পারমাণবিক যুগে তুরস্ক: প্রথম বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু

পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের যুগে প্রবেশ করল তুরস্ক। দেশটির প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র ‘আক্কুইউ’-এর প্রথম ইউনিটে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রকল্পের শীর্ষ নির্বাহী আন্তন দেদুসেঙ্কো মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত একাদশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র শীর্ষ সম্মেলনের এক ফাঁকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ছবি - সংগৃহীত

প্রকল্পের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এবং রুসাটম এনার্জি ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আন্তন দেদুসেঙ্কো বলেন, ‘কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সকল কার্যক্রম নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী এগিয়ে চলেছে।’ তিনি আরও জানান, ‘চলতি বছরেই প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটিকে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য আমরা প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পাদনের পরিকল্পনা করছি।’

দেদুসেঙ্কোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আক্কুইউ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১,২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন প্রথম ইউনিটের সাধারণ নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে সমাপ্ত হয়েছে এবং বর্তমানে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চলছে। তিনি এই পর্যায়টিকে যেকোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিটের জন্য ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়’ বলে অভিহিত করেন।

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তুরস্কের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষায়ও বড় ভূমিকা রাখবে। ২০৫৩ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার যে লক্ষ্যমাত্রা তুরস্ক নির্ধারণ করেছে, তা পূরণে আক্কুইউ কেন্দ্রটি সহায়তা করবে। পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হলে এটি দেশটির কার্বন নিঃসরণ প্রায় ২০ শতাংশ কমিয়ে আনবে, যা একটি উল্লেখযোগ্য অবদান বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নতুন কেন্দ্র নির্মাণে আলোচনা অব্যাহত

এদিকে, কৃষ্ণসাগরীয় প্রদেশ সিনোপে তুরস্কের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি কর্পোরেশন রোসাটমের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আন্তন দেদুসেঙ্কো বলেন, ‘তুরস্কের অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের আলোচনা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি এবং এই বছরের মধ্যেই কারিগরি ও অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অবশ্যই তুরস্ক সরকার গ্রহণ করবে।’

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, আক্কুইউ প্রকল্পে কাজ করে তুর্কি প্রতিষ্ঠানগুলো যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তাকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে রোসাটমের বিভিন্ন প্রকল্পে তাদের যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রকল্পের ভবিষ্যৎ ও সক্ষমতা

আক্কুইউ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট চারটি চুল্লি থাকবে, যা এক বছরের ব্যবধানে পর্যায়ক্রমে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। পূর্ণ সক্ষমতায় চালু হলে এই কেন্দ্রটি একাই তুরস্কের মোট বিদ্যুতের চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করতে সক্ষম হবে। কেন্দ্রটির প্রাথমিক পরিচালন মেয়াদ ৬০ বছর ধরা হলেও পরবর্তীতে তা আরও ২০ বছর বাড়ানো যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আক্কুইউ ছাড়াও আঙ্কারা সরকার সিনোপ এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় থ্রেস অঞ্চলে আরও পারমাণবিক স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটি স্থাপিত পারমাণবিক বিদ্যুৎ সক্ষমতা ২০,০০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।