বিতর্কিত কর্মকর্তাকে মুখ্য সচিব নিয়োগ করলেন শাহবাজ

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব পদে রাওয়ালপিন্ডি রিং রোড প্রকল্পে দুর্নীতির প্রধান সন্দেহভাজন সৈয়দ তৌকির শাহকে নিয়োগ দিয়েছেন শাহবাজ শরীফ। প্রধানমন্ত্রী পদে শাহবাজ শরীফের শপথ গ্রহণের পরপর এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। খবর পাকিস্তান টুডে।

বিতর্কিত কর্মকর্তাকে মুখ্য সচিব নিয়োগ করলেন শাহবাজ

পাকিস্তানের কেবিনেট সচিবালয় থেকে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বর্তমানে সংস্থাপন বিভাগে সংযুক্ত পাকিস্তান প্রশাসনিক সার্ভিসের ২১ গ্রেডের কর্মকর্তা ডক্টর সৈয়দ তৌকির শাহকে বদলিপূর্বক পাকিস্তান সিভিল সার্ভেন্টস অ্যাক্ট-এর ১০ ধারা মোতাবেক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নিয়োগ করা হয়েছে।

শাহবাজ শরীফ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে তৌকির শাহ মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব পদে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের একাধিক অভিযোগে মামলা ও তদন্ত চলমান রয়েছে।

রাওয়ালপিন্ডি রিং রোড প্রকল্পে দুর্নীতি নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির তৎকালীন কমিশনার সৈয়দ গুলজার হুসাইন তার ২০২১ সালের মে মাসে প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে সৈয়দ তৌকির শাহর নাম উল্লেখ করে লেখেন, পাসওয়াল জিগজ্যাগ বরাবর আর-থ্রি অ্যালাইনমেন্টের নকশা পাল্টে ফেলা হয়েছে যাতে তৌকির শাহ ও তার পরিবারের সদস্যরা লাভবান হন।

এছাড়া ২০১৪ সালে লাহোর মডেল টাউনে নির্বিচার হত্যার ঘটনায় তৌকির শাহর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। সে বছর মডেল টাউন এলাকায় পুলিশের নির্বিচার গুলিতে পাকিস্তান আওয়ামী তেহরিক দলের ১৪ কর্মী মারা যান ও শতাধিক আহত হন। পাকিস্তানের বিচার বিভাগীয় তদন্তে এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনে এ ঘটনায় পুলিশের অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক বলপ্রয়োগকে দায়ী করা হয়েছে।

লাহোর মডেল টাউন ম্যাসাকার বলে পরিচিত এ ঘটনার পর জনরোষের মুখে তৌকির শাহকে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেন শাহবাজ শরীফ। পরবর্তীতে তাকে দেশ থেকে সরিয়ে জেনেভায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় পাকিস্তানি মিশনে সংযুক্ত করেন নওয়াজ শরীফ।

ডন জানিয়েছে, পাকিস্তানের অবকাঠামো খাতের প্রকল্পগুলোতে দৃশ্যমান দুর্নীতির অন্যতম বড় ঘটনা রাওয়ালপিন্ডি রিং রোড প্রকল্প। ছয় লেনের এ রিং রোড প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ থেকে নকশা পরিবর্তনসহ পদে পদে লুটপাট ও তহবিল তছরুপের অভিযোগ রয়েছে। তুলনামুলক অগ্রসর এলাকা পিন্ডির তুলনায় বহুগুণ বেশি দামে অধিগ্রহণ করা হয়েছে আটক এলাকার জমি। এভাবে প্রকল্পটির ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় ৬০০ কোটি রুপি থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৬০০ কোটি রুপি করা হয়।

এছাড়া ক্ষমতাধরদের ব্যক্তিগত বাড়ি ও তাদের অনুগ্রহভাজনদের হাউজিং সোসাইটিগুলোকে রিং রোডের মধ্যে আনতে বারবার নকশা পাল্টে রিং রোডের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে ২২ কিলোমিটার থেকে ৬৮ কিলোমিটার করা হয়েছে। এতে করে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেছে আড়াই হাজার কোটি রুপি। রিং রোড প্রকল্পে দুর্নীতির ঘটনায় শাহবাজ শরীফ, তৌকির শাহ ও তাদের বেশ কয়েকজন সহযোগীয় বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জাতীয় জবাবদিহিতার ব্যুরোর (এনএবি) মামলা চলমান রয়েছে।

এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন পাকিস্তানের গ্রেড-২২ কর্মকর্তা আজম খান। তাকে বর্তমানে ওএসডি করা হয়েছে। আজম খানসহ ইমরান খানের ঘনিষ্ট কমপক্ষে ৬ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।