জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। তবে তিনি ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যকার স্বাক্ষরিত চুক্তিকে প্রাধান্য দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। চুক্তি অনুযায়ী, মিয়ানমার থেকে দেয়া বৈধ কাগজসহ বাংলাদেশে নিবন্ধিতরাই কেবল রাখাইনে ফিরতে পারবেন।
বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজ বলছে, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৫৮০০ জন। তবে এদের মধ্যে যেসব রোহিঙ্গার মিয়ানমারের নাগরিকত্বের প্রমাণ রয়েছে কেবল তারাই ফিরতে পারবেন। ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, তৎকালীন সময়ে রাখাইনে বাস করা ১০ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে নাগরিকত্ব প্রমাণের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড পেয়েছিলেন মাত্র ৭৫৪৮ জন। তাই হিসাব মতে, ৭৫৪৮ জনের বেশি রোহিঙ্গার দেশে ফেরার সুযোগ নেই।
২৫ আগস্ট নিরাপত্তা বাহিনীর চেকপোস্টে সন্ত্রাসীদের হামলার মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম অভিযান থেকে প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। জাতিসংঘের হিসাবে, আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৪ লাখ ২০ হাজার। তবে বাস্তবে সেই সংখ্যাটা আরো বেশি। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের আশ্রয় নিয়েছে।
১৯৯২ সালেও বর্তমান সময়ের মতো এক সহিংসতার ঘটনায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এরপর ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ-মিয়ানমার এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সে সময় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত রোহিঙ্গারাই কেবল দেশে ফিরতে পেরেছিলো। সেই নিয়ম অনুসরণ করলে বর্তমানে আশ্রয় নেয়া অনেক রোহিঙ্গাই মিয়ানমারে ফিরতে পারবে না। এবিসি নিউজ বলছে, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের ৯৯ শতাংশই ১৯৯৩ সালের চুক্তির আওতায় পড়ে না। বাংলাদেশে নতুন ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে নিবন্ধন করেছেন মাত্র ৫৮০০ জন।
এদিকে সু চির এসব প্রতিশ্রুতিকে 'মিথ্যা আশ্বাস বলে মনে করছেন রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের অনেকেই দেশে ফিরতে চান না। কেউ কেউ বলেন, এখানে থাকার কষ্ট হলেও কেউ ধর্ষণ বা হত্যার শিকার হচ্ছে না।
১৯৯২ সালের চুক্তিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের অধিবাসী দেখাতে কঠিন প্রমাণ দিতে হবে। এদিকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার নাগরিকত্ব না দেয়ায় তাদের নেই কোন কাগজপত্র। ২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটের জন্য হোয়াইট কার্ড দেয়া হয়। পরে ২০১৫ সালে সেটি প্রত্যাহার করা হয়। সরকারি বার্তায় জানানো হয়েছিল, কার্ডটি আপনা-আপনি বাতিল হয়ে যাবে। মিয়ানমার টাইমসের খবর অনুযায়ী, সেই হোয়াইট কার্ডও পেয়েছিল পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা। কিন্তু কার্ড বাতিল হওয়া, জ্বালাও পোড়াও এরমধ্যে কয়জন সেই কার্ড সংরক্ষণ করেছেন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সে বিষয়েও। এদিকে রাখাইনে মোট রোহিঙ্গা ১৫ লাখেরও বেশি।
এদিকে বাংলাদেশ সরকার বলছে তারা সব রোহিঙ্গার নিবন্ধন সম্পন্ন করবে। কিন্তু বাস্তবতা এতো সহজ নয়। এর আগেও আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের হিংহভাগের নিবন্ধন করা সম্ভব হয়নি। এদিকে এবিসি নিউজকে কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, তারা ইচ্ছে করেই নিবন্ধন করছেন না। তারা মনে করছেন, নিবন্ধন করলেই তাদের দেশে পাঠানো হবে।