আপনি পড়ছেন

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির উদ্দেশে ইমরান খানের দেওয়া শেষ ভাষণ টোয়েন্টিফোর লাইভ নিউজপেপারের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল- আমি প্রথম থেকেই চাইতাম, সবাই এই বিষয়টি জানুক, আসলে কি হয়েছে- ঘটনা অনেকটা এরকম- আমেরিকার ভেতর আমাদের রাষ্ট্রদূত আছেন। ওনার সঙ্গে আমেরিকার প্রশাসনের আলাপ হয়েছে। সেই আলাপের কিছুটা বলছি। আসলে আমেরিকা কি বলেছিল। তারা বলেছে, ইমরান খানের রাশিয়া সফরে যাওয়া উচিত হয়নি।

imran khan historic speechইমরান খান, সাম্প্রতিক ছবি

ইমরান খান যদি ভোটাভুটি থেকে বেঁচে যায়, তাহলে পাকিস্তানকে বড় ধরনের সমস্যার মুখে পড়তে হবে। তাদের পরিকল্পনা কেমন দেখুন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী যদি না সরে যায় তাহলে পাকিস্তান নাকি সমস্যায় পড়বে। আবার পাশাপাশি এটাও তারা বলেছে, যদি ইমরান খান হেরে যায় তাহলে পাকিস্তানকে মাফ করে দেওয়া হবে।

এর মানে পাকিস্তানের ক্ষমতায় কে আসল তা বড় কথা নয়, ইমরান খানকে হটাতেই হবে। আর ইমরান সরে গেলেই তাদের পরিকল্পনা সাকসেস। ২২ কোটি মানুষের জন্য এটা কত বড় কষ্টের যে, একটি বিদেশি শক্তি হুকুম দিচ্ছে পাকিস্তানকে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দিতে হবে। তাও আবার আর্মিকে হুকুম দিচ্ছে। এরপর আবার বলছে, ইমরান খান সরে গেলে আপনাদের মাফ করে দেব।

পাকিস্তানি মানুষের কাছে আমাদের প্রশ্ন- যদি এইভাবে আমাদের গোলামি করতে হয়, তাহলে আমরা স্বাধীন হয়েছি কেন? পাকিস্তানের মানুষের কাছে আমার প্রশ্ন- কেমন পাকিস্তান আমরা চাই? স্বাধীন-সার্বভৌম পাকিস্তান নাকি এরকম গোলামির পাকিস্তান?

আমরা কেমন গোলাম শুনুন, যে ব্যক্তি পাকিস্তানকে নিয়ে বলেছে ‘ভিক্ষুকদের পছন্দ করার অধিকার নেই’, সেই শাহবাজ শরিফ হবে প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের ঋণ বেশি হয়ে গেছে, পাকিস্তান এখন ভিক্ষুক। তাই ভিক্ষুক কখনও পছন্দ করার অধিকার রাখে না, এমনটাই শাহবাজ শরিফের বক্তব্য ছিল।

অপরদিকে, আরেক মন্ত্রী বলেন, আমরা তো লাইফ সাপোর্টে আছি। আমেরিকা যখন চাইবে লাইফ সাপোর্ট বন্ধ করে দিতে পারে। কারণ পাকিস্তান তো সত্যিকারের গোলাম। এই জায়গায় আমার প্রশ্ন- গত ৩০ বছর ধরে নওয়াজ শরিফ এবং ভুট্টো পরিবার ক্ষমতায় ছিল, দেশের এই অবস্থা তাহলে কে করল?

তিন বছরের ক্ষমতাকালে এমনটা তো হয়নি। দেশের ওপর ঋণের বোঝা, তাই নাকি গোলামি করতে হবে- এমনটাই তাদের বক্তব্য। তাহলে ইমরান খানকে সরাতে হবে কেন? আমার দোষ কি? আমার দোষ হল পাকিস্তানের ভেতর ড্রোন হামলা বন্ধ করতে বলেছি। আমি ইরাক যুদ্ধের বিপক্ষে ছিলাম, আফগানিস্তানে আমেরিকার হামলার বিপক্ষে ছিলাম।

‘ভিক্ষুকদের পছন্দ করার অধিকার নেই’ নওয়াজ শরিফ ও ভুট্টো পরিবার এখন যা বলছে, যখন পাকিস্তানের ভেতর ৪০০ ড্রোন হামলা করল আমেরিকা তখন তারা চুপ ছিল। আমি তখন প্রতিবাদ করেছি, পাকিস্তানের ভেতর আমেরিকা ড্রোন হামলা চালাতে পারে না। আমেরিকা ভাল করেই জানে, ইমরান খান তার হাতের পুতুল হবে না। আর এজন্যই কিন্তু ইমরান খানকে তারা সরাতে চাইছে। আর এসব নাটক হচ্ছে শুধু এক ইমরান খানকে সরানোর জন্য।

পাকিস্তানে আমেরিকা ৪০০ ড্রোন হামলা করেছে, এতে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এ ব্যাপারে পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রী কখনও প্রতিবাদ করেনি। ৪ হাজার মাইল দূর থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, পাকিস্তানের ওপর বোমা হামলা করা হবে।

আমাদের একটাই কথা যে, কারও সঙ্গে আমাদের শত্রুতা বা যুদ্ধাবস্থা নেই। ২২ কোটি পাকিস্তানির স্বার্থের জন্য যা করলে ভাল হবে, তাই আমি করব। এরপর বাকিদের স্বার্থ দেখব। কিন্তু কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমি আমার নিজের দেশের মানুষকে অন্য দেশের জন্য কোরবানি করতে পারব না।

আমি আপনাদের বলছি, হাড্ডিস্থানে শুধু হাড্ডির মতো ডলারের জন্য পাকিস্তানের সরকারগুলো যুদ্ধে পাকিস্তানকে ঠেলে দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানকে পাকিস্তান সহযোগিতা করেছিল আমেরিকার হাড্ডির জন্য, যদি এমনটা না করে আমরা সাধারণভাবে করতাম, তাহলে কিন্তু ইজ্জত পেতাম। এ কারণেই সোভিয়েত ইউনিয়ন চলে যাওয়ার দুবছরের মধ্যেই পাকিস্তানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

হাড্ডির বিনিময়ে আমেরিকা আফগানিস্তানে পাকিস্তানকে কাজে লাগিয়েছে। তাও এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, পাকিস্তানে ৫০ লাখ শরণার্থী ঢুকে পড়ার পর। অন্যদিকে, আমেরিকার কাছ থেকে ডলার খেয়ে তালেবানদের বিরুদ্ধেও লড়াই করেছে পাকিস্তান। তাহলে আমাদের চরিত্রটা কি?

২২ কোটি মানুষের পাকিস্তানে দারিদ্র্য তখনই নির্মূল করতে পারব, যখন আমরা শান্তিপূর্ণভাবে থাকব, কারও সাথে যুদ্ধে না জড়াবো। শান্তি তখনই আসবে যখন অন্য কোনো দেশের ঘাঁটি এদেশে থাকবে না। এজন্যই আমেরিকার এমন প্রধানমন্ত্রী পছন্দ, যিনি বলবে ভিক্ষুকদের পছন্দ করার অধিকার নেই।

যারা হাড্ডির জন্য কামড়াকামড়ি করবে আমেরিকা তাদেরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বানাবে। এক্ষেত্রে আমি পাকিস্তানের যুবকদের বলতে চাই যে, পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব এখন আপনাদের হাতে। বিদেশি কোনো শক্তি বা পক্ষ কখনই একটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে পারে না, তা রক্ষা করতে হয় নিজেদেরই।

আজকে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে যদি এগিয়ে না আসেন, তাহলে সামনে যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক তাদের চিন্তায় থাকবে আমেরিকার কথা মানতে হবে, নয়তো ক্ষমতা থাকবে না। ‘ভিক্ষুকের কোনো পছন্দ নেই’ এ ধরনের চিন্তার লোকদেরই কিন্তু আমেরিকা ক্ষমতায় বসাবে।

ইমরান খান আমেরিকার বিরোধী নয়। তবে আমার প্রশ্ন- পাকিস্তান কি টিস্যু পেপার যে, আমেরিকা ব্যবহার করবে আর ফেলে দেবে? একতরফা সম্পর্ক আমেরিকার সাথে আমি কখনও চাই না, আমি এমন সম্পর্ক চাই যে, দুপক্ষেরই লাভ হবে। আমি বিদেশি শক্তির সরকার কখনও মানবো না। আমি জনগণের কাছে যাব।

আমার বাবা কিংবা পরিবার কেউ কখনও রাজনীতিতে ছিল না, অমি যতদূর এসেছি জনগণের কাছ থেকে এসেছি। আমার দল ছোট ছিল বলে ১৪ বছর মানুষ মশকরা করেছে। তবে আস্তে আস্তে আল্লাহর রহমতে আমি আজকে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হতে পেরেছি মানুষের ভালবাসায়।

ভারতে যেসব মুসলমান আজ নির্যাতিত হচ্ছে, তারাও কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য ভোট দিয়েছিল। তারা আশা করেছিল, পাকিস্তান একটি ভাল রাষ্ট্র হবে। তারা এজন্য ভোট দেয়নি যে, পাকিস্তান আমেরিকার হাড্ডিখোর কিংবা গোলাম হবে।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.