রাম নবমীকাণ্ড: বাড়িঘর-দোকান গুঁড়িয়ে দিল সরকারের বুলডোজার

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উৎসব রাম নবমী উদযাপনকে কেন্দ্র করে ভারতের অন্তত ৩টি রাজ্যে হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটে। ঝাড়খণ্ড, গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে হিন্দু-মুসলিম-পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এসব সংঘাতে অন্তত একজন নিহত এবং পুলিশসহ বেশ কিছু লোক আহত হন।

বুলডোজার দিয়ে বাড়ি ও দোকানপাট ভাঙার চিত্র

ডয়চে ভেলে জানায়, বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশের কয়েকটি জেলায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দুদের সংঘর্ষ হয়। এর মধ্যে খারগাঁওয়ে পাথর মারার অভিযোগ উঠা মুসলিমদের বাড়িঘর ও দোকান বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। গত সোমবার ৫০টি জায়গায় এই অভিযান চালানো হয় বলে জানিয়েছেন ডিভিশনাল কমিশনার পবন শর্মা।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য কুইন্ট জানিয়েছে, মধ্যপ্রদেশের খারগাঁওয়ে ‘সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের’ একদিন পর জেলা প্রশাসন ১৬টি বাড়ি এবং ২৯টি দোকান গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যদের মালিকানাধীন। তারা ‘সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে’ জড়িত ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

যদিও সরকার যুক্তি দেখিয়েছে যে, অবৈধ জমিতে এসব বাড়ি-দোকান তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলো ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার এবং গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ৪ জন সরকারিকর্মীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে কাদের বাড়ি-দোকান ভাঙা হলো, কারা গ্রেপ্তার হলো এবং কারা সাসপেন্ড হলো, তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট একটি স্কিনশট

এর আগে ঘটনার পর রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র বলেছিলেন, হিন্দুদের ওপর হামলা এবং বাড়িতে আগুন দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হবে। এখন সেই পথেই হেঁটেছে প্রশাসন। খারগাঁওয়ের পাশাপাশি বারয়ানিতেও একই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

এদিকে, মধ্যপ্রদেশের এমন কাণ্ডে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রের বিরোধী দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি ও বেকারত্বে মানুষের জীবন নারকীয় হয়ে পড়েছে। সেই সমস্যা ওপর বুলডোজার চালানো উচিত সরকারের। তা না করে বুলডোজার দিয়ে ঘৃণা ও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে তারা।

বাড়ি-দোকান গুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছেন মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি কমলনাথ। এই কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরি করবে।

এ ছাড়া সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন বা এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেন, রাজ্য সরকার বেআইনি কাজ করেছে, যা যথেচ্ছাচার। আর জমিয়তে উলেমা-ই-হিন্দ বলেছে, সংখ্যালঘু মুসলিমদের হয়রানি করছে বিজেপি সরকার। সিপিএমও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মুখে কুলুপ আঁটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এনডিটিভি জানায়, রাম নবমীর মিছিল উপলক্ষে মধ্যপ্রদেশের খারগাঁও শহরের তালেব চক এলাকায় সোমবার সকালে লাউড স্পিকারে গান বাজানো হচ্ছিল। এ নিয়ে স্থানীয় মুসলিমদের সঙ্গে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে সংঘাত শুরু হয় মিছিলকারীদের সঙ্গে স্থানীয়দের। পরে তা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রূপ নেয়।