পারিবারিক কলহে দাদার হাতে নিহত ‘আদরের নাতি’

বাগানের নারিকেল ও লেবু তুলেছে, এমন সন্দেহে পারিবারিক কলহের একপর্যায়ে পাষণ্ড দাদা ক্রিকেট খেলার ব্যাট দিয়ে আঘাত করে ‘আদরের নাতি’ জিসানকে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জিসান। সে লক্ষীপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। বয়স ১৭। 

আবুল কাশেম হাওলাদার

ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৮ এপ্রিল। বরিশালের মুলাদী থানাধীন জালালাবাদ গ্রামে। নিহত জিসান মালয়েশিয়া প্রবাসী নজরুল ইসলাম হাওলাদারের একমাত্র ছেলে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, জিসানের দাদার নাম আবুল কাশেম হাওলাদার। বয়স ৬৬। বছর দুয়েক পূর্বে তার স্ত্রী অর্থাৎ জিসানের দাদি মারা যায়। দুই ছেলের বড় ছেলে নজরুল ইসলাম হাওলাদার প্রায় ১৩ বছর ধরে মালয়েশিয়া প্রবাসী। ছোট ছেলে আজিজুল কৃষিকাজ করে থাকেন। আজিজুলের সাথেই থাকতেন আবুল কাশেম হাওলাদার। নজরুল খরচ বাবদ মাঝে মাঝেই আজিজুলকে বিদেশ হতে টাকা পাঠাতেন।

যেভাবে ঘটনার শুরু

আবুল কাশেমের বাড়ির পেছনে নারিকেল ও লেবুর বাগান রয়েছে। ২৭ মে রাতের আঁধারে কে বা কারা গাছ হতে নারিকেল ও লেবু নিয়ে যায়। সকালবেলা আজিজুলের স্ত্রী- আঁখিনুর বেগম গাছে ফল না দেখে নজরুলের বৌ (জেসমিন) ও তার ছেলে-মেয়েকে সন্দেহ করে গালিগালাজ করে।

একপর্যায়ে তাদের মধ্যে তর্কাতর্কি ও হাতাহাতি হয়। আজিজুল ও তার বউ (আঁখিনুর) নজরুলের বৌ ও তার মেয়ে নাজমুন নাহার ওরফে শিখাকে মারধর করতে থাকলে তাদের চিৎকার শুনে জিসান ঘর হতে বের হয়ে তার মা ও বোনকে ছাড়িয়ে নেয়।

পরবর্তীতে আজিজুলের সাথে জিসানের তর্কাতর্কির একপর্যায়ে আবুল কাশেম হাওলাদার ছেলে আজিজুলের পক্ষ নিয়ে উঠানে থাকা ক্রিকেট খেলার কাঠের ব্যাট দিয়ে নাতি জিসানের মাথা বরাবর আঘাত করেন। এতে জিসান তাৎক্ষণিক মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে তারা পালিয়ে যায়।

আশপাশের লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় জিসানকে উদ্ধার করে মুলাদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে রেফার করে। সেখান থেকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করলে ২৮ এপ্রিল জিসান মৃত্যুবরণ করে।

মামলা দায়ের, তদন্ত এবং গ্রেপ্তার

এই ঘটনার জিসানের মা বাদী হয়ে অন্যান্য আসামিসহ আবুল কাশেম হাওলাদারকে প্রধান আসামি করে মুলাদী থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, মামলা নথিভুক্ত হওয়ার পর এলআইসি শাখা ছায়া তদন্ত শুরু করে। ঘটনাস্থল ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন উৎস থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য সরেজমিনে সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ঘটনার সাথে আবুল কাশেম হাওলাদারের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। এলআইসি'র একটি দল অভিযান পরিচালনা করে ১০ মে রাতে কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানা এলাকা থেকে আসামি আবুল কাশেম হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে।