অবিশ্বাস্য, অভ্যুত্থান ঠেকিয়ে দেওয়া এক ফোন
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পুরো বিশ্ব এখন প্রযুক্তির বন্ধনে আবদ্ধ। সেই প্রযুক্তির কতটা ভালো কাজে ব্যবহার হচ্ছে, আর কতটা খারাপ, সে প্রশ্ন ভিন্ন। বর্তমান সময়ে এ প্রযুক্তির অবদানে কখনো কখনো সরকারের পতন হয়ে যাচ্ছে, তার নজির তো অহরহ। তেমনিভাবে এ প্রযুক্তির সামান্যতম অবদানে ঠেকিয়ে দেওয়া যায় সেনাবাহিনীর বড় একটি অভ্যুত্থান- এমন নজিরও রয়েছে বিশ্বের বুকে। দ্বিতীয় পক্ষের উজ্জ্বল নজির হিসেবে বলা যায় তুরস্কের কথা। তুরস্কের একটি মোবাইল ফোনের কথা।
সেই আলোচিত ফোন সাক্ষাৎকার
সময়টা ১৫ জুলাই ২০১৬। ওই রাতে তুরস্কের সেনাবাহিনীর একাংশ আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলে রাস্তায় নেমে আসে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিতে। অভ্যুত্থানকারীরা তাদের এ কাজের জন্য এমন একটি সময় বেছে নিয়েছিল, যখন এরদোয়ান ছিলেন রাজধানী থেকে অনেক দূরে, অবকাশ যাপনে।
রাজধানী আঙ্কারাসহ সবচেয়ে বড় নগরী ইস্তাম্বুলের প্রধান স্থাপনাগুলোতে ছিল অভ্যুত্থানকারীদের দৃশ্যমান উপস্থিতি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো দখলে নিয়ে সেনাবাহিনী তাদের সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়। সেনারা টেলিভিশনে সারাদেশে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে দাবি করে বিবৃতি পড়ে শোনাতে বাধ্য করে। প্রথমদিকে অভ্যুত্থানের খবর যখন ছড়িয়ে পড়ে, তখন দেশটির নিয়ন্ত্রণ বিদ্রোহী সেনাদের হাতে বলেই মনে হচ্ছিল।
অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দেয়ার পর এরদোয়ানের সাথে সমর্থকরা
অভ্যুত্থান চেষ্টা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বিন আলি ইলদিরিম তা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। তবে তুরস্কের বেশিরভাগ মানুষের মতো সেনাবাহিনীও জানতো দেশের প্রকৃত ক্ষমতা আসলে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের হাতে। তাই কিছু করতে হলে তাকেই সরাতে হবে। ধারণা করা হচ্ছিল তিনি পরিবারের সঙ্গে তুরস্কের একেবারে দক্ষিণ-পশ্চিমে এজিয়ান সাগর তীরের অবকাশ কেন্দ্র মারমারিসে আছেন।
অভ্যুত্থানের ডামাডোলের মধ্যেই একপর্যায়ে অবকাশ যাপনে থাকা এরদোয়ান মোবাইল থেকে টেলিভিশন চ্যানেল সিএনএন-টার্কে বার্তা পাঠান। ওই রাতে সিএনএন-টার্কে দায়িত্ব পালন করছিলেন আঙ্কারার ব্যুরোপ্রধান নারী সংবাদদাতা হ্যান্ডে ফিরাত। এরদোয়ান তার মোবাইল অ্যাপ ফেসটাইমের মাধ্যমে ফিরাতের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ফিরাতের মোবাইলে তিনি অভ্যুত্থানের নিন্দা জানিয়ে তাঁর সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানান। সংকটময় সন্ধিক্ষণে এই আহ্বান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেই রাতের বর্ণনা দিয়ে ফিরাত বলেন, টেলিভিশনে লাইভ অনুষ্ঠান প্রচারের সময় হঠাৎ মোবাইল পর্দায় দেখতে পাই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান জীবিত আছেন। আমি প্রথমেই তাকে বললাম, হ্যালো? দয়া করে বলুন মিস্টার প্রেসিডেন্ট! আমরা আপনার কথা শুনছি...। শুভ সন্ধ্যা! স্যার, দয়া করে বলুন...। এরপরই তিনি অভ্যুত্থানবিরোধীদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
সিএনএন টার্ক দোগান মিডিয়া গ্রপের মালিকানাধীন জনপ্রিয় একটি চ্যানেল (তুর্কি ভাষা)। এই চ্যানেলের সঙ্গে এরদোয়ানের সম্পর্ক খুব যে ভালো ছিলো, তা বলা যাবে না। বরং মাঝে মাঝেই এ সম্পর্ক অস্বস্তিকর অবস্থায় পৌঁছে যেত। এরপরও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সেই সিএনএন টার্ককেই বেছে নেন। ফিরাত বলেন, ‘ওই কল যখন আসে, তখন অতীতের সম্পর্কের কথা চিন্তা করিনি। শুধু সাক্ষাৎকারের ওপরই ধ্যান দিয়েছিলাম।'
ওই সাক্ষাৎকার প্রচারের পরই অভ্যুত্থানকারী সেনারা সিএনএন টার্কের কার্যালয়ে হানা দেয়। সিএনএন টার্কের টিভি পর্দা কালো হয়ে যায় এবং গোলাগুলি ও কামানের শব্দ শোনা যায়। অভ্যুত্থান ব্যর্থ হওয়ার পরই ওই চ্যানেলটি ফের প্রচারে ফিরে আসে। এরদোয়ানের সঙ্গে ফিরাতের সেই সাক্ষাৎকার বারবার দেখানো হয়। ওই সাক্ষাৎকার দুই দিন প্রচারিত হয়।
ফোনে দেওয়া এরদোয়ানের ওই সাক্ষাৎকার সিএনএন টার্ক প্রচার করার পরই নাটকীয়ভাবে পরিস্থিতি বদলে যায়। প্রেসিডেন্টের ডাকে সাড়া দিয়ে হাজার হাজার মানুষ ইস্তাম্বুল-আঙ্কারার রাস্তায় নেমে আসে। বিমানবন্দরে অবস্থানরত সেনাদের ঘেরাও করে ফেলে জনতা, পুরো বিমানবন্দর তাদের দখলে চলে যায়। সে সময় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন টিআরটি থেকে অভ্যুত্থানকারীরা দেশজুড়ে কারফিউসহ বিভিন্ন ঘোষণা জারি করা হচ্ছিল। কিন্তু তা কার্যকর করতে তারা ব্যর্থ হয়।
এদিকে পরিস্থিতি অনুকূলে আসার অপেক্ষা না করে ওই রাতেই এরদোয়ান ইস্তাম্বুল পৌঁছান। তিনি যখন কামাল আতাতুর্ক বিমানবন্দরে এসে নামেন, পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টে যায়। সেখানেই এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি কড়া ভাষায় অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তুরস্কের নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই। পরে দেখা যায়, সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসাররা তার পক্ষেই আছে। আঙ্কারার নিয়ন্ত্রণ তখনো অভ্যুত্থানকারীদের হাতে থাকলেও ইস্তাম্বুল তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়।
এরদোয়ান দেশের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার পরই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। বিদ্রোহী সেনা ও এর সঙ্গে যুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেন। গ্রেপ্তার করা হয় ৩৭ হাজার জনকে।
এ অভ্যুত্থানকাণ্ডে এরদোয়ানসহ পুরো তুরস্কের ভাগ্য নির্ভর করেছিল একটিমাত্র ফোনের ওপর। ফিরাতের ওই ফোনটি রিসিভ না হলে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াতো তা বলা মুশকিল। এ কারণেই অভ্যুত্থানকাণ্ড ও তার প্রতিরোধ শেষ হওয়ার পর আরেক দফা হৈ চৈ ওঠে ফিরাতের ওই ফোন নিয়ে। বিশ্বের অন্যতম সেরা আকর্ষণে পরিণত হয় সেই ফোন।
পরবর্তী সময়ে ফিরাত এক সাক্ষাৎকারে এএফপিকে বলেন, আমি আমার সেই ফোনটি বিক্রি করতে পারিনি। ড্রয়ারে রেখে দিয়েছি। হাত থেকে পড়ে ভেঙে যাওয়ার ভয়ে ফোনটি ব্যবহার করা হয় না। তুরস্কে অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে দিতে সাহায্য করা ফোনটি কিনতে চেয়েছে সৌদি আরব, কাতার ও তুরস্কের অনেক মানুষ। কিন্তু ফিরাত বিক্রি করেননি।
ফিরাত আরো বলেন, ওই কলের প্রভাব তুরস্ক ও অন্যত্র রাতারাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। আমি আরব বিশ্ব থেকে অনেক বার্তা পেয়েছি। তারা আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছে, তুমি এ অঞ্চলের ভাগ্য পরিবর্তন করেছ। ওইদিনের ঘটনা পরিক্রমার ব্যাপারে তার মন্তব্য, আমি জানি যে এটা আমার কাজ এবং ওই রাতে আমি সত্যটা তুলে ধরতে চেয়েছি। আর কিছু নয়।
ফিরাত ও তার ফোন দায়িত্ব পালন করেছে বলেই আজকের বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের নামটি উঠে আসে।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.