আপনি পড়ছেন

ঋণখেলাপি হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ লাওস। নিজেদের বৃহৎ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য চীনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়েছিল লাওস, ফলে চীনের ‘ঋনের ফাঁদে’ পড়তে যাচ্ছে তারা।

flag china laosচীনের ‘ঋণের ফাঁদে’ লাওস!

আর্থিক খাতের বিশেষজ্ঞগণ বলেছেন, লাওস খেলাপি হওয়ার উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, কারণ তার বড় আকারের অবকাঠামো প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে বিশাল অঙ্কের ঋণ নিয়েছে।

এর আগে, চলতি বছরের জুনের দিকে আন্তর্জাতিক রেটিং এজেন্সি মুডি’স লাওসের মুদ্রার মানকে সিএএ-৩ গ্রেডে নামিয়ে এনেছিল বলে জানিয়েছে সিঙ্গাপুর পোস্ট। মুডি’স জানিয়েছিল, লাওস বর্তমানে উচ্চ ঋণের ঝুঁকিতে রয়েছে এবং ঋণ পরিশোধের জন্য যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থাকা দরকার, তা তাদের রিজার্ভে নেই। সে সময় এক সতর্কবার্তায় তারা এটাও জানিয়েছিল যে, লাওসের ঋণখেলাপি হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

এছাড়া, এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রাথমিক ধারণা অনুযায়ী ২০২১ সালে লাওসের মোট ঋণের পরিমাণ এর দেশীয় উৎপাদনের ৮৮ শতাংশে এসে ঠেকেছে। এই ঋণের মূল্য প্রায় ১৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর প্রায় অর্ধেক পাবে চীন, কারণ চীন-লাওস রেলপথসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় এই টাকা লাওস ঋণ নিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ৪১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এর লাওস-চীন রেলপথটি বেইজিং রেলওয়ে গ্রুপ এবং আরও দুটি চীনা সরকারী মালিকানাধীন কোম্পানির অধীনে তৈরি হচ্ছে। এখানে চীনের মোট শেয়ার ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে, ৩০ শতাংশ মালিকানা লাওসের।

গত বছরের ডিসেম্বরে যখন এই রেলওয়ে নির্মাণ শুরু হয়েছিল, তখন বিদেশি বিশেষজ্ঞরা চীনের বাণিজ্যের জন্য একটি চ্যানেল হিসেবে কাজ করা ছাড়াও, বৃহৎ ব্যয়ের এই রেল প্রকল্প লাওসের কী কী কাজে আসবে সেই ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছিল।

এই কুনমিং-ভিয়েনতিয়েন রেলপথ চীনকে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, মায়ানমার, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটি সম্ভাব্য নেটওয়ার্ক। এটি দক্ষিণ চীনকে বিভিন্ন বন্দর এবং রপ্তানি বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে আরও সহযোগিতা করবে। অন্যদিকে, লাওশিয়ান নেতারা আশা করেছিলেন, এই রেলপথ তাদের বিচ্ছিন্ন অর্থনীতিকে চীন এবং ইউরোপের মতো দূরবর্তী বাজারের সাথে সংযুক্ত করে, তাদের আরও শক্তিশালী করবে।

তবে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং অন্যান্যরা তখন সতর্ক করে বলেছিল যে, এই রেললাইন লাও অর্থনীতিকে তখনই লাভবান করবে, যখন বিভিন্ন পরিবর্তনের সফল প্রয়োগের মাধ্যমে লাওস তাদের পূর্ণ অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাবে।

এদিকে, এই রেলওয়ে তৈরির জন্য যারা বাস্তুচ্যুত হয়েছিল, অর্থাৎ যাদের জমি অধিগ্রহণ করে এই রেলপথ নির্মান করা হয়েছে সেই স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, জমির জন্য তাদের খুবই কম মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। অন্যদিকে, পরিবেশবিদরা বলেছেন, এই নির্মাণটি বিভিন্ন প্রাণির আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং লাওসের বিপন্ন প্রজাতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। উল্লেখ্য, লাওস বন্যপ্রাণী পাচারের অন্যতম একটি কেন্দ্র।

লাওস-চীন রেলপথ চীনের পিছিয়ে পড়া দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলকে বিদেশি বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করলেও, লাওসের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ঋণের ভার বাড়িয়েছে। লাওস আশা করেছিল, এই রেলপথ তাদের পরিবহন খরচ কমিয়ে দেবে এবং রপ্তানি ও পর্যটনকে গতিশীল করবে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, লাওস এই প্রকল্পের জন্য ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভিয়েনতিয়েন এই ঋণ পরিশোধের জন্য বেইজিংয়ের কাছ থেকে আরও কিছু সময় চাইতে বাধ্য হতে পারে।

বিশ্বব্যাংক যদিও তাদের পূর্বাভাসে জানিয়েছে, লাওসের অর্থনীতিতে এই বছর ৩.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আসবে। কিন্তু তারা দেশটিকে সতর্ক করে দিয়ে এটাও জানিয়েছে যে, এখান থেকে যে রাজস্ব আয় হবে তা সরকারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট নয়।

সূত্র: এএনআই

Get the latest world news from our trusted sources. Our coverage spans across continents and covers politics, business, science, technology, health, and entertainment. Stay informed with breaking news, insightful analysis, and in-depth reporting on the issues that shape our world.

360-degree view of the world's latest news with our comprehensive coverage. From local stories to global events, we bring you the news you need to stay informed and engaged in today's fast-paced world.

Never miss a beat with our up-to-the-minute coverage of the world's latest news. Our team of expert journalists and analysts provides in-depth reporting and insightful commentary on the issues that matter most.