এবার বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করল রাশিয়া

রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি গ্যাজপ্রম বুলগেরিয়ায় গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার পোল্যান্ডের রাষ্ট্রায়ত্ব বিতরণ কোম্পানি পিজিনিগকে সরবরাহ বন্ধ করে গ্যাজপ্রম। রাশিয়ার এ সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউরোপের দেশগুলো।

ইয়ামাল ইউরোপ পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ থেমে গেছে বলে ইউরোপের গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানিগুলো জানিয়েছে

গ্যাজপ্রমের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রুবলে জ্বালানির মূল্য পরিশোধে অস্বীকৃতি জানানোয় বুলগারগ্যাজ ও পিজিনিগকে গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে জ্বালানির মূল্য পরিশোধে যে নিয়ম প্রবর্তন করা হয়েছে, তা অনুসরণ না করা পর্যন্ত সরবরাহ বন্ধ থাকবে। গ্যাজপ্রম এক্সপোর্টেও পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোম্পানি দুটিকে অবহিত করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, নতুন নিয়মে মূল্য পরিশোধের শর্ত সম্পর্কে গ্যাজপ্রম এক্সপোর্ট ক্রেতাদেরকে জানিয়ে সময় বেঁধে দিয়েছিল। উল্লেখ্য যে, ২৬ এপ্রিল কার্যদিবস শেষ হওয়া এসব কোম্পানি নতুন নিয়মে কোনো পেমেন্ট সম্পন্ন করেনি।

বুলগেরিয়া ও পোল্যান্ড ইয়ামাল ইউরোপ পাইপলাইনের ট্রানজিট দেশ। দেশ দুটি অননুমোদিতভাবে পাইপলাইন থেকে গ্যাস প্রত্যাহার করলে তৃতীয় পক্ষের ক্রেতাদের সরবরাহ ব্যাহত হবে বলে সতর্ক করেছে গ্যাজপ্রম।

পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো মূলতঃ ইয়ামাল ইউরোপ পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে গ্যাস পেয়ে থাকে। উত্তর ইউরোপের দেশগুলোতে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ হয় নর্দস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে। বুধবার থেকে ইয়ামাল ইউরোপ পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ থেমে গেছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গ্যাস ট্রান্সমিশন অপারেটরদের বরাতে স্কাই নিউজ জানিয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রুশ কর্তৃপক্ষ ইয়ামালা ইউরোপ পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানায় পোল্যান্ডের দুই বিতরণ কোম্পানি পিজিনিগ ও গ্যাজ সিস্টেম। গ্যাস সরবরাহ সম্পূর্ণ বন্ধের ব্যাপারে গ্যাজপ্রমের পক্ষ থেকে জানানো হয় বলে কোম্পানি দুটি স্থানীয় প্রচারমাধ্যমকে বলেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত মাসে এক নির্বাহী আদেশে তার ভাষায় বৈরী দেশগুলোর জন্য রাশিয়ার জ্বালানির মূল্য পরিশোধের নতুন নিয়ম প্রবর্তন করেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপকারী দেশগুলোকে এখন থেকে ডলার অথবা ইউরোর পরিবর্তে রুশ মুদ্রায় জ্বালানির মূল্য পরিশোধ করতে হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।

এদিকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পোল্যান্ডের জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রী আনা মস্কভা বলেছেন, রাশিয়ার জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমাতে বহু বছরের চেষ্টার ফলশ্রুতিতে পোল্যান্ড আগে থেকে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। পোল্যান্ডের গ্যাস মজুত ৭৬ শতাংশ পূর্ণ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পোলিশ নাগরিকদের বাসাবাড়িতে গ্যাসের কোনো সংকট হবে না।

বুলগেরিয়ার জ্বালানি মন্ত্রী আলেক্সান্ডার নিকোলভ সাংবাদিকদের বলেছেন, এপ্রিল মাসের গ্যাস ডেলিভারির জন্য বুলগেরিয়া মূল্য পরিশোধ করেছে। সরবরাহ বন্ধ করলে সেটা হবে চুক্তিভঙ্গের শামিল।

গ্যাস সরবরাহ বন্ধের সিদ্ধান্তের ফলে রাশিয়া অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে আরও সমাজচ্যুত হয়ে পড়বে বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডোমিনিক রাব। তিনি বলেন, এটা (গ্যাস বন্ধের সিদ্ধান্ত) রাশিয়ার উপরও অত্যন্ত ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলবে। কারণ দেশটি ক্রমশ কেবলমাত্র রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিকভাবেও সমাজচ্যুত হয়ে পড়ছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ আন্দ্রেই ইয়ারমাক বলেছেন, রাশিয়া ইউরোপকে গ্যাস দিয়ে ব্ল্যাকমেইল শুরু করেছে। তারা আমাদের মিত্রদের ঐক্য ভাঙতে চাইছে।