আপনি পড়ছেন

একমাসের ছুটিতে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার গণমাধ্যমকে দেয়া বিবৃতিকে ‘বিভ্রান্তিমূলক’ বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ ১১টি অভিযোগ তুলে ধরে এক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। আজ শনিবার রেজিস্ট্রার সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

chief justice before leave dhaka

বিবৃতিতে জানানো হয়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর মাননীয় রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ব্যতীত আপিল বিভাগের পাঁচজন বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। তন্মধ্যে বিচারপতি ইমাম আলী দেশে না থাকায় রাষ্ট্রপতির ডাকে সাড়া দিতে পারেননি। আমন্ত্রিত বাকি চারজন ছিলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। সেদিন তারা বঙ্গভবনে উপস্থিত থেকে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন বলে জানানো হয়।

বিবৃতিতে দাবি করা হয়, এই চার বিচারপতির সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ ১১টি অভিযোগ সম্বলিত সুনির্দিষ্ট দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন।

বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়, বিচারপতি ইমান আলী ঢাকায় আসার পর গত ১ অক্টোবর আপিল বিভাগের ৫ বিচারপতি বৈঠকে বসে ১১টি অভিযোগ বিস্তারিত পর্যালোচনা করেন। সেসময় তারা এসব গুরুতর অভিযোগ সম্পর্কে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। প্রধান বিচারপতি যদি সেসব অভিযোগের বিষয়ে সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন তাহলে তার সঙ্গে বসে বিচারকার্য পরিচালনা সম্ভব হবে না বলে জানানো হয়।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই দিনে অনুমতি নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রধান বিচারপতির ১৯, হেয়ার রোডের বাসায় সাক্ষাৎ করে অভিযোগের বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয় বলে দাবি জানানো হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের এই বিবৃতিতে। সেখানে দাবি করা হয়, দীর্ঘ আলোচনার পরেও প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে গ্রহণযোগ্য কোন ব্যাখ্যা বা সদুত্তর পাওয়া যায়নি। ফলে আপিল বিভাগের ওই পাঁচ বিচারপতি অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করবেন না বলে জানিয়ে দিলে এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি পদত্যাগ করবেন বলে জানান।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই ঘটনার পরদিন গত ২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি কাউকে কোন বিষয়ে অবহিত না করে রাষ্ট্রপতির কাছে এক মাসের ছুটির আবেদন করলে রাষ্ট্রপতি সেটি অনুমোদন করেন এবং বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন।

গত ১০ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের বাইরে ছুটিতে ছিলেন প্রধান বিচারপতি। ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে আসেন। পরে গত ২ অক্টোবর অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে এক মাসের ছুটি চেয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি পাঠান প্রধান বিচারপতি। কিন্তু ছুটি চাওয়ার পর থেকেই একাধিক মহল থেকে তার সাথে দেখা করার চেষ্টা করেও সেটা সম্ভব হয়নি। সেসময় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের জানান, প্রধান বিচারপতি সংবিধান মেনেই অসুস্থতার জন্য ছুটি নিয়েছেন। এ নিয়ে ভিন্নমত প্রকাশের কোন সুযোগ নেই। পরবর্তীতে প্রধান বিচারপতি ক্যান্সারে আক্রান্ত বলেও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

কিন্তু গতকাল শুক্রবার রাত ১০ টার দিকে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকার হেয়ার রোডের সরকারি বাসভবন থেকে বিমানবন্দর যাওয়ার সময় প্রধান বিচারপতি গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে একটি লিখিত বিবৃতি দিয়ে যান। সেখানে তিনি জানান, 'আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি, কিন্তু ইদানীং একটি রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী ও বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটা মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা প্রদান করে পরিবেশন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন, যা অচিরেই দূরীভূত হবে বলে আমার বিশ্বাস। সেই সাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আমি একটু শঙ্কিতও বটে। কারণ গতকাল প্রধান বিচারপতির কার্যভার পালনরত দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রবীণতম বিচারপতির উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় আইনমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন যে, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি অচিরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনে পরিবর্তন আনবেন। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কিংবা সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনো রেওয়াজ নেই। তিনি শুধুমাত্র রুটিন মাফিক দৈনন্দিন কাজ করবেন। এটিই হয়ে আসছে। প্রধান বিচারপতির প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এটি সহজেই অনুমেয় যে, সরকার উচ্চ আদালতে হস্তক্ষেপ করছে এবং এর দ্বারা বিচার বিভাগ ও সরকারের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি হবে। এটি রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না।'

আজ সুপ্রিম কোর্টের বিবৃতিতে দাবি জানানো হয় যে, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে এর আগে সুপ্রিমকোর্টের তরফ থেকে এই বিষয়ে কোন বক্তব্য-বিবৃতি দেয়া হয়নি। কিন্তু বর্তমানে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে এই বিবৃতি দেয়া হলো।

প্রসঙ্গত, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করেন। বাতিলের মূল রায়টি প্রধান বিচারপতিই লেখেন। রায়ে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ, রাজনীতি, নির্বাচন কমিশন ও সংসদ এবং সামরিক শাসন নিয়ে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ উপস্থাপন করেন।

তবে সরকারের দায়িত্বশীল অনেকেই রায়ের ওই পর্যবেক্ষণের তীব্র সমালোচনা করেন। একপর্যায়ে সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এবং বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তুলেন।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.