আপনি পড়ছেন

তোপের মুখে অবশেষে ব্রিটেনে কর পরিশোধে রাজি হলেন ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকের ভারতীয় স্ত্রী অক্ষত মুর্তি। এতদিন ‘নন-ডমিসাইল’ স্ট্যাটাসের অজুহাত দেখিয়ে ব্রিটেনে কর পরিশোধ করেননি তিনি। এ নিয়ে বিরোধী দলগুলোর বিক্ষোভের মধ্যে অর্থমন্ত্রী সুনাক স্বীকার করতে বাধ্য হলেন, তিনি নিজেও ‘পার্মানেন্ট ইউএস রেসিডেন্ট’ পরিচয় দেখিয়ে এতদিন কর দেননি।

sunak wifeঋষি সুনাক ও অক্ষত মুর্তি

ভারতীয় বিলিওনিয়ার, ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতা টি আর নারায়ণমূর্তির মেয়ে অক্ষতা মুর্তি থাকেন লন্ডনে। উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া সম্পদ, শেয়ার ও নিজের বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা, লভ্যাংশ মিলিয়ে কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড আয় তার। কিন্তু এর বিপরীতে এতদিন ব্রিটেনে কোনো কর দেননি তিনি।

কর ফাঁকি নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে গতকাল শুক্রবার রাতে অক্ষতা মুর্তি বলেছেন, তিনি বুঝতে পেরেছেন যে তার কর-ব্যবস্থাপনা অর্থমন্ত্রী হিসেবে তার স্বামীর চাকরির সঙ্গে সমাঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ব্রিটেনের মানুষের ‘এমন সততার বোধকে সাধুবাদ জানান’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ব্রিটেনে ও সারাবিশ্বে নিজের আয়ের ওপর কর পরিশোধ করবেন। গত বছরের আয়করও পরিশোধ করবেন। কিন্তু তার আগের বছরগুলোর কোনো কর দিবেন না।

অক্ষতা মূর্তির কর ফাঁকির বিষয়টি সম্প্রতি সবার নজরে আসে তার স্বামী ঋষি সুনাকের কল্যাণে। ব্রিটেনের কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাক ১৯ মাস ধরে ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। গত বুধবার তিনি ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কন্ট্রিবিউশন ১ দশমিক ২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছেন।

সামাজিক নিরাপত্তাসহ বেশকিছু সুবিধা পাবার আবশ্যকীয় শর্ত হিসেবে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কন্ট্রিবিউশন থাকতে হয়। রাষ্ট্রীয় এ তহবিলে অর্থ দিতে হয় মূলতঃ কর্মজীবী মানুষদের। কেননা সামাজিক নিরাপত্তা তাদেরই সবচেয়ে বেশি দরকার। হঠাৎ বেকার হলে, অর্থাভাবে পড়লে, অবসর জীবনে গেলে সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার দ্বারস্থ হতে হয়।

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ছেড়ে বেরিয়ে আসার কারণে ব্রিটেনের অর্থনীতির দুরবস্থা চলছে কয়েক বছর ধরে। মানুষ কর্মসংস্থান হারাচ্ছে, আয় কমছে। এরইমধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাড়িয়ে দিয়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এ পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কন্ট্রিবিউশন বৃদ্ধির তীব্র প্রতিবাদ জানান ব্রিটেনের বিরোধী দলীয় রাজনীতিকরা।

এ নিয়ে পার্লামেন্টের ভেতরে-বাইরে বক্তৃতা-বিক্ষোভের মধ্যে খবর বেরোয় যে, ধনী নন-ডমিসাইল বিনিয়োগকারীদের কর কমিয়ে গত সপ্তাহে নতুন একটি কর কাঠামো প্রণয়ন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কন্ট্রিবিউশন বৃদ্ধির কয়েকদিন আগে এটা করা হয়।

গরিবের ওপর করের বোঝা বাড়িয়ে ধনীদের সুবিধা দেওয়ার খবর প্রকাশের পর আরও উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। লেবার ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির এমপিরা অভিযোগ করেন, নিজেদের পৃষ্ঠপোষক ও ঘনিষ্টজনদের সুবিধা দিতে কনজারভেটিভ সরকার এ আইন করেছে।

অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাকের নন-ডমিসাইল স্ত্রী কর পরিশোধ করেন কি না, সে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। জবাবে ঋষি সুনাক স্বীকার করেন, ভারত যেহেতু দ্বৈত-নাগরিকত্ব স্বীকার করে না, তাই তার স্ত্রী ব্রিটেনে নন-ডমিসাইল এবং এ কারণে তিনি কর পরিশোধ করেন না। অক্ষতা মুর্তি একসময় ব্রিটেন থেকে ভারতে ফিরে যাবেন বলেও জানান।

জনগণের ওপর করের বোঝা চাপাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী, কিন্তু তার স্ত্রী কর পরিশোধ করছেন না। বিষয়টি নিয়ে হইচই শুরু হলে খোদ অর্থমন্ত্রীর কর পরিস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন আসতে থাকে। গণমাধ্যমও আগ্রহী হয়ে ওঠে। জানা যায়, অর্থমন্ত্রী নিজেই যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ড দেখিয়ে ব্রিটেনে কর পরিশোধ করেন না।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা ছিল না। শেষপর্যন্ত গতকাল শুক্রবার ঋষি সুনাক নিজেই স্বীকার করেছেন, তার একটি মার্কিন গ্রিনকার্ড রয়েছে। অর্থাৎ, ৬ বছর ধরে এমপি এবং ১৯ মাস ধরে অর্থমন্ত্রী থাকাবস্থায় তিনি ট্যাক্স পেপারে নিজেকে ‘যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী অধিবাসী’ হিসেবে দেখিয়ে কর ফাঁকি দিয়েছেন।

ঋষি সুনাককে কেউ কেউ কনজারভেটিভ পার্টিতে বরিস জনসনের উত্তরসূরী ভাবছিলেন। কিন্তু ব্রিটেনে থেকে রাজনীতি করে সবরকম সুবিধা নিয়ে সুনাক দম্পতির একজন যুক্তরাষ্ট্র, আরেকজন ভারতকে দেখিয়ে যেভাবে কর ফাঁকি ও গুরুতর অসততা প্রদর্শন করেছেন তাতে তার রাজনৈতিক ভবিষ্যত কিছু অবশিষ্ট থাকবে বলে মনে হয় না।

অবশেষে অক্ষতা মুর্তি ঋষি সুনাকের রাজনৈতিক ভবিষ্যত রক্ষায় কর পরিশোধের ঘোষণা দিলেও শেষ রক্ষা হবে বলে মনে হয় না। এরইমধ্যে অভিযোগ উঠেছে, বিগত বছরগুলোর কর দিতে অস্বীকার করে তিনি ব্রিটেনে অন্তত ২ কোটি পাউন্ড কর ফাঁকি দিচ্ছেন।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.