‘করোনার ওষুধ’ এনে জরিমানা গুনলেন ‘রামদেব’

বিশ্বব্যাপী চলছে করোনাভাইরাসের মহামারি। আজ পর্যন্ত এর কোনো ওষুধ বা টিকা আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অখ্যাত কোম্পানি বা চিকিৎসক কিংবা কবিরাজ এর ওষুধ আবিষ্কারের দাবি করে সংকটময় সময়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করছেন। তাদের অনেকে শাস্তির মুখোমুখিও হচ্ছেন।

‘করোনার ওষুধ’ দেখাচ্ছে রামদেব

তেমনি একজন হলেন ভারতের বিখ্যাত গুরু বাবা রামদেব। সম্প্রতি তার প্রতিষ্ঠান পতঞ্জলি করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ওষুধ আবিষ্কারের দাবি করে। এমনকি রামদেব নিজেও বড় ধরনের সংবাদ সম্মেলন ডেকে তার কথিত করোনার ওষুধের পক্ষে সাফাই গান। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ভুয়া ওষুধ বিক্রির দায়ে তার প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে আদালত।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন জানিয়েছে, সম্প্রতি পতঞ্জলি নিজেদের তৈরি ‘‌করোনিল’কে করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক দাবি করে। কিন্তু মাদ্রাজ হাইকোর্ট বলছে, মূলত লাভের জন্যই তারা এই প্রচার চালিয়েছে। আর এ জন্য বাবা রামদেবের সংস্থাটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে আদালত। শুধু ওষুধই নয়, ‘‌করোনিল’ নামটিও পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ অন্যদের নাম থেকে নিয়েছে এবং এখন থেকে তা আর ব্যবহার করতে পারবে না।

মাদ্রাজ হাইকোর্ট

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাদ্রাজ হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার তাদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, বাজারে আনার সময় ‘করোনিল’কে করোনার ওষুধ হিসাবে প্রচার করেছিল পতঞ্জলি। কিন্তু আজ পর্যন্ত এই ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক পাওয়া যায়নি। আসলে তারা অর্থ লাভের উদ্দেশ্যেই এই কাজটি করেছে। এ কারণে করোনিল বিক্রি বন্ধের যে আদেশ দেওয়া হয় আগে, তাও রয়ে গেছে।

জানা যায়, পতঞ্জলির করোনিল নামের ব্যবহারের বিরোধিতা করে চেন্নাইয়ের একটি সংস্থা আদালতে মামলা করে। মামলায় দাবি করা হয়, ১৯৯৩ সাল থেকে এই ট্রেডমার্কটি তাদের। ‘করোনিল-৯২ বি’ নামে তাদের একটি অম্ল-নিরোধক পণ্য রয়েছে, যা শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। ২০২৭ সাল পর্যন্ত এই ট্রেডমার্ক তাদের বলেও জানায় সংস্থাটি।

রায় পড়ার সময় বিচারক সিভি কার্তিকেয়ন পতঞ্জলির সমালোচনাও করে বলেন, ‌পতঞ্জলি দাবি করে, তারা নাকি ১০ হাজার কোটি টাকার মালিক। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে করোনা নিয়ে ভীতিকর পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে তারা লাভের পেছনে ছোটে। তারা যে ওষুধকে করোনাভাইরাসের ওষুধ বলে চালিয়েছে, সেই করোনিল ট্যাবলেট আসলে করোনা নিরাময় করতে পারে না। বরং এটি শুধু সর্দি, কাশি ও জ্বরের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

বিচারক আরো বলেন, করোনিল নামে আরো কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা আছে কি না- তা ট্রেড মার্ক রেজিস্ট্রি অফিস থেকে অতি সহজেই যাচাই করে নেওয়া যেত। কিন্তু তারা যদি তা যাচাই না করে থাকে অথবা যাচাই করার পরও এই নাম ব্যবহার করে থাকে, তাহলে কোনোভাবেই তা বিবেচনা করা যায় না। এর পরই বিচারপতি সিভি কার্তিকেয়ন রায় দেওয়ার সময় পতঞ্জলিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। আগামী ২১ আগস্টের মধ্যে দুটি হাসপাতালকে এই টাকা সমানভাবে ভাগ করে দেওয়া নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।