সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ বলেছেন, রাশিয়ায় ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় একজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও নিষ্ঠুরভাবে ইরাক দখল করেছেন। পরমুহূর্তে শুধরে নিয়ে তিনি বলেন, ‘না ইউক্রেন’। এভাবে মুখ ফসকে ইউক্রেনের পরিবর্তে ইরাকের কথা বলায় অনেকে বলছেন, ফ্রয়েডের মনস্তাত্বিক ব্যাখ্যা অনুযায়ী বুশ কার্যত নিজের পাপ স্বীকার করেছেন।
বুধবার রাতে ডালাসের জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রেসিডেনসিয়াল সেন্টারে বক্তৃতা করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ
বুধবার রাতে টেক্সাসের ডালাস শহরে অবস্থিত জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রেসিডেনসিয়াল সেন্টারে নির্বাচনী ব্যবস্থার শুদ্ধতা নিয়ে বক্তৃতা করছিলেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। এ সময় তিনি রাশিয়ার নির্বাচন পদ্ধতির ত্রুটি ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কড়া সমালোচনা করেন।
বুশ বলেন, ‘রাজনৈতিক বিরোধী পক্ষকে জেলে পুরে অথবা অন্যান্য উপায়ে রাশিয়ায় নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এর পরিণাম হলো ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের অনুপস্থিতি ও একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্তে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও নিষ্ঠুরভাবে ইরাক দখল, মানে ইউক্রেনের কথা বলছি।’ এরপর বিড়বিড় করে তিনি বলেন, ‘ইরাকও’। একটু থেমে আবার বলেন, ‘সেভেনটি ফাইভ’।
বুধবার রাতে ডালাসের জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রেসিডেনসিয়াল সেন্টারে বক্তৃতা করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ
বুশ যখন মাইক্রোফোনের সামনে বিড়বিড় করে ‘ইরাকও’ বলেন, তখনই অডিটরিয়ামে উপস্থিত দর্শকের একটি অংশ হেসে ওঠে। পরে নিজের বয়সের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি ‘সেভেনটি ফাইভ’ বলার পর সবাই হাসতে থাকে। বুশ এসময় নিজেও হেসে ওঠেন।
নিউজউইক জানিয়েছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের মুখ ফসকানোর এ ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ আবারও পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক দখল নিয়ে মন্তব্য করছেন। অনেকে বলছেন, ২০০৩ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে তার ভূমিকা যুদ্ধাপরাধের শামিল।
ডালাস নিউজের সাংবাদিক মাইকেল উইলিয়ামস বুশের এ মন্তব্যের একটি ক্লিপ অনলাইনে পোস্ট করার কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি ৯০ লাখের বেশি ইউজারের দৃষ্টিগোচর হয়। ভিডিওটি সংযুক্ত করে অনেকে বুশের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিচারের কথা বলছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু ইউজার বুশের এ মুখ ফসকানোর বিষয়টির মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অস্ট্রিয়ার বিখ্যাত মনোবিদ সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেছেন, অনেক সময় মানুষ নিজের অজান্তে এমন মন্তব্য করে যা তার মনের ভেতরকার পরিস্থিতি বা চিন্তাকে প্রকাশ করে দেয়। বিষয়টিকে মনোবিদরা ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ অথবা প্যারাপ্রাক্সিস বলে থাকেন।
জর্জ বুশের বুধবারের মন্তব্যকে কেউ কেউ ফ্রয়েডিয়ান স্লিপ অব দ্য সেঞ্চুরি বলে অভিহিত করেছেন। তাদের দাবি, জর্জ ডব্লিউ বুশ নিজে ইরাক দখল নিয়ে পাপবোধে ভুগছেন। অবচেতন মনে তিনি নিজের যাতনাটাই বের করে এনেছেন।
নিউইয়র্কের শিক্ষা বিষয়ক প্রকাশনা সংস্থা গ্রাভেল ইনস্টিটিউট বলেছে, প্রথমবারের মতো জর্জ বুশ সঠিক কথা বলেছেন যে তিনি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও নিষ্ঠুরভাবে ইরাক দখল করেছেন।