করোনায় সবাইকে ছাড়িয়ে যেতে পারে ভারত!

মুম্বাইয়ের ধারাবি বস্তি, এশিয়া তথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় বস্তি। সম্প্রতি সেখানে করোনাভাইরাসে একজনের মৃত্যুর ঘটনায় দেশটির শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকরা এক ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন। তাদের ধারণা, সেখান থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ তীব্র আকার ধারণ করলে তা বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে অতিক্রম করে যাবে। আর এ জন্য ভারতকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

ভারতের এক রেল স্টেশনে যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছেন এক স্বেচ্ছাসেবী

সেখানে গত বুধবার ৫৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তি মারা যান। তার বিদেশ ভ্রমণের কোনো ইতিহাস ছিলো না বলে নিশ্চিত করেছেন মুম্বাইয়ের ব্রিহানমুম্বাই পৌর করপোরেশনের (বিএমসি) এক কর্মকর্তা। তার মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যদেরও করোনাভাইরাসের শনাক্তকরণ টেস্ট করানো হয়েছে। তাদের সবাইকে এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, তারা বস্তির যে পাশটিতে থাকেন সেখানে ৩০০ ঘর ও ৯০টি দোকান রয়েছে। ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বর্তমানে বস্তির ওই অংশটুকু বন্ধ করে রেখেছে পুলিশ।

বিশ্বের বৃহত্তম এই বস্তিতে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের বসবাস। প্রতি বর্গ কিলোমিটারে বাস করে প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষ।

ভারতের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসকরা আশংকা করছেন, ভারতে যে কয়টি বড় বস্তি আছে তার একটিতেও যদি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। এসব স্থানে স্বল্প জায়গায় অধিক সংখ্যক মানুষ বসবাস করে থাকে। করোনাভাইরাস ঠেকাতে সামাজিক দূরত্বের যে কথা বলা হচ্ছে তা এসব বস্তিতে বাস্তবায়ন করা অসম্ভব।

ধারাবি বস্তি, মুম্বাই

দেশটির অন্যতম শীর্ষ চিকিৎসক নরেশ ত্রিহান বলেন, সরকার দেশে ২১ দিনের লকডাউন দিয়েছে। এ সময় মানুষকে নিয়ম মেনে চলা উচিত। সরকার ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু যত কিছুই করা হোক না কেন ভাইরাসটি যখন চূড়ান্ত মাত্রায় সংক্রমণ ঘটাবে তখন কী হবে ভাবতেই ভয় লাগে। আমাদের যে পরিমাণ জনসংখ্যা তার চার ভাগের এক ভাগও প্রয়োজনীয় শয্যা, ভ্যান্টিলেটর, পিপিই নেই।

নয়াদিল্লির স্যার গঙ্গা রাম হাসপাতালে সেন্টার ফর চেস্ট সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অরবিন্দ কুমার বলেন, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক উন্নত। তাদেরই রীতিমতো যুদ্ধ করতে হচ্ছে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে। তাদের তুলনায় আমাদের তো প্রয়োজনীয় কোনো সরঞ্জামই নেই। আমরা কীভাবে মোকাবেলা করবো? এই ভাইরাস সব ভবিষ্যৎবাণীকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এই ভাইরাস একদিনে হাজার খানেক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। একবার ভাবা যায়?

তিনি আরো বলেন, ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের উপর ২১ দিনের লকডাউন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়াকে বেশ ধীরগতির করে দিয়েছে। যার কারণে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সামগ্রী এবং ভ্যান্টিলেটর সরবরাহ করার সময় পাবে প্রশাসন। কিন্তু এখানে পরিস্থিতি যদি ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো হয় তাহলে ভারত সবাইকে অতিক্রম করে যাবে। এখানে এ সংক্রমণ কোনাভাবেই আটকানো যাবে না।

ভারতে এখন পর্যন্ত তিন হাজার ৮২ জন মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। মৃত্যু হয়েছে ৮৬ জনের।