কবরস্থানের জন্য এক টুকরো জমি খুঁজছে এথেন্সের মুসলিমরা

আফগান শরণার্থী এসফান্দিয়ার ফাগকিরি যখন এথেন্সের উপকণ্ঠে একটি কবরস্থানে তার পাঁচ বছরের ছোট্ট ছেলে হাসিবুল্লাহ ফাগকিরির কবরের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, তখন তিনি শোকে কাতর, কিন্তু চোখের পানি ফেলতে পারছিলেন না। কারণ সেটি ছিল একটি খ্রিস্টান কবরস্থান। ফলে মুসলিম রীতি অনুযায়ী শোক প্রকাশ করার অনুমতি নেই। এখানেই শেষ নয়, এক সময় তাকে জানানো হলো, তিন বছর পর হাসিবুল্লাহর মরদেহ (অবশিষ্টাংশ) সরিয়ে নিতে হবে, তখন সত্যিকার অর্থে তিনি শোকে পাথর হয়ে গেলেন। খবর দ্য ডন।

ছেলের কবরে পানি দিচ্ছেন এসফান্দিয়ার ফাগকিরি

আফগান নাগরিক এসফান্দিয়ার ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে সপরিবারে শরণার্থী হিসেবে এথেন্সে বসবাস করতে শুরু করেন। তার ছেলে হাসিবুল্লাহ একটি ট্রাকের ধাক্কা খেয়ে মারা যায়। কিন্তু সেখানে মুসলমানদের জন্য আলাদা কোনো কবরস্থানের জায়গা নেই। ফলে বাধ্য হয়ে এথেন্সের উপকণ্ঠে শিস্টোর অর্থোডক্স খ্রিস্টান কবরস্থানেই মুসলমানদের লাশ দাফন করতে হয়। কিন্তু সেটা করতে হয় খ্রিস্টান রীতিনীতি মেনেই। আর যারা কবরের জন্য অর্থ দিতে পারে না, তাদেরকে নির্ধারিত সময় পর মরদেহের অবশিষ্টাংশ তুলে নিতে হয়, সংরক্ষণ করা হয় ওই কবরস্তানেরই অন্য একটি অংশে।

অর্থোডক্স খ্রিস্টানপ্রধান দেশ গ্রিসে মুসলিম কবরস্থাান রয়েছে এথেন্স থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দূরে গ্রিক-তুর্কি সীমান্তের কাছে থ্রেস নামক এলাকায়। ওই এলাকাটি শতাব্দী প্রাচীন মুসলিম সংখ্যালঘুদের আবাসস্থল।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গ্রিস পৌঁছেন শরণার্থীরা

এথেন্সে একসময় মুসলমানদের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। কিন্তু ২০১৫ সালে শরণার্থী সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ডেমোগ্রাফি পাল্টে যাচ্ছে। ক্রমাগত অভিবাসন তরঙ্গ এবং মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের যুদ্ধ-দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার পরিবারের আগমনের পর গ্রিসের রাজধানী এথেন্সেই এখন পাঁচ লাখের বেশি মুসলমান বসবাস করে। তাদের পক্ষে ৭৫০ কিলোমিটার দূরে গিয়ে স্বজনের লাশ দাফন করা সম্ভব নয়।

এথেন্সে আফগান শরণার্থীদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি রেজাই মোহতার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মৃতদের থ্রেসে স্থানান্তরে উচ্চ ব্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এথেন্সের অর্থোডক্স কবরস্থানে মুসলমানদের দাফনের সংখ্যা বেড়েছে। কোভিড-১৯ মহামারি জিনিসগুলোকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

গ্রিসের পাকিস্তানি সম্প্রদায়ের একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য জাভেদ আসলাম বলেন, মুসলিম অভিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে এথেন্সে একটি কবরস্থানের জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে।

এথেন্স পৌরসভার কর্মকর্তা স্ট্যামাটাটোস জানান, ২০১৬ সালে গ্রিসের অর্থোডক্স চার্চ মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত একটি অংশের জন্য শিস্টো কবরস্থানে ২০ হাজার বর্গ মিটার জমি দান করেছিল। কিন্তু কিছু আইনি বিরোধের কারণে প্রকল্পের কাজ শেষ হতে বিলম্ব হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সেটি বাস্তবায়ন হবে কি-না তা নিয়ে সন্দিহান অনেকে। এ অবস্থায় কবরস্তানের জন্য এক টুকরা জমি খুঁজে ফিরছে এথেন্সের মুসলিম শরণার্থীরা।