ভারতীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগ, শ্রীলঙ্কান আমলার পদত্যাগ
- Details
- by আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শ্রীলঙ্কার একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ আদানি গ্রুপকে দিতে প্রেসিডেন্ট গোতাবি রাজাপাকসেকে চাপ দিয়েছেন এ মর্মে অভিযোগ তোলার তিনদিনের মাথায় পদত্যাগ করেছেন শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান এমএম সি ফার্দিনান্দো। বিবিসি সিংহলিজ সার্ভিস এ খবর জানিয়েছে।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবি রাজাপাকসে, ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিলন ইলেকট্রিসিটি বোর্ডের (সিইবি) চেয়ারম্যান এমএম সি ফার্দিনান্দো আজ সোমবার সকালে পদত্যাগ করেছেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রী কাঞ্চন বিজয়শেখর সিইবির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নালিন্দা ইলাঙ্গাকুনকে নিয়োগ দিয়েছেন।
এর আগে শুক্রবার বিকালে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের সরকারি প্রতিষ্ঠান বিষয়ক কমিটির (কমিটি অন পাবলিক এন্টারপ্রাইজ-কোপ) এক শুনানিতে সিইবি চেয়ারম্যান এমএম সি ফার্দিনান্দো বলেন, ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট গোতাবি রাজাপাকসের নির্দেশে তিনি মান্নার ও পুন্যেরন শহরে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ ভারতের আদানি গ্রুপকে দেওয়ার পক্ষে হস্তক্ষেপ করেন।
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ আদানি গ্রুপকে দিতে চাপ দিচ্ছেন বলে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে আমাকে জানান। ঠিক কি হয়েছিল সেটা বলছি। সম্ভবত গত বছরের ২৪ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট আমাকে আলোচনার জন্য ডেকে নিয়ে বলেন ‘এইটা আদানি কোম্পানিকে দেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি এ কথাই বলছেন। তিনি আমাকে এটা দিতে চাপ দিচ্ছেন।’
ফার্দিনান্দো বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে জানাই যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দেওয়া আমার এখতিয়ারে নেই, এটা বিনিয়োগ বোর্ডের কাজ। প্রেসিডেন্ট তখন আমাকে বলেন, আপনি বিষয়টি দেখুন। এরপর আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে বলি যে বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজটি এক ধরনের জিটুজি শর্ত। এ জন্য যাতে দরপত্র আহ্বান না করা হয় এবং কাজটি আদানি গ্রুপকে দেওয়া হয়।
শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে এমএম সি ফার্দিনান্দোর এ বক্তব্যের পরপর দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়। দরপত্র ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রটির কাজ দেওয়া হলো কেনো, সে প্রশ্ন তোলেন শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলীয় নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা। পার্লামেন্টে ফার্দিনান্দোর জবানবন্দির ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করেন শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি ভারতের একাধিক রাজনীতিক। আদানি গ্রুপের পক্ষে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী এ সংক্রান্ত খবরের শিরোনাম শেয়ার করে এক টুইটে লেখেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বজনপ্রীতি পক প্রণালী অতিক্রম করে শ্রীলঙ্কা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।
কংগ্রেসের আরেক নেতা রনদ্বীপ সিং সূর্যেওয়ালা সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে লেখেন, রিলায়েন্স গ্রুপকে রাফাল যুদ্ধবিমানের কাজ দেওয়ার জন্য ফ্রান্স সরকারের সঙ্গে তদবির করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এবার আদানি গ্রুপকে কাজ পাইয়ে দিতে হস্তক্ষেপ করলেন শ্রীলঙ্কায়।
তৃণমূল কংগ্রেস ভাইস চেয়ারম্যান, বিজেপির সাবেক নেতা, ভারতের সাবেক অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জশবন্ত সিনহা বলেছেন, মোদি-আদানি-শ্রীলঙ্কা চক্র এবার স্পষ্টভাবে প্রকাশ পেয়েছে। নতুন কোনো প্রমাণ দরকার নেই। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়া ঠিক হবে না।
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবি রাজাপাকসে শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে এমএম সি ফার্দিনান্দোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কেউ চাপ প্রয়োগ করেছেন এমন কোনো কথা আমি বলিনি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার কথা আমি বলিনি।
পার্লামেন্টারি কমিটিতে চাঞ্চল্যকর এ অভিযোগ উত্থাপনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে ফার্দিনান্দো বলেন, কমিটিতে আবেগপ্রবণ হয়ে আমি অনেক কথা বলেছি। বিদ্যুৎ বিল উপস্থাপনের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। খাওয়া-দাওয়া করতে পারিনি। প্রেসিডেন্ট আমাকে এমন কথা বলেননি। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে অথবা জ্বালানি মন্ত্রী আমাকে বক্তব্য প্রত্যাহারের জন্য চাপও দেননি।
এদিকে শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলীয় নেতা প্রেমাদাসা বলেছেন, সিইবি চেয়ারম্যানকে বলতে হবে কার চাপে পড়ে তিনি বক্তব্য প্রত্যাহার করেছেন। এখনও আসলে রাজাপাকসে সরকার চলছে শ্রীলঙ্কায়। ঠিক আগের মতোই নিপীড়ন, চাপ প্রয়োগ, চুরি ও লুটপাট চলছে।
শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলগুলো এক বিবৃতিতে বলেছে, কোপ কমিটিতে সিইবি চেয়ারম্যানের বক্তব্য প্রমাণ করেছে যে ব্যর্থ শাসক রাজাপাকসে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গর্তে ঢুকেছেন এবং ইন্দো-আমেরিকান স্বার্থের দালালি করছেন।
এদিকে কোপ কমিটির সদস্য পাতালি চাম্পিকা রানাওয়াক এমপি বলেছেন, কমিটিতে দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহারের সুযোগ নেই। সিইবি চেয়ারম্যান ২৫ নভেম্বর এসআর আতিগালাকে যে চিঠি লিখেছেন সেখানেও প্রমাণ রয়েছে যে প্রেসিডেন্ট তাকে হস্তক্ষেপ করতে বলেছেন। গত বৃহষ্পতিবার ইলেকট্রিসিটি আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। আদানি গ্রুপ, সিইবি, বিনিয়োগ বোর্ড, অর্থ মন্ত্রণালয় ও টেকসই শক্তি কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পথ তৈরি করতে এটা করা হয়েছে।
কমিটির আরেক সদস্য নলিন বান্দারা বলেন, আমাদের দেশ যে বড় শক্তিগুলোর হাতের পুতুল হয়ে গেছে তার নতুন প্রমাণের দরকার নেই। খাদ্য, অর্থ, সাহায্য সবকিছুই ভারত থেকে আসছে।
আরেক সদস্য জয়ন্ত সামারাবীরা এমপি বলেন, দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে এসব বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার তিক্ত সত্যটি এবার পার্লামেন্টে প্রকাশ পেল। সিইবি চেয়ারম্যান কোনো চাপের মুখে এমন কথা বলেছেন বলে মনে হয়নি। তার কোনো অধিকার নেই এ বক্তব্য প্রত্যাহার করার।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত গুজরাটি ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপ গত সেপ্টেম্বরে কলম্বো বন্দরে নতুন একটি কনটেইনার টার্মিনাল উন্নয়ন ও পরিচালনার কাজ পায়। চুক্তি অনুযায়ী কলম্বো পোর্ট ওয়েস্ট টার্মিনালের ৫১ শতাংশ মালিকানা পায় আদানি গ্রুপ।
এরপর অক্টোবর মাসে গৌতম আদানির নেতৃত্বে আদানি গ্রুপের একদল কর্মকর্তা শ্রীলঙ্কা সফর করেন। এ সময় তারা শ্রীলঙ্কার বন্দর, জ্বালানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ নিয়ে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরবর্তীতে আদানি গ্রুপের কিছু কর্মকর্তা মান্নার শহর সফর করেন। এরই ধারাবাহিকতায় আদানি গ্রুপকে মান্নার উইন্ড পাওয়ার প্লান্টের কাজ দেওয়া হয়।
গুগল নিউজে আমাদের প্রকাশিত খবর পেতে এখানে ক্লিক করুন...
খেলাধুলা, তথ্য-প্রযুক্তি, লাইফস্টাইল, দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষণ সহ সর্বশেষ খবর
Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.
Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.