হাঙ্গেরি: রাশিয়ান তেল আমদানি বন্ধ করা পরমাণু হামলার মতো

ইউক্রেনে হামলার জেরে রাশিয়া থেকে ধীরে ধীরে তেল আমদানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় কমিশন। কিন্তু এতে বেঁকে বসেছে হাঙ্গেরিসহ আরো কিছু দেশ। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত হাঙ্গেরির অর্থনীতির ওপর পরমাণু হামলা চালানোর মতোই ক্ষতিকর।

হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান

গতকাল শুক্রবার হাঙ্গেরির সরকারি রেডিও চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান এ কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার তেল আমদানির ব্যাপারে আগে বলা হয়েছিল, প্রত্যেক দেশ যার যার নিজস্ব পরিস্থিতি বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু বর্তমানে যেভাবে সময় বেঁধে দেওয়া হচ্ছে, তা হাঙ্গেরির মতো স্থলপরিবেষ্টিত দেশের পক্ষে মানা সম্ভব হবে না। এ ধরনের যে কোনো সিদ্ধান্ত হাঙ্গেরির অর্থনীতির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করবে, যা পরমাণু বোমা হামলার চেয়ে কম নয়।

সাক্ষাৎকারে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেসব দেশের সমুদ্রবন্দর রয়েছে তারা তেল আমদানির বিষয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। তাদের পক্ষে খুব সহজেই আমদানিকারক পরিবর্তন করা সম্ভব। কিন্তু হাঙ্গেরি একটি ভূমিবেষ্টিত দেশ। ফলে তেল আমদানির ক্ষেত্রে এ দেশকে পুরোপুরি পাইপলাইনের ওপরই নির্ভর করতে হয়। তাই চাইলেই তেলের মতো জিনিস আমদানির ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এ বাস্তবতা মেনেই হাঙ্গেরিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ইউরোপীয় কমিশন ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে বুদাপেস্টের পক্ষে তা মানা সম্ভব হবে না।

রাশিয়ার তেল আমদানির পাইপলাইন

পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী ওরবান বলেন, ইউরোপীয় কমিশনের সর্বশেষ প্রস্তাব যদি মেনে নেওয়া হয় তাহলে দেশে প্রতি লিটার পেট্রোল ১ দশমিক ৯০ ডলারে আর ডিজেল ২ দশমিক ২২ ডলারে বিক্রি হবে, যা হাঙ্গেরির ওপর বিরাট বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। সোজা কথায়, এর অর্থ দাঁড়াবে দেশের অর্থনীতির ওপর পরমাণু বোমা হামলা চালানো।

উল্লেখ্য, ইউরোপীয় কমিশন প্রস্তাব দিয়েছিল, আগামী ৬ মাসের মধ্যে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল এবং ২০২২ সালের শেষে পরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়াকে আপাতত এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হবে। তাদের জন্য ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার তেল কেনার সুযোগ রাখা হবে। কিন্তু উভয় দেশই জানিয়েছে, তাদের জন্য এ সময় পর্যাপ্ত নয়। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ওরবান বলেছেন, রাশিয়ার তেলের বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে তাদের অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে।

এ অবস্থায় হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়াকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত সময় দেওয়ার জন্য আলোচনা চলছে।