আপনি পড়ছেন

রাশিয়ার সঙ্গে পাশ্চাত্যের চলমান দ্বৈরথে আরব দেশগুলোর অবস্থান বিশেষ মনোযোগের দাবি রাখে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বরাবরই যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া দেশগুলো এবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাশ্চাত্যের কোনো পদক্ষেপে পাশে থাকেনি। এটা স্পষ্ট যে, ইউক্রেন ইস্যুতে বিরোধকে ঘিরে বিশ্ব এক নতুন ভারসাম্যাবস্থার দিকে যাচ্ছে। নতুন এ বিশ্বব্যবস্থায় আরবরা যে পাশ্চাত্যের অনুবর্তী হচ্ছে না, সেটা আরও স্পষ্ট। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা এমনটাই মনে করছেন।

arab world prউপসাগরীয় দেশগুলো অনুভব করছে যে, শক্তির ভারসাম্য পাল্টে গেছে

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ইয়েভগেনি সাটানোভস্কি মনে করেন, পাশ্চাত্যের ডুবন্ত টাইটানিকে ভরসা রাখতে না পেরে আরব দেশগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করছে। বিগত বছরগুলোতে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন, সিরিয়াসহ নানা ইস্যুতে দুতিয়ালি ও মধ্যস্থতার জন্য মস্কোর কাছে আরব দেশগুলোর কড়া নাড়া দেখে সাটানোভস্কির বক্তব্যের সত্যতার আভাস পাওয়া যায়।

দিনকয়েক আগে মস্কোর প্যাট্রিয়ট মিডিয়া গ্রুপের প্রেস সেন্টারে বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল ইউনিভার্সিট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, আরব দেশ ও তুরষ্কের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক এবং রাশিয়া ও ইসরায়েলের সম্পর্ক কোথাও পরষ্পরকে কাটাছেঁড়া করেনি।

রুশ নেতৃত্বের চরিত্রে ছলনার বিষয়টি নেই। ভ্লাদিমির পুতিন, সের্গেই লাভরভ, সের্গেই শোইগু অথবা রাশিয়ার ক্ষমতায় থাকা প্রথম সারির কোনো নেতার কাছে যে জিনিসটি কখনও পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেটা হলো ছলনা। ছলনা করে এরা আপনাকে খুশি রাখবে, তা কখনও হবে না। বরং পুতিন আপনার আশায় পানি ঢেলে সরাসরি বলে দেবেন, তিনি কী করবেন আর কী করবেন না।

বিগত কয়েক মাসে আরব দেশগুলোর বেশকিছু পদক্ষেপ পাশ্চাত্যের চাওয়ার বিপরীতে গেছে। যেমন- রাশিয়াকে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ থেকে বহিষ্কারের উদ্যোগ সমর্থন না করা। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য প্রস্তাবের বিরোধিতা করা কিংবা ভোটদানে বিরত থাকা। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, আরব দেশগুলো দেখতে পাচ্ছে, বিশ্বব্যবস্থা পাল্টে যাচ্ছে এবং এই পালাবদলে তারা যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্টত বিজয়ী মনে করছে না।

এ বিষয়ে সাটানোভস্কি বলেন- আরবরা বিশ্বাস করে, আমেরিকানরা নিজেদের আধিপত্য, নিজেদের ডুবন্ত টাইটানিক উদ্ধার করতে চায়। তারা একটা কারণে রাশিয়াকে বহিষ্কারের উদ্যোগ সমর্থন করেনি, সেটা হলো- তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করছে। পৃথিবীটা বদলে যাচ্ছে, এ অবস্থায় কোনোভাবেই তারা হারতে থাকা পক্ষের সঙ্গে নিজেদের জড়াতে রাজি নয়।

রাশিয়ান ইনস্টিটিউট অব মিডল ইস্টের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন অধ্যাপক ইয়েভগেনি সাটানোভস্কি। তিনি বলেন, আরবরা প্রাচীনকাল থেকেই জ্ঞানী জাতি। তারা অনেক কিছু দেখেছে। খামোখা কেনো তারা একটি ডুবন্ত নৌকায় চড়তে যাবে?

যুক্তরাষ্ট্র ও পাশ্চাত্যের দেশগুলোর উপর্যুপরি অনুরোধ সত্ত্বেও ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার সমালোচনা করেনি একটিও আরব দেশ। বরং ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে আরব আমিরাত মস্কোর সঙ্গে সম্পর্কের বন্ধুত্বের গভীরতায় জোরারোপ করেছে। ইউক্রেন থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র ও আলবেনিয়ার উত্থাপিত একটি প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে আরব আমিরাত। ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি সৌদি আরব। আরব আমিরাত, বাহরাইন, ওমান, কুয়েত, কাতার সহিংসতার সমালোচনা করলেও রাশিয়ার নাম উল্লেখ করেনি।

রাশিয়ার নাম উল্লেখ অথবা দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দূরে থাক, রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের শূন্যতা পূরণের উৎস হতেও অনীহা জানিয়েছে এসব দেশ। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর রুশ তেলের শূন্যতা পূরণে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ করে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আরব আমিরাত সফরে যেতে চেয়ে আবুধাবির সাড়া পাননি মার্কিন মন্ত্রী।

বিদ্যমান এ পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র ও পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যকার সম্পর্কে অনুঘটক হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন ফরাসি থিঙ্ক ট্যাংক ইনস্তিতুত মন্তাইনের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আনা গাদেল। তিনি বলেন, উপসাগরীয় দেশগুলো অনুভব করছে, শক্তির ভারসাম্য পাল্টে গেছে। তারা বুঝতে পারছে, বৈশ্বিক বিষয়াদিতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে নতুন ভূমিকার জন্য প্রস্তুত হতে হবে।

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবদুলখালেক আবদুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দারুণ সম্পর্ক থাকার মানে এ নয় যে আমরা তাদের হাতের পুতুল এবং সব আদেশ মেনে যাব। সেই দিন আর নেই। এখন আমাদের নিজস্ব কৌশলগত ভাবনা আছে, নিজেদের অগ্রাধিকারের বিষয় আছে।

*আন্তন কুলিকভের নিবন্ধ, প্রাভদা থেকে অনূদিত

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.