কাবা শরীফের সেই কালো কাপড়ের গল্প
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কাবা শরীফের কথা ভাবতেই কালো কাপড়ে ঢাকা প্রায়-বর্গাকার একটি কাঠামোর কথা সবার মনে আসে। কালো এই কাপড় ছাড়া কাবা ঘরের কথা যেন ভাবাই যায় না। কাবার এই আচ্ছাদন কিন্তু সব সময় কালো ছিল না। নবম হিজরিতে মক্কা বিজয়ের পর মহানবী (স.) কাবার গায়ে প্রথম যে কাপড় দেন, সেটা ছিল লাল ও সাদা রঙের। ইসলামী যুগে সেটাই কাবার প্রথম আচ্ছাদন। তবে ঐতিহাসিক এ স্থাপনার গায়ে কাপড় পরানোর রেওয়াজ আরও আগে থেকেই।
কাবা শরীফের সেই কালো কাপড়ের গল্প
মহানবী (স.) এর দাদা হজরত আবদুল মুত্তালিবের আমলে বাদশাহ আবরাহা কাবা গৃহ ধ্বংস করতে এসে নিজেই তার বাহিনীসহ ধ্বংস হয়েছিলেন। ক্ষুদে আবাবিল পাখির ঝাঁক আকাশ থেকে ছোট ছোট পাথর ছুঁড়ে বলদর্পী বাদশাহর এলিফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টকে (হস্তী-আরোহী বাহিনী বা আসহাবিল ফিল) কিভাবে ধ্বংস করেছিল, সে কাহিনী পবিত্র কুরআনের সুরা ফিল-এ বর্ণিত হয়েছে। কুরআনের এ আখ্যান থেকে বুঝা যাচ্ছে, ইসলামের আবির্ভাবের আগেও কাবা ছিল আরাধ্য, প্রার্থনা ও তীর্থের জায়গা। প্রাচীন আরব বা হিজাজের গর্ব ছিল কাবা। অভিশপ্ত বাদশাহর ক্ষোভ, ঈর্ষার এটাও হয়তো একটা কারণ ছিল।
কাবা শরীফের আচ্ছাদনকে বলা কিশওয়া। প্রাচীন কাল থেকেই সাধারণ দূর-দূরান্তের সম্রাট-রাজন্যরা কাবায় তীর্থে যেতেন। প্রার্থনা ও সম্মানের প্রকাশ হিসেবে এ সময় তারা কিশওয়া পরাতেন। কাবার প্রতি সম্মান তো বটেই, যিনি কিশওয়া পরানোর সুযোগ পাচ্ছেন, তারও তো সম্মানের বিষয়। যতদূর জানা যায়, প্রাচীন ইয়েমেনের বাদশাহ তুব্বা আল-হুমাইরি মক্কা সফর করেন ও যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক কাবায় প্রবেশ করেন।
কাবা শরীফ
ঐতিহাসিকদের মতে, বাদশাহ তুব্বা আল-হুমাইরি কাবায় প্রার্থনার পাশাপাশি খাসফ নামের এক ধরনের পুরু কাপড়ের আচ্ছাদন পরিয়ে দেন। এরপর তিনি পরান মাফির কাপড়, যা সেকালের ইয়েমেনের মাফির শহরে তৈরি হতো। তারপর দেওয়া হয় রাবিতাহ নামের পাতলা, মোলায়েম কাপড়। এর উপরে দেওয়া হয় লাল ডোরাকাটা ওয়াসেল কাপড়।
পরবর্তী বছরগুলোতে আল-হুমাইরির উত্তরসূরীরা চামড়া ও কুবাতি কাপড়ের আচ্ছাদন পরাতেন। প্রাক-ইসলামী যুগে অন্যান্য নৃপতিরাও কাবার গায়ে কিশওয়া পরাতে যেতেন। তারা এটাকে প্রার্থনা ও নিজের জন্য বিরাট সম্মানের বিষয় হিসেবে বিবেচনা করতেন।
কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, গোড়ার দিকে কাবার গায়ে পরানো কিশওয়া হতো বহুস্তর বিশিষ্ট। পুরোনো অথবা বিবর্ণ হলে উপরের স্তর সরিয়ে দেওয়া হতো, না হয় নতুন কাপড় পরানো হতো।
কারো কারো মতে, মক্কা বিজয়ের পর মহানবী (স.) কাবার গায়ে আগে থেকে পৌত্তলিকতাবাদী শাসকদের পরানো কিশওয়া রেখে দিয়েছিলেন। কাবায় প্রার্থনা করতে যাওয়া এক নারী আগরবাতি দিয়ে সুগন্ধি ছড়াতে গিয়ে কিশওয়া পুড়ে ফেললে নবীজী (স.) সেটা পাল্টে লাল-সাদা ডোরাকাটা ইয়েমেনি কাপড় পরিয়ে দেন। এটা ছিল বিদায় হজ্বের মৌসুমে জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখের ঘটনা।
নবীজীর (স.) ওফাতের পর হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) ও হজরত উসমান বিন আফফান (রা.) সাদা রংয়ের কিশওয়ার পরাতেন। খলিফা ইবনুল জুবায়র পরিয়েছিলেন লাল রংয়ের বুটিদার রেশমি কাপড়। আব্বাসীয় খলিফা আল-নাসির প্রথমে সবুজ রংয়ের জরিওয়ালা কিশওয়া পরান। পরে তিনি সেটা পাল্টে পরান কালো রংয়ের বুটিদার রেশমি কিশওয়া। এখনও সে প্রথাই বহাল আছে।
সেন্টার অব মক্কা হিস্ট্রির পরিচালক ডক্টর ফাওয়াজ আল-দাহাস বলেন, কাবা কখনো সাদা, কখনো লাল, আবার কখনো কালো রংয়ে আচ্ছাদিত ছিল। রং নির্বাচনের বিষয়টি বিভিন্ন সময়ের আর্থিক অবস্থা ও সামর্থ্যরে উপর নির্ভর করত। মিশর থেকে কুবাতি কাপড় আনা হতো, যা ছিল সে সময়ের সর্বোৎকৃষ্ট কাপড়। ইয়েমেনের কাপড়গুলোও ছিল সবচেয়ে বিখ্যাত।
তিনি আরও বলেন, খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে এবং পরবর্তীতে উমাইয়া ও আব্বাসীয় খলিফাদের আমলে কিশওয়া পাল্টানো হতো সেরা কাপড়ের প্রাপ্তির উপর নির্ভর করে। সমকালের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট কাপড় পাওয়া গেলেই কিশওয়া পাল্টানো হতো। প্রথমে সাদা রংয়ের কিশওয়া পরানো হতে। কারণ সাদা হচ্ছে সবচেয়ে উজ্জ্বল রং। কিন্তু দেখা যায় সাদা রং সহজেই বিবর্ণ হয়। হাজী সাহেবানদের ও দর্শণার্থীদের হাতের ছোঁয়ায় ময়লা হয়। এ কারণে সাদার পরিবর্তে লাল রংয়ের কিশওয়ার রেওয়াজ চালু হয়। শেষপর্যন্ত আব্বাসীয় খলিফাদের আমলে কালো রং বেছে নেওয়া হয়, কারণ কালো রং লাখ লাখ মানুষের স্পর্শের চাপ নিতে পারে।
আরব নিউজ থেকে সংক্ষেপিত
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.