পাক রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী ভোজ থেকেই ‘লেটারগেট’ বিতর্কের সূত্রপাত
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে হটাতে যুক্তরাষ্ট্র চিঠি ইস্যু করেছে কি না- এ মর্মে যে বিতর্ক, সেটার সূত্রপাত গত ৭ মার্চ ওয়াশিংটনে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের বিদায়ী ভোজসভা থেকে। মূলত: ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের আলাপচারিতার আনুষ্ঠানিক নোটের ভিত্তিতে দূতাবাস থেকে ইসলামাবাদে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি কূটনৈতিক তারবার্তা পাঠানো হয়, যা পরবর্তীতে ‘লেটারগেট’ বিরোধ নামে পরিচিতি পায়। খবর ডন।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে গত ২৭ মার্চ রাজধানী ইসলামাবাদে এক জনসভায় সেই চিঠি প্রদর্শন করেন ইমরান খান, ছবি- ডন
একাধিক সূত্রে জানা যায়, ওয়াশিংটনে পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূতের বাসভবন হিসেবে পরিচিত পাকিস্তান হাউসে ওই ভোজসভা অনুষ্ঠিত হয়। ভোজসভা হলেও দূতাবাসের একজন নোট-টেকার এতে উপস্থিত ছিলেন। পরবর্তীতে রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিত খান নোট-টেকারের গৃহীত নোটের ভিত্তিতে ইসলামাবাদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি কূটনৈতিক তারবার্তা পাঠান।
ভোজসভায় অংশগ্রহণকারী মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া-বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী লেসলি সি ভিগুয়েরি। পাকিস্তানি পক্ষে ছিলেন ওয়াশিংটন মিশনের উপ-প্রধান সৈয়দ নাভিদ বোখারি ও দূতাবাসের প্রতিরক্ষা অ্যাটাশে।
ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর প্রায় দুই সপ্তাহের মাথায় অনুষ্ঠিত এ ভোজসভায় আলপচারিতায় রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুই প্রাধান্য পায়। সূত্র জানায়, রাশিয়ার অভিযান শুরুর একদিনের মাথায় প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে মস্কো পাঠানোর যে সিদ্ধান্ত পাকিস্তান নেয়, মার্কিন পক্ষ তাতে ‘হতাশা’ প্রকাশ করে। একটি সূত্র জানায়, ‘তারা (মার্কিনিরা) উল্লেখ করে কিভাবে এ অভিযান পুরো মার্কিন সম্প্রদায়কে ক্ষুদ্ধ করেছে এবং কেন তারা ইমরান খানের সফরটি স্থগিত করা উচিত ছিল বলে ভেবেছে।’
আরেকটি সূত্র জানায়, সভায় ডোনাল্ড লু ইঙ্গিত দেন যে ‘ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে, সামরিক অভিযান সত্ত্বেও সফরটি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ইমরান খানের একার’, যদিও কয়েকজন পাকিস্তানি কর্মকর্তা সফরটি স্থগিতের পরামর্শ দিয়েছিলেন। এতে দ্বিমত পোষণ করে রাষ্ট্রদূত খান বলেন, ‘সফর চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল সামষ্টিক। পাকিস্তান কয়েক বছর ধরেই সরকারপ্রধানের মস্কো সফর আয়োজন করতে চাচ্ছিল। কাজেই মস্কোর পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ আসার পর সেটা ফিরিয়ে দেয়া বা স্থগিত করা সম্ভব ছিল না।’ এ পর্যায়ে মার্কিনিরা বলে-‘তারপরও সফর বহাল রাখার আগে ইস্যুটিতে ওয়াশিংটনের সংবেদনশীলতার কথা ইসলামাবাদের ভাবা উচিত ছিল।’
সূত্রগুলো জানায়, এ পর্যায়ে দুপক্ষের আলাপ পাকিস্তানের (সে সময়) চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নেয় এবং ডোনাল্ড লু উল্লেখ করেন, ওয়াশিংটন আগ্রহভরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং (তদানীন্তন) প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের ফলাফল যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কেও প্রভাব ফেলবে।
একটি সূত্র জানায়, ডোনাল্ড লুর কথাবার্তা ছিল ‘ভীতিকর ও নিয়ম-বহির্ভূত’, তবে তিনি পাকিস্তানে সরকার বদলের হুমকি দেননি। সভায় উপস্থিত আমেরিকানদের কেউই পিটিআই সরকারকে হটাতে ষড়যন্ত্র করছে- এমন আভাস পাননি বলেও সূত্র দাবি করছে। সূত্র বলেছে, ‘না, কোনো ষড়যন্ত্র নেই। কারো কাছে তেমন মনে হয়নি। তবে তারা (মার্কিনিরা) বলেছে যে (অনাস্থা ভোটের) ফলাফল দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে, এ কথার যেকোনোরকম মানে হতে পারে।’
সূত্রগুলো জানায়, ইমরান খানের মস্কো সফর নিয়ে আমেরিকানরা নিজেদের হতাশা একবারও গোপন করেনি। সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া এপ্রিলে ওয়াশিংটন সফরের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু ইউক্রেন ইস্যুতে আমেরিকানদের মনোভাব জানতে পেরে তিনি ওই সফর স্থগিত করেন বলে সূত্রগুলো দাবি করেছে।
আরেকটি সূত্র ডনকে বলেছে, ‘আমার কখনো মনে হয়নি যে, এটা মার্কিন চক্রান্ত। তবে এটা নিশ্চিতই কিছু প্রতিক্রিয়ার সূচনা করেছিল, যা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করেছে।’ তিনি বলেন, (ডোনাল্ড) লু যা বলেছেন তাতে বাইডেন প্রশাসনের মনোভাব ও চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। তবে এটা খুবই অস্বাভাবিক। মোটেও নিয়মমাফিক কিছু নয়।’
সূত্রগুলো দাবি করেছে, ভোজসভায় প্রতিরক্ষা অ্যাটাশের উপস্থিতি এবং এর আগে ইউক্রেন ইস্যুতে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগই হয়তো ওই ইস্যুতে জেনারেল বাজওয়ার মন্তব্যের কারণ, যা (ইউক্রেন ইস্যুতে) ইমরান খানের নীতি থেকে উল্লেখযোগ্য প্রতিসরণ ইঙ্গিত করে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মতে, স্নাযুদ্ধের সময় পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে যোগ দিয়ে পাকিস্তান ভুল করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে তাই পাকিস্তানের নিরপেক্ষ থাকা উচিত। এজন্য তিনি মস্কোর সামরিক অভিযানের নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানান। অন্যদিকে, জেনারেল বাজওয়া গত ২ এপ্রিল এক সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আক্রমণের নিন্দা জানান এবং তার ভাষায় একটি তুলনামূলক ছোট দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া বিরাট ট্র্যাজেডির অবিলম্বে সমাপ্তির আহ্বান জানান।
ইমরান খান মার্কিন ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ করেছেন, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর মিডিয়া উইং আইএসপিআর মঙ্গলবার তা নাকচ করেছে। তবে তারা স্বীকার করেছে, ভোজসভায় ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা এমন ভাষা ব্যবহার করেছেন, যা পাকিস্তানের বিষয়াদিতে হস্তক্ষেপের শামিল। আইএসপিআর প্রধান বলেছেন, (মার্কিন হুমকি) ইস্যু নিয়ে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সভায় ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়, তবে সভায় ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি।
গত ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেষ ভাষণে ইমরান খান একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কূটনীতিক পাকিস্তানে সরকার পরিবর্তনের হুমকি দিয়েছেন- এ মর্মে তার অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করেন। আরেকটি বিবৃতিতে তিনি ডোনাল্ড লু’র নাম উল্লেখ করেন, যিনি রাষ্ট্রদূত খানের সঙ্গে সাক্ষাতে ওই হুমকি দেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ১০ এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জালিনা পোর্টার ইমরান খানের অভিযোগ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি খুব সোজাসাপ্টাভাবে বলছি, এসব অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।’
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.