আপনি পড়ছেন

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে চেচেন যোদ্ধাদের ভূমিকা অনেকের নজর কেড়েছে। নব্বই দশকে স্বাধীনতার দাবিতে উপর্যুপরি দুবার রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়ায় চেচেনরা। বিপুল প্রাণক্ষয়ী সে সংঘাতের দুই যুগ পেরোতেই ইউক্রেনে রুশ ও চেচেনরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করছে। সেখানে রুশ বাহিনীর সাফল্যে বিশেষ অবদান রাখছে চেচেন সৈন্যরা।

chechen tlsdইউক্রেনে রাশিয়ার সাফল্যে বিশেষ অবদান রাখছে চেচেন সৈন্যরা

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে রাশিয়ার যে সেনা কনভয় কিয়েভের উপকন্ঠে পৌঁছে গিয়েছিল, সেটার অগ্রভাগে ছিল চেচেন স্পেশাল ফোর্সেস। যুদ্ধের প্রথম মাসে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী রোস্তভ-অন-দন জেলার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুদ্ধাহত সৈন্যদের নামের একটি তালিকা পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমের হাতে পড়ে। ওই তালিকার বেশিরভাগ সৈন্যর নামের আগে মোহাম্মদ শব্দ থাকায় ধারণা করা হয় চেচনিয়া ও দাগেস্তান প্রজাতন্ত্র থেকে তারা এসেছিল।

ইউক্রেনে এ পর্যন্ত রুশ বাহিনীর অন্যতম সাফল্য মারিওপোলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা। এর পেছনে উল্লেখযোগ্য অবদান চেচেনদের। দীর্ঘদিন ধরে স্নাপারের চোরাগুপ্তা গুলির মুখে থেকে মারিওপোলের আবাসিক এলাকাগুলোতে তল্লাশি চালিয়ে শহরটিতে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ করেছে চেচেনরা।

মারিওপোল অভিযানের সফল পরিসমাপ্তির পর চেচেন যোদ্ধাদের যে অংশটিকে পোপসানায় পাঠানো হয়েছে, তারাই রুশ বাহিনীর হয়ে সবার আগে সিভিয়ারোডোনেৎস্ক শহরে প্রবেশ করেছে। এর আগে কৌশলগত শুরুত্বপূর্ণ ক্রাসনি লিমান নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ক্ষেত্রেও অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে চেচেনরা। ক্রাসনি লিমান ও সিভিয়ারোডোনেৎস্ক শহরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার খবরটি সবার আগে সামাজিক মাধ্যমে জানান চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ। সোমবার কামিয়াশেভিখা এলাকার সিংহভাগে রুশ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবিটিও তার কাছ থেকে সবার আগে এসেছে।

এর আগে খারকিভ ও ইজিয়ুম রণাঙ্গনে চেচেন স্পেশাল ফোর্সেসের সৈন্যদের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে এসেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ম্যানিং ছাড়াও ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে চেচেন বাহিনীর আখমত স্পেশাল ব্রিগেড, মনসুর ব্রিগেডের সৈন্যদের কথোপকথনের ভিডিও দেখা গেছে।

কোনো যুদ্ধে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ছাড়াও যে জিনিসটি জয়-পরাজয় নির্ধারণে প্রভাবকের ভূমিকা রাখতে পারে সেটা হচ্ছে মনস্তাস্ত্বিক লড়াই, যার অন্যতম অনুঘটক হচ্ছে তথ্য যুদ্ধ। চেচেন যোদ্ধারা যেমন রণাঙ্গনে রক্ত-ঘাম ঝরাচ্ছেন, সেভাবে প্রচারমাধ্যমে একের পর এক বক্তব্য ও পাল্টা বক্তব্য দিয়ে ভূমিকা রাখছেন চেচেন রাজনীতিক ও কমান্ডাররা।

ইউক্রেনীয় সেনা কর্মকর্তা ও প্রশাসকদের অনেক বক্তব্যের পাল্টা জবাব রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আগে চেচেন কমান্ডারদের কাছ থেকেই আসছে। সিভিয়ারোডোনেৎস্ক শহরে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি নাকচ করে লুহানস্কের ইউক্রেনীয় গভর্নর সেরলি গাইদাই বলেছেন, শহরের ভবনগুলোতে এখনো ইউক্রেনের পতাকা উড়ছে। পাল্টা জবাবে চেচেন কমান্ডার আপ্তি আলাউদ্দিনভ বলেছেন, আমরা শহরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় এসেছি, কোনো ভবনে পতাকা ওড়ানোর জন্য নয়।

এর আগে চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ একাধিকবার ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিবৃতি-যুদ্ধে জড়িয়েছেন। রণাঙ্গনে যুদ্ধরত চেচেনদের অনুপ্রাণিত করতে তিনি নিজেও অন্তত দুবার মারিওপোল সফর করেছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনীয় বাহিনীর ফেলে যাওয়া সাঁজোয়া যানে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর ভিডিও তিনি সামজিক মাধ্যমে আপলোড করেছেন।

মনে হয়, একটি যুদ্ধে মনপ্রাণ ঢেলে দেওয়া বলতে যা বুঝায় সেটাই করছেন রমজান কাদিরভ ও তার অনুসারী চেচেন যোদ্ধারা। স্বীকৃতি হিসেবে কাদিরভকে সম্মানসূচক লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদবী দিয়েছে রুশ সরকার। চেচেন যোদ্ধাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে রুশ প্রচারমাধ্যম ও ব্লগাররা। রমজান কাদিরভ, আপ্তি আলাউদ্দিনভ, শরিফ ডালিমখানভ ও অন্যান্য চেচেন কমান্ডারের নাম শুনছে রাশিয়ার কিশোর-তরুণরা।

চেচেনদের এমন প্রাণিত অংশগ্রহণ পশ্চিমা বিশ্বের নজর এড়ায়নি। কয়েকদিন আগে ব্রিটেনের ডেইলি মেইল লিখেছে, চেচেনদের জোর করে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হচ্ছে। রমজান কাদিরভকে আগেই যুদ্ধবাজ অভিধা দিয়েছে পশ্চিমা প্রচারমাধ্যম। রমজান কাদিরভ যুদ্ধবাজ কিনা সে তর্কে না গিয়েও এটুকু বলা যায় যে তিনি যুদ্ধে পিছপা হবার মানুষ নন। নিজের ভাই ও সন্তানকে তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছেন। প্রতিনিয়ত তিনি চেচেন কমান্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এসব যোগাযোগের কথা তিনি পোস্ট ও অ্যাটাচমেন্ট হিসেবে সামাজিকমাধ্যমে প্রতি ঘন্টায় শেয়ার করছেন।

চেচেন টেলিভিশনে কিছুদিন পরপর গ্রোজনির বিমানবন্দরে সৈন্যবোঝাই উড়োজাহাজের বিদায়ের দীর্ঘ ফুটেজ ও খবর সম্প্রচার হচ্ছে। চেচনিয়া থেকে তো বটেই, রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল থেকেও সৈন্যদের চেচনিয়ায় নিয়ে প্রশিক্ষণের পর ইউক্রেনে পাঠানো হচ্ছে। চেচেন টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ফুটেজগুলোতে বিমানে আরোহনের আগে সৈন্যদের মুখে রনসঙ্গীত ও আল্লাহু আকবর স্লোগান শুনে জবরদস্তি নয়, উচ্ছাসটাই বেশি চোখে পড়ছে।

রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চের প্রভাবশালী নেতা ফাদার আন্দ্রেই কাশেভ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে চেচেনদের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেন, ‘রমজান কাদিরভের হৃদয়ের প্রতিটি তন্তু রুশ সভ্যতা ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করছে। চলমান যুদ্ধে একটি রুশ-চেচেন সামরিক ভ্রাতৃত্ব গড়ে উঠেছে। রুশ ও চেচেনরা রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে তারা পরষ্পরের কাঁধে কাঁধ রেখে লড়ছে। কখনো কখনো একটি বিস্কুট দুজন ভাগ করে খাচ্ছে।’

রাশিয়ার পক্ষে চেচেনদের উচ্ছাস এবং চেচেনদের জন্য রুশদের উচ্ছসিত প্রশংসা দুই পক্ষের সম্পর্ককে ভবিষ্যতে কোন পথে নেয়, সেটা দেখার বিষয়।

গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...

খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.