রাশিয়ার শর্ত মেনেই করতে হলো আত্মসমর্পণ

আজভস্টালে আটকাপড়া সৈন্যদের সরিয়ে নিতে শর্ত দিয়েছিল রাশিয়া। বিকল্প হিসেবে তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে সৈন্যদের হস্তান্তরের প্রস্তাব দেয় ইউক্রেন। জাতিসংঘ, তুরস্কসহ নানা মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে বারবার প্রস্তাব দেয় কিয়েভ। অন্যদিকে রাশিয়া গোড়া থেকেই বলেছে, সৈন্যদের আত্মসমর্পণ করতে হবে, না হয় সেখানেই আটকে থাকতে হবে। শেষপর্যন্ত রাশিয়ার শর্ত মতো আত্মসমর্পণ করতে হলো ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের।

আত্মসমর্পণকারী সৈন্যদের মধ্যে গুরুতর আহত ৫৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে রুশ বাহিনী

গতকাল প্রথমদিনে আজভস্টাল থেকে ২৬৪ জন ইউক্রেনীয় সৈন্য রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ৫৩ জনকে চিকিৎসার জন্য রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত দোনেৎস্কের নোভাজোভস্ক ডিস্ট্রিক্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। অন্যদের ইয়েলেনভকা গ্রামের যুদ্ধবন্দী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাশিয়ার চ্যানেল ওয়ান জানিয়েছে, যুদ্ধবন্দী ক্যাম্পে নেওয়া সৈন্যদের মধ্যে ১৪৪ জন ইউক্রেন ন্যশনাল গার্ডের সদস্য। তাদেরকে আজ ভোর ৪টায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে রুশ সৈন্যরা।

জানা গেছে, আজও ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আত্মসমর্পণের কথা রয়েছে। প্রথম দিন ২৬৪ জনের আত্মসমর্পণের পর আজভস্টালে আরও ২ হাজার ২২৭ জন সৈন্য আছেন। এদের মধ্যে ইউক্রেনের ন্যাশনাল গার্ড ছাড়াও সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও কট্টরপন্থী আজভ মিলিশিয়া ব্যাটালিয়নের সদস্যরা রয়েছেন। কয়েকজন সন্তানসম্ভবা সৈন্যও রয়েছেন।

এর আগে গতমাসের শেষদিকে মস্কো সফরকালে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজভস্টালে আটক সৈন্যদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। রাশিয়ার পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, আটকাপড়া সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের দূতিয়ালিতে কাজ না হওয়ায় তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের শরণাপন্ন হয় ইউক্রেন। কিয়েভের আলোচক দলের সদস্য মুস্তাফা জামিলেভের বরাতে তুরস্কের সাংবাদিক রজব সইলু জানান, ইউক্রেনের এক সৈন্য তাদের আজভস্টাল থেকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য তুর্কি প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে একটি বার্তা পাঠান। বার্তাটি অনুবাদ করে এরদোয়ানের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তুর্কি প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ইব্রাহিম কালিন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

ইব্রাহিম কালিন আজভস্টালে থাকা ইউক্রেনীয় সৈন্যদের তুরস্কে যেতে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এজন্য তুরস্ক সরকার বারদিয়ানস্ক বন্দরে নিজেদের জাহাজ পাঠাতে রাজি আছে বলে তিনি শোইগুকে জানান। তিনি বলেন, রাশিয়া রাজি হলে আজভস্টাল থেকে সৈন্যদের বাসে তুলে তুর্কি কর্তৃপক্ষ ওই বাস পাহারা দিয়ে বারদিয়ানস্ক বন্দরে নিয়ে যাবে। যুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত এসব সৈন্যকে তুরস্কে রাখা হবে বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।

জবাবে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানান, আটকাপড়া ইউক্রেনীয় সৈন্যদের আক্রমণ অথবা হত্যা করা হবে না- এ মর্মে তিনি নিশ্চয়তা দিতে পারেন। কিন্তু এসব সৈন্যকে অন্য কোথাও সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব রক্ষা করা সম্ভব নয়।

এ পর্যায়ে ইব্রাহিম কালিন বলেন, আটকাপড়া সৈন্যদের সরিয়ে নিতে দিলে ইউক্রেন সরকার এক হাজার রুশ যুদ্ধবন্দীকে মুক্তি দিবে বলে জানিয়েছে। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সে প্রস্তাবও নাকচ করে দেন।