতে যাচ্ছি।'

তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- চলমান রাজনৈতিক টানাপড়েনের অংশীদার হবে না তারা। সেনাবাহিনীর ‘ইন্টার সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস’ (আইসিপিআর)-এর ডিরেক্টর মেজর জেনারেল বাবর ইফতিখার গত সোমবার বলেন, ‘স্পষ্ট ভাবে জানাচ্ছি, বর্তমান রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহে সেনাবাহিনীর কোনও ভূমিকা নেই’।

যদিও গুঞ্জন তাতে থামছে না। ঘটনাচক্রে, ইমরান খান সেনাপ্রধান পদে কামার জাভেদ বাজওয়ার মেয়াদ দ্বিতীয় বার বাড়াতে রাজি না হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ার পরই তার বিরুদ্ধে বিরোধী জোটের তৎপরতা বেড়েছে।

গত দুসপ্তাহে যেভাবে একের পর এক সহযোগী দল ইমরান খানের ‘পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ’ (পিটিআই)-এর সঙ্গ ছেড়েছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ‘ভূমিকা’ ছাড়া তা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সঞ্জীব শ্রীবাস্তব।

এর আগে, ২০১৮ সালে পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের সময় ইমরান খানের দলকে সমর্থন দিয়েছিলো পাকিস্তান সেনাবাহিনী। তা নিয়ে সে সময় পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এন), পাকিস্তান পিপলস পার্টির মতো দলগুলো প্রকাশ্যে অভিযোগও জানিয়েছিল।

২০১৬ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন জেনারেল বাজওয়া। ২০১৯-এর আগস্টে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তিন বছরের জন্য সেনাপ্রধান পদে তার মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। আগামী নভেম্বরে সেই সময়সীমা শেষ হচ্ছে। কিন্তু ইমরান খান এবার আর তার মেয়াদ বাড়াবেন না বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। অবশ্য গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর ডিজি পদে নিয়োগ ঘিরে মতবিরোধের জেরে বাজওয়ার মেয়াদ দ্বিতীয় বার না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ইমরান।

প্রধানমন্ত্রী ইমরানের সুপারিশে ২০১৮-র জুনে আইএসআই-এর ডিজি পদে লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফয়েজ হামিদকে নিয়োগ দিয়েছিলেন জেনারেল বাজওয়া। গত নভেম্বরে তিনি হামিদকে সরিয়ে আইএসআই-এর দায়িত্ব দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল নাদিম আহমেদ অঞ্জুমকে। যদিও ইমরান চেয়েছিলেন হামিদকে বহাল রাখতে। পরে একটি সাক্ষাৎকারে আইএসআই প্রধান নিয়োগ নিয়ে বাজওয়ার সঙ্গে তার মতবিরোধের কথা স্বীকারও করেছিলেন ইমরান খান।