অবৈধভাবে নেটওয়ার্ক জ্যামার বিক্রি, ক্রেতা অপরাধীরা

তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ যেমন প্রযুক্তির বিভিন্ন রকমের সুবিধা ভোগ করছেন, তেমনি এই প্রযুক্তির অপব্যবহারও হচ্ছে। এর মাধ্যমে অপরাধীরা নানা ধরনের অপরাধ করার সুযোগ পায়। প্রযুক্তির তেমনই একটি ডিভাইস হচ্ছে নেটওয়ার্ক জ্যামার ও বুস্টার।

র‌্যাবের ব্রিফিং

জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার টুজি, থ্রিজি এবং ফোরজি মোবাইল নেটওয়ার্কের কার্যক্ষমতাকে প্রভাবিত করতে সক্ষম। অপরাধীরা অপরাধ করার উদ্দেশে উচ্চমূল্যে এসব অবৈধ ডিভাইস ক্রয় করে।

বিটিআরসির অনুমোদন ব্যতীত এ সকল যন্ত্র বা যন্ত্রাংশ ক্রয়-বিক্রয় বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ। কোনো অপরাধী নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করে অপরাধ সংগঠিত করলে ভুক্তভোগী তার মোবাইল থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য নিতে পারবে না। কারণ তার মোবাইল তখন নেটওয়ার্কই থাকবে না।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে  বিপুল পরিমাণ অবৈধ জ্যামার, রিপিটার ও নেটওয়ার্ক বুস্টারসহ ২ জনকে গ্রেপ্তারের পর এসব কথা জানিয়েছে র‍্যাব। তারা হলেন- মো. আবু নোমান (২৮) এবং সোহেল রানা (৩৭)। তারা অনলাইনে এসব পণ্য বিক্রি করতেন।

র‍্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ এর একটি দল জানতে পারে, অবৈধ জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার বিক্রয়কারী চক্রের কতিপয় সদস্য দীর্ঘদিন ধরে মোহাম্মদপুর এলাকায় বিনা অনুমতিতে অবৈধ জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার বিক্রয় করে আসছে। এর প্রেক্ষিতে র‌্যাব এবং বিটিআরসির প্রতিনিধিরা যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার বিক্রয়কারী দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

এ সময় গ্রেপ্তারকৃতদের নিকট থেকে মোবাইল নেটওয়ার্ক জ্যামার ৪ টি, জ্যামার এন্টিনা ২৪ টি, পাওয়ার ক্যাবেল ৩ টি, মোবাইল নেটওয়ার্ক বুস্টার ৩ টি, বুস্টারের আউটডোর এন্টিনা ৯ টি, বুস্টারের ইনডোর এন্টিনা ২৬ টি, বুস্টারের ক্যাবল ৩৭টি এবং একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব জানায় যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার বিক্রয় করে আসছে। ধৃত নোমানের আইটি স্টল.কম.বিডি নামে ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ রয়েছে। এছাড়া সোহেল রানার সোআইএম বিডি নামে ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজ রয়েছে।

সেই ই-কমার্স ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে তারা আইপি ক্যামেরা, ডিজিটাল ক্যামেরা ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের পাশাপাশি উচ্চমূল্যে বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টারসহ এর যন্ত্রাংশ লাইসেন্স ছাড়া অবৈধভাবে বিক্রি করত।

তারা মুলত বৈধ আমদানিকারকের মাধ্যমে অধিক পরিবহন মূল্য পরিশোধ করে বৈধ মালামালের আড়ালে এসব অবৈধ যন্ত্রাংশ নিয়ে এসে অনলাইন ফ্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে উচ্চমূল্যে বিক্রয় করত। চক্রটি গত দুই বছরে দুইশতাধিক জ্যামার ও নেটওয়ার্ক বুস্টার বিক্রয় করেছে।

র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট  কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গ্রেপ্তার সোহেল রানার বিরুদ্ধে চট্রগ্রাম ও খুলনা জেলায় দুটি চেক জালিয়াতির মামলাও রয়েছে।

তিনি আরও জানান, এ সকল জ্যামার ব্যবহারকারী অপরাধীরা নিজেদের আড়াল করে নির্বিঘ্নে অপরাধ সংগঠিত করে পালাতে সক্ষম হবে। এছাড়াও কোনো স্থানে জ্যামার থাকলে আশপাশের প্রচুর গ্রাহক নেটওয়ার্ক সংযোগ পায় না। অবৈধ বুস্টার বা রিপিটারও একই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে।