বিপুল পরিমাণ অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, আধা কিলোমিটারেও যোগাযোগ সম্ভব

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ ওয়াকিটকি সেট বিক্রয়কারী চক্রের মূলহোতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। এ সময় র‍্যাবের সাথে যৌথ অভিযানে অংশ নেয় বিটিআরসি। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমান অবৈধ ওয়াকিটকি সেট এবং এর যন্ত্রাংশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. আব্দুল্লাহ আল সাব্বির, বয়স ৩৩, ও তার সহযোগী মো. আল মামুন, বয়স ২৭।

বিপুল পরিমাণ অবৈধ ওয়াকিটকি সেট, আধা কিলোমিটারেও যোগাযোগ সম্ভব

র‌্যাব-৩ গোয়েন্দা সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেশের প্রচলিত আইন অমান্য করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা লাভের আশায় অপরাধীদের নিকট কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট বিক্রয় করে আসছে। বিটিআরসির নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কর্তৃক কালো রঙের ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করা দন্ডনীয় অপরাধ।

২২ মে রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় র‌্যাব-৩ এর আভিযানিক দল ও বিটিআরসি যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় অবৈধভাবে ওয়াকিটকি এবং যন্ত্রাংশ মজুদ রাখার অপরাধে 'অলেফিল ট্রেড কর্পোরেশন' নামক প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। 

পর্ববর্তীতে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও গুলিস্তানের স্টেডিয়াম মার্কেট অভিযান পরিচালনা করে ১৬৮টি ওয়াকিটকি সেট উদ্ধার করা হয়। একইসাথে ওয়াকিটকি সেটের ৩৫টি ব্যাটারি, চার্জার ৩২টি, এন্টেনা ৬৩টি, মাউথ স্পিকার ৬টি এবং ৬টি ব্যাক ক্লিপ উদ্ধার করা হয়।

র‍্যাব জানায়, অলেফিল ট্রেড কর্পোরেশন ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বেতার যন্ত্র ওয়াকিটকি সেট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয় করে আসছিল।

উদ্ধারকৃত এসব ওয়াকিটকি সেটের ফ্রিকোয়েন্সি ২৪৫-২৪৬ মেগাহার্জ। এসব ওয়াকিটকি ব্যবহার করে রিপিটার ছাড়াই অর্ধ কিলোমিটার পর্যন্ত যোগাযোগ করা সম্ভব। একটি বহুতল ভবনের উপরতলা হতে নীচতলায় সহজেই যোগাযোগ করা যায়। এসব ওয়াকিটকির দাম পাঁচ হাজার হতে পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত। ব্যাটারির চার্জ ধারণের ক্ষমতা অনুযায়ী ওয়াকিটকির দামের তারতম্য হয়ে থাকে।

র‍্যাব আরও জানায়, দেশের সাধারন জনগণ ওয়াকিটকি বহনকারী একজন ব্যক্তিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওয়াকিটকি সেট ব্যবহার করে অপরাধীরা ভূয়া ডিবি, র‌্যাব সদস্য, ডিজিএফআই সদস্য, এনএসআই সদস্য এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়সহ মারাত্মক অপরাধ সংগঠিত করে আসছে।

এতে করে একদিকে যেমন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে, অন্যদিকে প্রকৃত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যখন সাদা পোশাকে দায়িত্বপালনের প্রয়োজন হয় তখন জনসাধারণ তাদেরকে ভূয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ভেবে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়।

এছাড়া ওয়াকিটকির মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ করে অপরাধ সংগঠন করলে পরবর্তীতে অপরাধী শনাক্তকরণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়। যা সার্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

র‍্যাব ৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃত মো. আব্দুল্লাহ আল সাব্বির ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক। সে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে অবৈধভাবে ওয়াকিটকি সামগ্রী নিজ হেফাজতে মজুদ রেখে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয় করে আসছিল। মো. আল মামুন দুই বছর তার সহযোগী হিসেবে কাজ করছে। এ পর্যন্ত তারা দুই হাজারের অধিক ওয়াকিটকি বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট অবৈধভাবে বিক্রয় করেছে।

লাইসেন্স ও সনদ ব্যতীত ওয়াকিটকি সেট বিক্রি করায় তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে র‍্যাব।