রুশ হামলায় রহস্যময় ‘ঘোস্ট অব কিয়েভ’র মৃত্যু

ঘোস্ট অব কিয়েভ বা কিয়েভের ভূত। অনেকে তাকে আখ্যা দিয়েছেন ‘ইউক্রেনের হিরো’ হিসেবে। এই ভূতের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে, তাই পরিচয় গোপন রাখা হয়েছিল এতদিন। এখন অবশ্য আর কোনো সমস্যা নেই। কারণ আলোচিত এই ‘ঘোস্ট’ রুশ হামলায় নিহত হয়েছেন। গত মাসেই মারা গেছেন ৪০টি রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করা এই ঘোস্ট। খবর দ্য টাইম।

‘ঘোস্ট অব কিয়েভ’ খ্যাত মেজর স্টেফান তারাবালকা

দ্য টাইমের রিপোর্টে দাবি করা হয়, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ হামলার প্রথম দিনে তিনি একাই প্রতিপক্ষের ছয়টি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেন। পরে সবমিলিয়ে ৪০টি যুদ্ধবিমান তার হাতে ভূপাতিত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। সে সময় ইউক্রেন সরকার তাকে ‘গার্ডিয়ান এঞ্জেল’ বলে উল্লেখ করে। পরিচয় পুরোপুরি গোপন রাখতে তার নাম দেওয়া হয় ‘ঘোস্ট অব কিয়েভ’। যুদ্ধের এ কয়দিনে একাই রুশ বাহিনীর ঘুম উড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

রাশিয়া অবশ্য দাবি করেছিল, এ নামে কারো কোনো অস্তিত্ব নেই। ইউক্রেনের সেনাদের মনোবল বাড়াতেই কেবল এ কৌশলের আশ্রয় নিয়ে কিয়েভ। সে দাবিকে নস্যাৎ করে কিয়েভ দাবি করে, ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ হামলার প্রথম ৩০ ঘণ্টাতেই রাশিয়ার ছয়টি যুদ্ধবিমানকে গুলি করে নামিয়েছে ঘোস্ট অব কিয়েভ। ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১০টি সামরিক বিমানকে ধ্বংস করেন তিনি।

৪০টি রুশ যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছেন তারাবালকা

নিরাপত্তার কারণে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ এতদিন তার পরিচয় প্রকাশ করেনি। এবার তার মৃত্যুর পর ইউক্রেন জানিয়েছে, ঘোস্ট অব কিয়েভের আসল নাম মেজর স্টেফান তারাবালকা। গত ১৩ মার্চ রুশ বাহিনীর ওপর হামলা চালানোর সময় শত্রুপক্ষের গোলায় তার মিগ ২৯ বিমান ধ্বংস হয়ে যায়। নিহত হন মেজর স্টেফান তারাবালকা।

অদম্য সাহসিকতার জন্য ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ তাকে দেশের সেরা সাহসিকতার পুরস্কার ‘অর্ডার অব দ্য গোল্ডেন স্টার’ প্রদান করেছে।

পশ্চিম ইউক্রেনের ছোট্ট গ্রাম করোলিভকায় একটি সাধারণ পরিবারে জন্ম তারাবালকার। গ্রামের ওপর দিয়ে যুদ্ধবিমান গর্জন করে উড়ে যাওয়ার সময় থেকেই তার ভেতরে পাইলট হওয়ার ইচ্ছে জন্ম নেয়। বিমানবাহিনীর মহড়া চলার সময় আকাশের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকতো তারাবালকা। প্যারাট্রুপারদের নামার জায়গায় ছুটে যেত। খারকিভ ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে শেষ পর্যন্ত পাইলটই হয়েছিলেন তারাবালকা।

তারাবালকার মা নাটালিয়া বলেন, সে নিজের চেষ্টাতেই পাইলট হয়েছিল। আজ ওর মৃত্যুর পর সাহসিকতার সেরা সম্মান দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু ও এই সম্মান অনেক আগেই পেয়ে গিয়েছে।