ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি মারিওপোলের আজভস্টাল স্টিল প্ল্যান্টে আত্মসমর্পণকারী ইউক্রেনীয় সেনাদের বিনিময়ে রাশিয়ার সেনাদের বিনিময় করতে প্রস্তুত আছেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, তার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, সর্বাধিক পরিমাণ সাধারণ লোক ও সেনাদের বাঁচানো। আর সে কারণেই তার এই প্রস্তাব। খবর আনাদোলু।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি
আজভস্টাল স্টিল প্ল্যান্টে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের শেষ দল আত্মসমর্পণের পর অবরুদ্ধ শহর মারিওপোল সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে দাবি করেছে রাশিয়া। ওই প্ল্যান্ট থেকে এক হাজার ৭৩০ জন সেনা রুশ বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণ করে। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের ইউক্রেনেই রুশ নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, তিনি মারিওপোল এবং এর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের সাহায্যার্থে অন্যান্য দেশের নেতাদের কাছে কয়েকশ বার অস্ত্র চেয়েছিলেন। কিন্তু মারিওপোল উদ্ধারে সামরিক উপায় অকার্যকর ছিল। ফলে এখন ইউক্রেন কূটনীতির দিকেই হাঁটছে।
আজভস্টাল স্টিল প্ল্যান্ট থেকে আত্মসমর্পণকারী ইউক্রেনীয় সেনা
এ পরিস্থিতিতে গত শনিবার জেলেনস্কি এ প্রস্তাব দেন। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে তাদেরকে সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি তুলেছেন কেউ কেউ। তারা বলেছেন, আজভস্টাল স্টিল প্ল্যান্ট থেকে আত্মসমর্পণ করা ব্যক্তিদের মৃত্যুদন্ড দেওয়া উচিত। পুতিনপন্থী চেচেন নেতা কাদিরভও তাদের সবাইকেই সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের দাবি জানান।
পশ্চিমা অস্ত্রের ওপর ভর করে জেলেনস্কি এতদিন রাশিয়ার সাথে সামরিক পথেই সমাধানের দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তার প্রত্যাশায় ভিন্নতা এসেছে। কারণ তিনি বলেছেন, কেবল কূটনীতির মাধ্যমেই যুদ্ধের অবসান ঘটতে পারে। গত শনিবার ইউক্রেনের একটি টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে, জেলেনস্কি যুদ্ধের সময় ইউক্রেনের মিত্রদের সাথে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি চেয়েছিলেন। যে চুক্তির প্রেক্ষিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলোতে রাশিয়ান তহবিল ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হবে। যাতে সেই বাজেয়াপ্ত সম্পদ থেকে রাশিয়ান কর্মকাণ্ডের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকে ক্ষতিপূরণ পেতে পারে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেনে হামলা চালাতে শুরু করে রাশিয়া। তিন মাসব্যাপী এ যুদ্ধে রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য শহর পুরোপুরি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সামরিক লোকজনের পাশাপাশি বেসামরিক লোকজনও প্রচুর হতাহত হয়েছে। দেশ ছেড়ে পালিয়েছে অন্তত ৬৩ লাখ ইউক্রেনীয়। দেশের ভেতরেই বাস্তুচ্যূত হয়েছে আরো ৭০-৮০ লাখ লোক।
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রতিরোধের মুখে রাশিয়া এ পর্যন্ত প্রায় ৩০ হাজার সেনাসদস্য হারিয়েছে। এ সময় তাদের প্রচুর সামরিক সরঞ্জামও বিনষ্ট হয়েছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দুই পক্ষের মধ্যে বেশ কয়েকবার আলোচনা অনুষ্ঠিত হলেও কোনো পক্ষই ছাড় দিতে প্রস্তুত না থাকায় আলোচনা ব্যর্থ হয়ে যায় এবং এ জন্য উভয় পক্ষই প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষকে দায়ী করছে।