'এবার হয়তো রাখাইন রাজ্যকে মরুভূমি বানিয়ে ফেলা হবে'

গত তিন দিন ধরে রাখাইন রাজ্যে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে রাখাইন রাজ্যকে মরুভূমি বানিয়ে ফেলা হবে। আশির দশকে সরকারের অত্যাচার, নিপীড়ন দেখেছি, নব্বইয়েও দেখেছি। কিন্তু এরকম কখনও দেখিনি।' মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৭০ বছরের বৃদ্ধ রশিদ আহমদ এই কথা বলেন।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ঢেঁকিবনিয়া ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রশিদ আহমদের সংসারে ছিল ছয় ছেলে, চার মেয়ে ও স্ত্রী। নাতি-নাতনিসহ আত্মীয় স্বজনের সংখ্যা মোটেও কম না। কিন্তু সেনাবাহিনীর নির্যাতনে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। অন্যদের মতো তিনিও নিজের ভিটামাটি ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন।

রশিদ আহমদ বলেন, 'আমার ছয় ছেলের মধ্যে তিনজনকে সেনাবাহিনীর লোকজন ধরে নিয়ে গেছে। এক নাতিকে চোখের সামনে গলাকেটে হত্যা করেছে ওরা।'

তিনি বলেন, 'আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। কোনও উপায় না দেখে এক নাতির সহায়তায় এইখানে আসি। আমরা যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত হয়ে আসছি। নিজের দেশে আমাদের কোন ঠাঁই নেই, পরিচয় নেই।’

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধ রশিদ আহমদ চলাফেরা করেন কাঠের লাঠির ওপর ভর দিয়ে। সীমান্তে পৌঁছাতে তাকে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার পথ পায়ে হঁটতে হয়েছে। একটু পর পর বিশ্রাম নিয়ে নাতির সহায়তায় সীমান্তের জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত এসে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তিনি।

রশিদ আহমদের ছেলে আব্দুল জব্বার পাশেই ছিলেন। বাবার মুখে দুর্দশার কথা শুনে কান্না চেপে রাখতে পারেন না, বলেন, 'আজ বাড়িঘর ফেলে আমরা কোথায় চলেছি, জানি না। জানি না আদৌ আমরা আর বাড়িতে ফিরতে পারবো কি না!’

তিনি মিয়ানমার সরকারের প্রতি প্রশ্ন রাখেন, ‘নাগরিকত্ব দিবেন না, ভালো কথা। কিন্তু কেন এই হত্যাযজ্ঞ, কেন এই বর্বরতা? কেন এত যুবককে ধরে নিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে?’

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার ভোররাতে 'আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি' নামে একটি সংগঠনের নামে একদল সশস্ত্র ব্যক্তি রাখাইনের কয়েকটি পুলিশ চৌকিতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় ১১ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়। এর পরপরই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী পশ্চিম অঞ্চলের মংডু, বুতিডং এবং রাতেডং জেলাকে ঘিরে ফেলে কথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কয়েকশ’ নিরীহ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে।