অনিশ্চিত যাত্রায় পাকিস্তান, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত সেনাবাহিনীর হাতে!

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে জাতীয় সংসদ ও সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করে ডেপুটি স্পিকারের দেওয়া রুলিং এবং রাষ্ট্রপতির পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করা হয়।

ইমরান খান ও কামার জাভেদ বাজওয়া, ফাইল ছবি

সেইসঙ্গে পার্লামেন্ট পুনর্বহাল করে আগামীকাল শনিবার বিশেষ অধিবেশন ডেকে অনাস্থা প্রস্তাব সুরাহা করার নির্দেশ দেন পাক সুপ্রিম কোর্ট। তার আগেই ইমরান খান পদত্যাগ করতে পারেন বলে খবর বেরিয়েছে। যদিও নাটকীয়তার মধ্যে গতরাতে তিনি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, আজ মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন তিনি।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ২০১৮ সালে ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ, পিটিআইয়ের জয়ের পর থেকেই বিরোধিতা শুরু হয়। তখন অভিযোগ ওঠে, সেনাবাহিনী প্রভাব খাটিয়ে অন্য দলগুলোর সমর্থনে জোড়াতালির সরকার গঠনে তাকে সহায়তা করেছে। তবে গতবছর থেকে সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে ইমরানের সরকারের দূরত্ব দেখা দেয়।

পাকিস্তানের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি, ফাইল ছবি

গত তিন বছরে বিরোধী নেতাদের কারাগারে বন্দী করা, আদালতে ব্যস্ত থাকা এবং দুর্নীতির অভিযোগ সামলাতে হয়। এখন বিরোধীরা ইমরান সরকারের পতন ঘটাতে একজোট হয়ে মাঠে নেমেছে। এ ক্ষেত্রে তারা সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বমহলের কিছুটা সহানুভূতি জুটেছে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকরা।

সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে ইমরান খান যখন প্রকাশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন, তখন মার্কিনিদের ‘ঘনিষ্ঠ মিত্র’ হিসেবে আলোচনায় সেনাপ্রধান। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরিয়ে নেওয়ার পর পাকিস্তানে তাদের সামরিক ঘাঁটি গুটিয়ে দেওয়ার দাবি করেন ইমরান। পাশাপাশি চীন ও রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্ব বাড়ানোর উদ্যোগ নেন তিনি।

পার্সটুডে বলছে, এসব কারণে অসন্তুষ্ট হওয়ায় ইমরানকে শায়েস্তা করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি ইমরান খানের বক্তব্যেও পরিষ্কার হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় পাকিস্তানের অনেক কিছুই নির্ভর করছে দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনীর ভূমিকার ওপর। দেশটিতে রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘায়িত হলে, অর্থনৈতিক সংকট আরো তীব্র হলে অতীতের মতো ফের ক্ষমতা দখল করতে পারে সেনাবাহিনী।

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশ দখলদারদের হাত থেকে ১৯৪৭ সালে মুক্ত হয় পাকিস্তান। দেশটির ৭৫ বছরের মধ্যে ৩৪ বছরই চলেছে সেনা শাসন। এর মধ্যে ১৯৫৮-৬৯ সাল ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান, ১৯৬৯-৭১ সাল জেনারেল ইয়াহিয়া খান, ১৯৭৭-৮৮ সাল জেনারেল মুহাম্মদ জিয়াউল হক এবং ২০০১-২০০৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন জেনারেল পারভেজ মোশাররফ।