ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের জাদুঘর!

জাদুঘর মানেই পুরোনোকে আঁকড়ে ধরে রাখা। প্রাচীন ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্পের স্মৃতি জমা থাকে জাদুঘরে। কিছু কিছু দেশে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অদ্ভুত ও ব্যতিক্রমী বিষয়বস্তু নিয়েও গড়া হয় জাদুঘর। এই যেমন পোড়া খাবারের জাদুঘর, পুতুলের জাদুঘর। কিন্তু ভাবুন তো, ভাঙা সম্পর্কের জাদুঘর। ভাবছেন, এ আবার কেমন কথা! হ্যাঁ, এটা এমনই এক জাদুঘর যেখানে ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের স্মৃতি সংরক্ষিত হয়।

জীবনের এই দীর্ঘ পথে চলতে গিয়ে ভালোবাসা নামক একটি সুন্দর অনুভূতির সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয়। জীবনের আর সবদিক ভালো-মন্দ যেমনই চলুক, এই একটা সময় ভালো থাকাটা আমাদের খুঁজেই নেয়। আমরা ভালোবাসি, ভালো থাকি আর ভালো থাকতে থাকতে বেহিসাবে জমিয়ে ফেলি পাহাড় সমান স্মৃতি।

কিন্তু জীবন তো সত্যিই অনেক দীর্ঘ। পথে যে কতো কী দেখার রয়েছে তা আগে থেকে কেউ বলতে পারে না। অনেকের ভালোবাসা পরিণতি পায় না। কারো কারো সম্পর্ক হয়তো পরিণতি পেয়েও ব্যর্থ হয়, ভেঙে যায় মাঝপথে। এসব ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের স্মৃতি সংরক্ষিত রাখছে মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপ অর্থাৎ ভাঙা সম্পর্কের জাদুঘর। ক্রোয়েশিয়ার জাগরেব শহরে গড়ে তোলা এই জাদুঘরে ভাঙা সম্পর্কের ছোট কোন উপহার, চিঠি থেকে শুরু করে সব ধরণের স্মৃতিবিজরিত বস্তু নিরাপদে ঘর বেঁধেছে।

দুই ক্রোয়েশিয়ান ওলিনকা ভিটিকা ও ড্রাফেন গ্রুবিটিক সর্বপ্রথম ২০০৬ সালে এই জাদুঘর তৈরির পরিকল্পনা করেন। ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের সকল স্মৃতি জমা করার কথা বলতে শুরু করেন তাদের বন্ধুদের। দিনে দিনে সংগ্রহ বাড়তে থাকে। একসময় পরিকল্পনাটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর ২০১০ সালে মিউজিয়াম অব ব্রোকেন রিলেশনশিপ একটি স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে যায়। এই অল্প সময়েই প্রতি বছর প্রায় ৪০,০০০ দর্শনার্থী আসে জাদুঘরটি দেখতে।

২০১১ সালে ভাঙা সম্পর্কের জাদুঘর ইউরোপিয়ান মিউজিয়াম অ্যাওয়ার্ডসে সবচেয়ে উদ্ভাবনী জাদুঘর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। চলতি বছরের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে এই জাদুঘরটির নতুন আরেকটি শাখা স্থাপন করা হয়।

জাগরেব শহরের একমাত্র ব্যক্তিগত মালিকানাধীন এই জাদুঘরে খুব ব্যক্তিগত আর আবেগপূর্ণ চিঠি, অর্ধেক ছেঁড়া ছবি, বিয়ের পোশাক, পুতুল, এমনকি অন্তর্বাস, এমন কিছু নেই যা ভালোবাসার জানান দেয় না। এগুলোকে সম্পর্কের ধরন আর মেয়াদের ভিত্তিতে নানা শ্রেণিতে সাজানো হয়েছে।

জাদুঘরটি প্রদর্শন করতে গেলে কিছু জিনিস দেখে আপনি হয়তো হেসে ফেলবেন, ঠিক তারপরই আপনার মনে পড়বে, সম্পর্কটা ভেঙে গেছে বলেই আজ ওটা ওখানে। একসময় ঘুরতে ঘুরতে হয়তো আপনার চোখের পানি গড়িয়ে পড়বে। জাদুঘরে সংরক্ষিত হয়েছে একজোড়া চুলের ফিতা, তার পাশে একটি কাগজে লেখা, ‘আমি এগুলো কখনো ব্যবহার করিনি। যদি করতাম, তবে হয়তো আমাদের সম্পর্ক আজও টিকে থাকতো।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

বিশ্বনেতারা কে কতো বেতন পান?

সালমান খানের চেয়ে এগিয়ে হিরো আলম!

তিন টন সোনা পেয়েও কারাগারে!

পেটের ভিতর পাওয়া গেল প্রায় ১২ হাজার পাথর!

লাউ চাষে সফল 'শিক্ষিত' তরুণ!