রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থ করে দিচ্ছে ভারত-চীন!

ইউক্রেনে হামলা চালানোর জেরে পশ্চিমা বিশ্ব একযোগে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উদ্দেশ্য ছিল রাশিয়ার সক্ষমতাকে কমিয়ে দেওয়া। যাতে ইউক্রেনে হামলা চালাতে গিয়ে সংকটে পড়ে মস্কো। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর সে উদ্দেশ্য নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত ও চীনের কারণে। যুদ্ধ চলাকালে তারা রাশিয়া থেকে যে পরিমাণ তেল ও গ্যাস কিনেছে, তাতে ইউরোপের অবরোধ প্রায় পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে গেছে। খবর ব্লুমবার্গ।

রাশিয়ার একটি তেলক্ষেত্র

ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে তার আগ্রাসনের পর অর্থাৎ গত তিন মাসে চীন ও ভারতের কাছে তেল-গ্যাস বিক্রি করে ২৪ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে।

কাস্টমস ডেটায় দেখা যায়, সর্বশেষ তিন মাসে চীন রাশিয়া থেকে ১৮.৯ বিলিয়ন ডলারের তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি করেছে। এ পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। অন্যদিকে ভারত একই সময়ে ৫.১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে, যা এক বছর আগের তুলনায় পাঁচ গুণেরও বেশি। দুই দেশ মিলে ২০২১ সালের একই সময়ে তুলনায় অতিরিক্ত ১৩ বিলিয়ন ডলার রাশিয়াকে দিয়েছে।

গ্যাসবাহী রাশিয়ার কার্গোশিপ

এদিকে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় সেসব দেশে তেল-গ্যাসসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রকট ঘাটতি দেখা দিয়েছে। অনেক দেশ ইতোমধ্যেই কয়েক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখে পড়েছে।

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ারের প্রধান বিশ্লেষক লরি মিলিভার্তা বলেন, মূলত রাশিয়া পাইপলাইন এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় বন্দরগুলোর মাধ্যমে যা কিছু রপ্তানি করতে পারে চীন তার সবকিছুই কিনছে। অন্যদিকে ইউরোপে বিক্রি বন্ধ হয়ে যাওয়া পর কার্গোর তেল গ্যাসের প্রধান ক্রেতা হিসেবে আবির্ভূত হয় ভারত।

লরি মিলিভার্তা বলেন, চীন ও ভারতের এ ধারা শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। কারণ একদিকে যেমন বিশ্ববাজারে জ্বালানির উচ্চ দাম, অন্যদিকে রাশিয়া একদিকে যেমন তার এসব ক্রেতাকে আকর্ষণ করার জন্য পণ্যগুলোতে বেশ আকষর্ণীয় ছাড় দিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে রাশিয়ার জ্বালানির ক্রেতারা ডলারের পরিবর্তে তাদের নিজস্ব মুদ্রায় এসবের মূল্য পরিশোধ করতে পারছে। আগামীতে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এ বাণিজ্যে চীনের চেয়ে ভারতের পদক্ষেপগুলো বেশি চোখে পড়ার মতো। কারণ আগে ভারত খুব কমই রাশিয়ার তেল কিনেছে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কম দামে পেয়ে ভারত স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি তেল কিনেছে রাশিয়ার কাছ থেকে। সেই সাথে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত রাশিয়ান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের তিনটি কার্গোও আমদানি করেছে।

চলমান অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারত-চীনের মেতা বড় দুই ক্রেতা পেয়ে রাশিয়া আপাতত নির্ভার অবস্থানে রয়েছে।