আপনি পড়ছেন

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে দীর্ঘ ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বঙ্গোপসাগরের মেঘনার মোহনায় বিশাল জলরাশির বুক চিরে জেগে উঠছে নতুন ভূমি। উপকূল ঘেঁষে জেগে ওঠা নতুন চরের প্রায় ২ কিলোমিটার অংশ জুড়ে এখন সবুজ ঘাসের সমারোহ। এর পরের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে জেগে উঠছে বিশাল চর।

the white feathers of the awakened wiringজেগে উঠা উড়ির চরে সবুজ সমারোহ

জোয়ারের সময় দেখা না গেলেও ভাটায় স্পষ্টভাবে এর অস্তিত্বের প্রমাণ মিলছে। যা দীর্ঘ সময় ধরে ভাঙন কবলিত দ্বীপের মানুষের মাঝে নতুন আশার আলো জাগিয়েছে।

সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার উপকূল ঘেঁষে দ্রুত জেগে উঠা চরের বিশাল অংশ জুড়ে জন্ম নেওয়া ‘উরির’ সবুজ সমারোহ দেখে এলাকার মানুষের বুকে নতুন আশা জেগেছে। মেঘনার ভাঙনের কবলে কিংবা হুমকির মুখে যারা অন্যত্র ভাড়ায় কিংবা নতুন ঘর তৈরির চিন্তা ভাবনা করছিলেন তারা অনেকেই পুনরায় ফিরে আসছেন। যারা মেঘনার করাল গ্রাসে বাপ-দাদার ভিটে মাটি হারিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছিলেন তাদের চোখে এখন আলোর ঝিলিক, হারানো ভূমি ফিরে পাবার দৃঢ় আশা।

সন্দ্বীপের দীর্ঘাপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘাপাড় ইউনিয়নটি সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় জেগে উঠেছে। এর আশে পাশে যেভাবে চর জেগে উঠছে তাতে সেদিন আর দূরে নয়, অচিরে আমরা উড়িরচরসহ কোম্পানিগঞ্জের সঙ্গে মিশে যাব।

সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাস্টার শাহজাহান বিএ বলেন, ৬০ মৌজার সন্দ্বীপ ইতোমধ্যে কয়েকটি সাগর থেকে উদ্ধার হয়েছে। সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করলে খুব দ্রুত এ এলাকায় বিশাল ভূমি জেগে উঠবে।

সূত্র জানায়, সন্দ্বীপের উত্তর পশ্চিমে ষাটের দশকে জেগে উঠা বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন উড়িরচরের দক্ষিণে জেগে উঠেছে আরও প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ চর। আবার দ্বীপের পশ্চিমে চর জাহাইজ্যা (স্বর্ণদ্বীপ), চর ক্যারিং, ঠ্যাংগার চর মিলে জেগে উঠা নতুন ভূমির পরিমাণ সন্দ্বীপের প্রায় দ্বিগুণের চেয়ে বেশি হতে পারে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।

ভূ-উপগ্রহের চিত্র বিশ্লেষণে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকরা মতামত ব্যক্ত করে বলেছেন, সন্দ্বীপের পশ্চিম উপকূলে নোয়াখালী, হাতিয়া, সন্দ্বীপজুড়ে দক্ষিণ পশ্চিম দিকে জেগে উঠা নতুন নতুন চরগুলোর আশে পাশে পলি জমে বিস্তৃত হয়ে সাগর মোহনায় সাংগু গ্যাস ফিল্ডের কাছাকাছি চলে গেছে। দিন দিন এ চরের পরিধি শুধু বাড়ছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫০ বছর ধরে মেঘনা মোহনায় ভূমি জাগরণের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এ অঞ্চলে প্রায় ছয় লাখ হেক্টর নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। কখনও প্রকৃতির আপন খেয়ালে আবার কখনও ক্রসবাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এ সকল ভূমি উদ্ধার হয়েছে।

the white feathers of the awakened wiring 1

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মেঘনা সমীক্ষা-২০০১ এর মতে প্রাকৃতিকভাবে প্রতি বছর প্রায় ২০০০ হেক্টর ভূমি এ মোহনায় জেগে উঠছে। তবে বর্তমানে এ পরিমাণ আশাতীতভাবে বেড়ে চলছে।

১৯৫৭ সালে ১৩ কিলোমিটার ও ১৯৬৫ সালে ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ক্রসবাঁধ নির্মাণ করে যথাক্রমে নোয়াখালীর রামগতিকে (বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলা) মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এবং চর জব্বারকে সোনাপুর রেলস্টেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। উভয় বাঁধ নির্মাণের ফলে প্রায় এক লাখ হেক্টর ভূমি পুনরুদ্ধার হয়। সন্দ্বীপের তিন পাশে গড়ে উঠা নতুন চর ছাড়াও এর পশ্চিমে হাতিয়া দ্বীপ সংলগ্ন নিঝুম দ্বীপ, চর কবিরা, চর কালাম, চর আলীম, চর সাগরিকা, উচখালী, নিউ ঢালচরসহ প্রায় ৫০০০ বর্গ কিলোমিটার নতুন ভূমি জেগে উঠেছে। ভূমি পুনরুদ্ধার ও চর উন্নয়ন সংস্থাগুলোর মতে, উক্ত এলাকায় প্রতি বছর গড়ে অন্তত ১৫-২০ বর্গ কিলোমিটার নতুন চরের সন্ধান মিলছে।

জানা যায়, সাগর মোহনায় জেগে উঠার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করাসহ এটিকে ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে সরকারের ভূমি পুনরুদ্ধার প্রকল্পে মেঘনা মোহনা অনুসন্ধান, চর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রজেক্ট, সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিস, ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংসহ আরও কয়েকটি সরকারি সংস্থা কাজ করছে। তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে আরও ছয়টি বিভাগ- এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, কৃষি, ভূমি বন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড।

হাতিয়া সংলগ্ন নিঝুম দ্বীপে মানুষের বসবাসের পাশাপাশি বনবিভাগ সৃষ্ট বনাঞ্চলে রয়েছে হরিণ, বানরসহ বিভিন্ন বন্য প্রজাতির অবাধ বিচরণ। সন্দ্বীপের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন উড়িরচরের পশ্চিমে সৃষ্ট নতুন চরে হেঁটে চরলক্ষ্মী যাওয়া যায়। জাহাইজ্যা বা স্বর্ণদ্বীপ থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে ভাসানচরে (ঠ্যাংগার চর) এখন চলছে রোহিঙ্গা স্থানান্তরে বিশাল কর্মযজ্ঞ।

জেগে উঠা ভূমির স্থায়িত্ব সম্পর্কে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সাইন্স অ্যান্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোসলেম উদ্দিন মুন্না বলেন, “সন্দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমের ঠেংগার চর (ন্যামস্তি চর) বয়ে আসা স্রোতধারার লোড নিচ্ছে, যার ফলে দ্বীপের পশ্চিমে ফুলে উঠা বিশাল ভূমি টিকেও যেতে পারে। তবে ভূমি উদ্ধারের এ বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোকে ফিজিক্যালি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি হার্ড ও সফট ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশল প্রয়োগ করে সংরক্ষণের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বর্তমানে কুতুবদিয়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

তিনি ভূমি সংরক্ষণের স্বার্থে বামনী, হাতিয়া ও সন্দ্বীপ চ্যানেলে স্বল্প পরিসরে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তার কথাও উল্লেখ করেন। জেগে উঠা নতুন ভূমি খুলে দিচ্ছে সম্ভাবনার স্বপ্ন দুয়ার। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, জেগে উঠা ভূমি সংরক্ষণের বিষয়ে জরুরিভাবে উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন ভূমি সংরক্ষণ করা সম্ভব হলে বদলে যাবে দেশের মানচিত্র। তাতে উদ্বাস্তু ও ভূমিহীনদের পুনর্বাসনসহ কৃষি-পশুপালন ক্ষেত্রে বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হবে। ইউএনবি।

Stay up-to-date with the latest news from Bangladesh. Our comprehensive coverage includes politics, business, sports, and culture. Get breaking news, analysis, and commentary on the issues that matter most to Bangladeshis and the international community.

Bangladesh is a country located in South Asia and is home to a diverse population of over 160 million people. It has a rich cultural heritage and a rapidly growing economy. News from Bangladesh covers a wide range of topics, including politics, economics, social issues, culture, and more. The country has made significant progress in recent years in areas such as poverty reduction, education, and healthcare. However, it still faces challenges such as corruption and environmental degradation. Bangladeshi news sources cover both local and international news to keep the public informed about the latest developments and events.