গত মাসে এক সন্ধ্যায় নামাজ শেষে পশ্চিম মিয়ানমারের একটি গ্রামের মসজিদের ইমাম নাজির হোসাইনকে ঘিরে সমবেত হয়ছিল বেশ কয়েকজন যুবক। সেখান থেকেই আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) এক ডজনেরও বেশি বিদ্রোহী নিকটস্থ পুলিশ চৌকিতে হামলা চালায়।
হামলার পূর্বে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে তাদের নেতা নাজির হোসাইন বক্তব্য দিয়েছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সেই ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, 'একজন ইমাম হিসেবে, আমি তাদের উৎসাহ দিয়েছি যেন তারা কখনোই তাদের মিশন থেকে পিছু না হটে। যদি তারা আমৃত্যু লড়াই না করে, তাহলে সেনাবাহিনী তাদের পরিবার, নারী ও শিশুদের হত্যা করবে।'
গত ২৫ আগস্ট ওই হামলার পর থেকেই মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পোড়া-মাটি অভিযানে নামে। রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলে তাদের দেশ ত্যাগে বাধ্য করা হয়। অনেককে হত্যা করা হয়। নারীদের ধর্ষণ ও নির্মম পাশবিক নির্যাতন করা হয়।
আরসা স্থানীয়ভাবে ‘হারাকাহ আল-ইয়াকিন’ অথবা ‘ফেইথ মুভমেন্ট’ নামে পরিচিত। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের এই সংগঠন মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর গত বছরের অক্টোবরে এবং গত আগস্ট মাসে দুটি প্রাণঘাতী হামলা চালায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ অধ্যুষিত একটি দেশে রোহিঙ্গাদের নতুন প্রজন্মের এই লড়াই মিয়ানমারের দারিদ্র প্রদেশ রাখাইনের অস্থিতিশীলতা উসকে দিয়েছে।
অল্প কিছু রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের কারণে ঢালাওভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে তারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। চলতি মাসে আরসা অস্ত্র বিরতির ঘোষণা দিলেও বার্মিজ সেনাবাহিনী তা আমলে নেয়নি।
আরসা বিদ্রোহী সংগঠনের সদস্য নুর আলম বলেন, 'সেনাবাহিনী আমাদের গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ায় আমার পরিবার এখন জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের লড়াই শুধুমাত্র আমার কিংবা আমার পরিবারের সদস্যদের জন্য নয়। এটা সব রোহিঙ্গার টিকে থাকার লড়াই। যদি আমাদের সন্তানদের শান্তিপূর্ণ বসবাসের ব্যবস্থা করার জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে পারি, তবেই এই লড়াই সার্থক হবে।'
দেশটির কর্মকর্তারা বলছেন, রাখাইনের রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসী।
তবে ব্যাঙ্ককভিত্তিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা ফোর্টিফাই রাইটসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ম্যাথিউ স্মিথ জানিয়েছেন, তারা কয়েক বছর ধরে মৌলবাদের ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করছেন। জঙ্গিবাদমূলক কিছু কার্যকলাপ নিয়ে লেখা-লেখিও করেছেন। তাদের মতে, মৌলবাদ এবং চরমপন্থা মোকাবেলার সর্বোত্তম উপায় হলো রোহিঙ্গাদের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো; মিয়ানমার সেনাবাহিনী যা করছে না।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস